ঢাকা বুধবার, ২৫ জুন, ২০২৫

যুদ্ধবিরতিতে নীরব খামেনি, দেননি স্বীকৃতি

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। ছবি- সংগৃহীত

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের তরফ থেকে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরে তিনি জানান, উভয় পক্ষই সর্বাত্মক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।

তবে এ ঘোষণা আসার পরও সংঘাত পুরোপুরি থামেনি। বরং দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলা ও নেতাদের পরস্পরবিরোধী মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, মাঠের পরিস্থিতি এখনো অস্থির।

ইরানের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি যুদ্ধবিরতির কথা পরোক্ষভাবে স্বীকার করলেও সরাসরি কোনো চুক্তি স্বাক্ষরের কথা অস্বীকার করেছেন।

তাদের ভাষায়, ইসরায়েল যদি হামলা বন্ধ রাখে, তাহলে পাল্টা হামলা চালানোর প্রয়োজন নেই। এই অবস্থান থেকে ইঙ্গিত মেলে, যুদ্ধবিরতি কেবল একপক্ষীয় প্রতিশ্রুতি নয়, বরং বাস্তব পরিস্থিতির ওপর নির্ভরশীল।

সবচেয়ে বড় অনুপস্থিতি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কণ্ঠ। ইরানে তার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু দেশের এই ক্রান্তিকালে এখন অবধি তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য মন্তব্য করেননি।

গত ১৮ জুন রেকর্ডকৃত একটি ভিডিও বার্তা ছাড়া সম্প্রতি তার কোনো বক্তব্য প্রচার হয়নি। সেখানেও তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

খবরে আরও এসেছে, খামেনি বর্তমানে তেহরানের নিজ বাসভবনে না থেকে একটি নিরাপদ বাংকারে অবস্থান করছেন। যদিও সরকারিভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়নি, তবে তার নীরবতা ঘিরে জল্পনা-কল্পনা বাড়ছে।

প্রশ্ন উঠেছে, আদতে তিনি বেঁচে আছেন কি না। কারণ ইরানে হামলার আগে একাধিকবার খামেনিকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল ইসরায়েল। খোদ ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।

তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের একের পর এক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান স্পষ্ট হলেও ইরানের প্রতিক্রিয়া রয়ে গেছে দ্ব্যর্থপূর্ণ। ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা যুক্তরাষ্ট্রের ‘সম্মানের বিষয়’।

আবার একই সঙ্গে তিনি যুদ্ধ বন্ধের ডাক দিয়েছেন। তার ভাষায়, ‘যুদ্ধবিরতি এখন কার্যকর হয়েছে। কেউ দয়া করে এটি লঙ্ঘন করবেন না।’

কিন্তু ঘোষণার পরপরই ফের উত্তেজনা ছড়ায়। ইসরায়েল ইরানের একজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে তার পরিবারসহ হত্যা করে। জবাবে ইরান ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলের টেক শহর বিরশেবা লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যাতে চারজন নিহত হন।

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও ইতিহাস বলে, এমন বিরতি অনেক সময়ই ক্ষণস্থায়ী হয়। বিশেষ করে ইসরায়েলের অতীত রেকর্ডে দেখা গেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি থাকার পরও বারবার তারা হামলা চালিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে নতুন করে অনিশ্চয়তা আর উদ্বেগ ফিরে এসেছে।

এই প্রেক্ষাপটে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বক্তব্য সামনে না আসা এবং সংঘর্ষ চলমান থাকা, দুটি বিষয়ই যুদ্ধবিরতির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তৈরি করছে। বাস্তবতা হলো, কোনো লিখিত চুক্তি ছাড়াই ঘোষিত যুদ্ধবিরতি আজও স্পষ্ট ও স্থায়ী হতে পারেনি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি