রবিবার, ২২ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৫, ১২:২২ পিএম

যেভাবে মার্কিন হামলার জবাব দিতে পারে ইরান

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: জুন ২২, ২০২৫, ১২:২২ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি- সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। ছবি- সংগৃহীত

ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যা মধ্যপ্রাচ্যের চলমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান এবং সৌদি আরবে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সতর্ক অবস্থায় থাকতে নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

যুক্তরাষ্ট্রের এ হামলার পর ওয়াশিংটনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। যার ফলে মার্কিন হামলার পর এবার সবার চোখ ইরানের দিকে। এই হামলার পাল্টা জবাব কীভাবে দেবেন, সেটা দেখার অপেক্ষায় সবাই।

মিসাইল ব্যবহার

ইরানের সর্বাধুনিক ও ভয়ংকর অস্ত্র হলো ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইসরায়েলের হামলার জবাবে যেভাবে শত শত মিসাইল ছুড়েছিল, সেই পদ্ধতি এবারও কাজে লাগাবে দেশটি।

নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে গোপন সূত্রের উদ্ধৃতিতে জানানো হয়েছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোর ওপর ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রস্তুতি শনাক্ত করেছেন মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

মধ্যপ্রাচ্য ও আশপাশের অঞ্চলে অন্তত ২০টি ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। এই ঘাঁটিগুলোর বেশির ভাগই ইরানের ‘সিজিল-২’ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার রেঞ্জের মধ্যেই পড়ে। ইরান শুরুতে ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর তেহরানের নজর পড়তে পারে আরব দেশগুলোতে থাকা মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে।

ইরানের সক্ষমতা

বিশ্বের অন্যতম উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা থাকলেও ব্যালিস্টিক মিসাইল প্রতিরোধ কতটা কঠিন হতে পারে সেটা ইসরায়েলে ইরানের হামলা থেকে দেখা গেছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলো বায়ুমণ্ডলের দিকে উঠে সুপারসনিক গতিতে মাটির দিকে ধেয়ে আসে, যা থামানো অত্যন্ত কঠিন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর কাছে অন্তত দুটি কার্যকর ও পরীক্ষিত ভূমি থেকে আকাশে উৎক্ষেপণযোগ্য প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে—প্যাট্রিয়ট এবং টার্মিনাল হাই অলটিচিউড এরিয়া ডিফেন্স (টিএইচএএডি)। গত কয়েক মাস ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে এশিয়া থেকে মধ্যপ্রাচ্যে সরিয়ে আনছে। এর পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও ইরান এবং তাদের মিত্র ইসলামপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা।

ইরাকের মার্কিন ঘাঁটি এরবিল ও আইন আল-আসাদ বিমানঘাঁটিতে ইতিমধ্যে প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি মোতায়েন রয়েছে। এগুলো আগেও জঙ্গিদের হামলা প্রতিহত করতে ব্যবহৃত হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন সামরিক কমান্ডাররা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্যাট্রিয়ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে এনে বাহরাইনের আইসা ও আল উদেইদ বিমানঘাঁটিতে স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

ইরানের মিত্রদের ভূমিকা

ইরানের আঞ্চলিক প্রক্সি বা মিত্র সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই বরাবরই তাদের প্রথম প্রতিরক্ষা স্তর হিসেবে বিবেচনা করা হতো। হিজবুল্লাহ ও হামাস মূলত ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে ব্যস্ত রেখে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের ওপর সরাসরি হামলার সুযোগ যেন না পায়, সে ব্যবস্থাই করত। অন্যদিকে ইয়েমেনভিত্তিক হুতি বিদ্রোহীরা পশ্চিমা বিশ্বকে বিভ্রান্ত করতে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা চালাত।

ইরাকেও ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠী ড্রোন হামলা চালিয়ে মার্কিন ঘাঁটিতে প্রাণঘাতী হামলা করেছিল। ইরাকে ইরানপন্থি গোষ্ঠী কাতাইব হিজবুল্লাহ হয়তো তাদের আগের হুমকি বাস্তবায়ন করতে পারে, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইরানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ ও ঘাঁটিগুলোর বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য স্বস্তির বিষয় হলো, গত এক বছরে ইসরায়েল হামাস ও হিজবুল্লাহসহ এসব প্রক্সি গোষ্ঠীর বড় অংশ নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক থিংকট্যাংক সিলভারাডো পলিসি অ্যাক্সেলারেটরের চেয়ারম্যান দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, এখন ইসরায়েলের ওপর চালানো প্রায় সব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলাই সরাসরি ইরান থেকে আসছে, যেটা নিয়ে ভাবা জরুরি।

হরমুজ প্রণালি

আরব উপদ্বীপ ও পারস্য উপসাগরের পশ্চিম প্রান্তের মাঝামাঝি অবস্থিত হরমুজ প্রণালি—যা পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে তেহরানের অন্যতম শক্তিশালী কৌশলগত হাতিয়ার। এই জলপথ দিয়েই বিশ্বের এক-পঞ্চমাংশ পেট্রোলিয়াম পাড়ি দেয়। ইরান চাইলে মাইন বসিয়ে, মোবাইল ক্ষেপণাস্ত্র লাঞ্চার বসিয়ে ও সামুদ্রিক ড্রোন ব্যবহার করে তবে ১৯৮০-এর দশকে ‘ট্যাংকার যুদ্ধের’ সময় ইরান একই কৌশল নিয়েছিল, যদিও সফল হয়নি। ব্রিটিশ ও পরে মার্কিন নৌবাহিনী বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদে পৌঁছে দেয়।

প্রণালি বন্ধের আশঙ্কা থেকেই মার্কিন যুদ্ধবিমান বহনকারী জাহাজ ইউএসএস নিমিটজ হরমুজ প্রণালিতে আগে থেকেই মোতায়েন করা হয়েছে। এই আশঙ্কায় মার্কিন কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, কারণ এটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলোকে পারস্য উপসাগরেই আটকে ফেলবে। সাবেক রয়্যাল নেভি কর্মকর্তা টম শার্প বলেন, ‘মাইন অপসারণ মার্কিন নৌবাহিনীর দুর্বলতা।’

অবশ্য হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে জড়াতে বাধ্য হতে পারে। এর আগে লোহিত সাগরে পশ্চিমা জাহাজে হুতিরা হামলা চালালে ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ ব্যয় করে হামলা চালিয়েছেন।

তেলক্ষেত্রে হামলা

ইরান যদি মনে করে তারা এক অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি অথবা তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির সম্পূর্ণ ধ্বংস অনিবার্য—তাহলে তারা বিশ্লেষকদের ভাষায় ‘শেষ বড় চাল’ চালাতে পারে, যেটি হলো উপসাগরীয় অঞ্চলের জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা।

ইরান এর একটি নমুনা দেখিয়েছে ২০১৯ সালে। সে সময় সৌদি আরবের আবকায়েক ও খুরাইস তেল স্থাপনায় ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীরা এই হামলার দায় স্বীকার করলেও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে। এই হামলায় সৌদি আরবের অর্ধেক তেল উৎপাদন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়।

আবকায়েক ও জ্বালানি অবকাঠামোতে সম্ভাব্য হামলা

আবকায়েক প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত করে—যা সৌদি আরবের মোট উৎপাদন সক্ষমতার দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। ইরান যদি তাদের হুমকি বাস্তবায়নে যায়, তবে এই স্থাপনাটি প্রধান লক্ষ্যবস্তু হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নিশ্চিত।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থিত তেল ও এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) টার্মিনাল এবং ওই এলাকার জলসীমা দিয়ে যাওয়া তেলবাহী ট্যাংকার হুমকির মুখে পড়তে পারে।

২০১৯ সালের মে মাসে ফুজাইরাহ উপকূলে লিম্পেট মাইন বিস্ফোরণে তিনটি ট্যাংকার ও একটি জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এই হামলার দায় কেউ স্বীকার না করলেও, পশ্চিমা কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন ইরানি ‘ফ্রগম্যান’ (জলসেনারা) এটির পেছনে জড়িত ছিল।

তেল, হরমুজ প্রণালি ও ইরানের ‘শেষ অস্ত্র’

বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অত্যন্ত সচেতন। আর হরমুজ প্রণালি দিয়েই বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পেট্রোলিয়ামের এক-পঞ্চমাংশ আসে। এই জলপথ কোনো কারণে বন্ধ হলে জাহাজ চলাচল পুনরুদ্ধারে সামরিক হামলার অনুমোদন দেবেন ট্রাম্প।

এ ছাড়া মিত্র দেশ চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তুলতে পারে ইরানের এই সিদ্ধান্ত। ইরানের থেকে সবচেয়ে বেশি তেল নিয়ে থাকে চীন আর এই হরমুজ প্রণালি ব্যবহার করেই দেশটিতে তেল পৌঁছায়। এ অবস্থায় প্রণালিতে জাহাজ চলাচল বন্ধ করা চীনকেও ক্ষুব্ধ করে তোলা ছাড়া কিছু নয়।

এতকিছুর পরও ইরান জিপিএস নেভিগেশনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রণালিতে চলাচলরত জাহাজগুলোর গতিপথে গোলমাল করেছে। একাধিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই ধরনের জিপিএস ব্যাঘাতের কারণে দুটি ট্যাংকার একে অপরকে ধাক্কা দিয়ে আগুন ধরে যায়। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এই জিপিএস সংকেত বিঘ্ন ঘটানো হচ্ছিল ইরানের বান্দার আব্বাস বন্দরের কাছ থেকে, যা প্রণালির ঠিক উত্তরে অবস্থিত।

তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইরান লড়াইয়ের অংশ হিসেবে এই পথ বেছে নিবে না কারণ এতে আরব দেশগুলো সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং তেহরান আরও বেশি আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়বে।

সাইবার হামলা

ডেটা ধ্বংস করা, ফিশিং (ভুয়া ই-মেইল ও ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি) এবং তথ্য প্রচার ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধমূলক অপারেশনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বহুবার সাইবার হামলা চালিয়েছে ইরান ও দেশটির আঞ্চলিক প্রক্সিরা। তারা এই দায় স্বীকারও করেছে।

এ ধরনের সাইবার হুমকি বেসামরিক ও সামরিক—দুই খাতের জন্যই বিপজ্জনক। যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলার জন্য দায়ী হ্যাকারদের সন্ধানে তথ্য আহ্বান করেছে। 

তবে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বর্তমান সংকটে ইরান এই অস্ত্রটি কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। দিমিত্রি আলপেরোভিচ বলেন, ‘ইরানি সাইবার শক্তি এখন শুধু খেলনার মতো। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এটি বড় অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সম্ভাবনা কম।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!