ঢাকা শনিবার, ১৪ জুন, ২০২৫

ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে যেসব দেশ

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০২৫, ০১:৪৪ পিএম
ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত তেহরানের বিভিন্ন স্থাপনা। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ‘ডজন ডজন’ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এবার পাল্টা জবাব হিসেবে ইসরায়েলে ১০০টিরও বেশি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইরান। এমন পরিস্থিতে অনেক দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রকাশ্যে বলেছে যে এই হামলা অগ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে।

এই হামলা আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে হুমকিতে ফেলেছে বলে নিন্দা জানিয়েছে ওমান, ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরব।

ওমান বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা বিপজ্জনক ও অগ্রহণযোগ্য। ওমান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অনুরোধ করেছে যে তারা দৃঢ় ও স্পষ্ট পদক্ষেপ নিয়ে এই আগ্রাসন বন্ধ করুক। ওমান মনে করে, এই হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘের নীতিমালা লঙ্ঘন করেছে।

ইন্দোনেশিয়া জানিয়েছে, ইসরায়েলের এ হামলা অস্থিরতা আরও বাড়াতে পারে ও মধ্যপ্রাচ্যে অগ্নিসংযোগ ঘটাতে পারে। দেশটি সকল পক্ষকে অনুরোধ করেছে, তারা সংযম প্রদর্শন করুক ও উত্তেজনা কমাতে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।

সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরানে হামলা দেশটির সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আন্তর্জাতিক আইন ও মান অগ্রাহ্য করে এ ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ অগ্রহণযোগ্য বলেও উল্লেখ করেছে তারা।

এদিকে, স্থিতিশীলতা ও সংযম বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে  জাতিসংঘ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান।

এর আগে, ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

এদিকে, এক বিবৃতিতে খামেনি বলেন, ভোরবেলায় ইহুদিবাদী সরকার আমাদের প্রিয় দেশের বুকে তার রক্তাক্ত ও কলুষিত হাত বিস্তার করেছে, আবাসিক এলাকায় হামলা চালিয়ে আগের থেকেও স্পষ্টভাবে তার বর্বর স্বভাব প্রকাশ করেছে। এর জন্য তাদের কঠিন শাস্তি ভোগ করতেই হবে।

তিনি  বলেন, এই হামলার মাধ্যমে ইহুদিবাদীরা নিজেদের জন্য এক তিক্ত ও যন্ত্রণাদায়ক পরিণতি ডেকে এনেছে, এবং তা তাদের ভোগ করতেই হবে।

তিনি বলেন, ‘শত্রুর এই আক্রমণে আমাদের কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা ও বিজ্ঞানী শহীদ হয়েছেন। তবে ইনশাআল্লাহ, তাদের স্থলাভিষিক্তরা দ্রুতই সেই দায়িত্ব তুলে নিয়ে কাজ শুরু করবেন। ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের সশস্ত্র বাহিনী আল্লাহর ইচ্ছায় ইসরাইলের মতো শত্রুদের কখনও ছাড় দেবে না।’

এর আগে, ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।

ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, তেহরানে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, শহরের ওপর দিয়ে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।

সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন মোহাম্মদ মেদহি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।

এছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। 

এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় 'গুরুতর আহত' হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।

বিভিন্ন ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি বলেছেন, এ হামলার জন্য 'চরম মূল্য' দিতে হবে ইসরায়েলকে।

এদিকে, ইরানে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার শঙ্কায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির

ইসরায়েল এ হামলাকে ‘রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে। ইরানের কমান্ডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় রাজ্য জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহেরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ঠেকাতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলা চালানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে। 

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রেকর্ডকৃত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে আছি।’ 

তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি অভিযানে ইরানের পারমাণবিক বোমা নির্মাণে যুক্ত বিজ্ঞানী, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এই অভিযান আরও কয়েক দিন চলবে।

একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈঠক করছে। 

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর পূর্ব প্রতিরোধমূলক হামলার পর, ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা অবধারিত।’

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইসরায়েল এককভাবে এ হামলা চালিয়েছে। কারণ তারা (ইসরায়েল) মনে করে এই হামলা তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।