ঢাকা শনিবার, ২১ জুন, ২০২৫

ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান-রাশিয়ার তুলাধোনা

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২১, ২০২৫, ০৩:০৪ পিএম
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ইরান-রাশিয়ার তুলাধোনা । ছবি- সংগৃহীত

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেই যেন বেধে গিয়েছিল আরেক যুদ্ধ। শুক্রবার (২০ জুন) জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরান ও ইসরায়েল তাদের মিত্র শক্তিদের সাথে নিয়ে পরস্পরের ওপর যুদ্ধের দায় চাপাতে থাকে। নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে যুদ্ধ বন্ধ অথবা কূটনৈতিক সমাধানের কোনো বিষয়ে একমত হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

শুক্রবার (১৩ জুন) ইরান ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অতর্কিত হামলার মধ্য দিয়ে সূচনা হয় যুদ্ধের। ইসরায়েল লক্ষ্য করে হামলা চালায় ইরানের সামরিক প্রধান, পারমাণবিক স্থাপনা ও কেন্দ্রের বিজ্ঞানিদের। পাল্টা জবাবে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় তেল আবিবসহ বিভিন্ন জায়গায়। 

ইসরায়েলের অভিযোগ তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে যা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই আত্মরক্ষায় ইসরায়েল ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। জবাবে ইরানও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায়। দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা এখনো চলছে।

বৈঠকে দেওয়া বক্তৃতায় জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির সাঈদ ইরাভানি ইসরায়েল ও এর মিত্রদের তেহরানে আগ্রাসনের সমর্থনে ‘অতর্কিত হামলা ও অস্তিত্বের হুমকি’র (ইরানের তরফে) যুক্তিকে ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের অজুহাত’ বলে বর্ণনা করেন।

আমির সাঈদ ইসরায়েলকে এমন একটি দেশ হিসেবে আখ্যা দেন, যারা নিরপরাধ মানুষ হত্যা করে ও অন্যান্য দেশের ভৌগোলিক অখণ্ডতা লঙ্ঘন করে। বক্তব্যের সময় ইসরায়েলি হামলায় নিহত শিশুদের ছবি তুলে ধরেন তিনি।

জবাবে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানন বলেন, ইরান ‘ভুক্তভোগী সেজে নাটক করছে’। তিনি ইরাভানিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা কী করে আন্তর্জাতিক সমাজের কাছে এমন একটি পরিকল্পনার পরিণতি থেকে রক্ষা চাওয়ার সাহস করেন, যে পরিকল্পনা গণহত্যার জন্য তৈরি?’

এদিকে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে গঠনমূলক আলোচনা সম্ভব নয়।

যুদ্ধ বন্ধ ও কূটনৈতিক সমাধানের পরিবর্তে দোষারোপের বিতর্কে পরিণত হয় বৈঠকটি।

জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন দূত ডরোথি ক্যামিল শে বলেন, ইরানই মধ্যপ্রাচ্যে ‘অস্থিরতা ও সন্ত্রাসের প্রধান উৎস’ এবং তার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা আছে। যদিও তিনি মুখ ফসকে ইরানের পরিবর্তে ইসরায়েল বলে ফেলেছিলেন, তবে দ্রুত নিজেকে সংশোধন করে ইরানের ওপর যুদ্ধের দায় চাপিয়ে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থন ব্যক্ত করেন তিনি।

তবে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের প্রতিনিধিরা কিছুটা সংযত ভঙ্গিতে উত্তেজনা প্রশমনের ওপর জোর দেন।

রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া পাল্টা বক্তব্যে বলেন, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা আছে—এ দাবি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির ‘ভিত্তিহীন গুজব’। তিনি পশ্চিমা শক্তিগুলোকে ইসরায়েলি আগ্রাসনের ‘সহযোগী’ ও ‘ভয়াবহ অস্ত্রের মতোই বিপজ্জনক’ বলে আখ্যা দেন।

‘আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)’ ১২ জুন জানায়, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধে সই হওয়া আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দশকে এই প্রথম সংস্থাটি ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রস্তাব পাস করে।

জাতিসংঘের সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান পারমাণবিক বোমা তৈরির উপযোগীমাত্রায় (৪০৯ কেজি) ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে। এমন মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ দিয়ে দশটি পারমাণবিক ওয়ারহ্যাড তৈরি সম্ভব।  কিন্তু বর্তমানে এমন কোনো অস্ত্র ইরানের আছে কি না সে ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি সংস্থাটি।

রাশিয়ার প্রতিনিধিদল আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএর) এ প্রতিবেদনকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ও ‘ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেন।

অপরদিকে, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনের প্রতিনিধি ফু কং নরম সুরে ইসরায়েলের হামলার নিন্দা ও যুদ্ধবিরতির অঅহ্বান জানান। তবে ইসরায়েলের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেনি চীন। 

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, ইরান চাইলে এক বছরের মধ্যে পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে পারে। তবে বর্তমানে কোনো পারমাণবিক বোমা আছে কি না এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চিত তথ্য দিতে পারেনি সংস্থাটি।

এ বিষয়ে গতকাল প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাহলে আমার গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ভুল করছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বক্তব্যে বলেন, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না এমন দাবি করলেও তাতে আস্থা পাচ্ছেন না তিনি।

গুতেরেস যুদ্ধ এড়িয়ে শান্তির সুযোগ কাজে লাগাতে ইসরায়েল ও ইরানকে সতর্ক করে বলেন, ‘আমরা শুধু সংকটের দিকে এগোচ্ছি না, আমরা সেদিকে ছুটে চলেছি।’

ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ইরানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২৪ জন নিহত ও আড়াই হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। অপরদিকে গতকাল ইসরায়েলের পক্ষ থেকে ড্যানন জানান, ইরানের হামলায় অন্তত ২৯ জন নিহত ও প্রায় ৯০০ জন আহত হয়েছেন। দুই দেশই জানিয়েছে, হতাহত মানুষের বেশির ভাগই সাধারণ নাগরিক।