ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি প্রতিহত করতে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে হুমকি, নিষেধাজ্ঞা, হামলা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে মার্কিনিদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক চুক্তি ও মার্কিন গোয়েন্দা নজরদারি এড়িয়ে ইরান কি পারবে পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর এড়িয়ে ইরানের পক্ষে গোপনে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা অত্যন্ত কঠিন, তবে অসম্ভব কিছু নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নজরদারি কতটা শক্তিশালী?
উন্নত স্যাটেলাইট নজরদারি: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদিন স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোর ওপর নজর রাখে। যা এড়িয়ে গোপনে কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন।
সিগনাল ইন্টেলিজেন্স: ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও মার্কিন এনএসএ দুই পক্ষই ইরানের যোগাযোগ, ডেটা ট্রান্সমিশন এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার ওপর গোয়েন্দা নজর রাখে।
ইন্টারন্যাশনাল এটমিক এনার্জি এজেন্সি: ইরান পরমাণু চুক্তির আওতায় কিছু পরিদর্শনে সম্মত হয়েছিল। যদিও এখন সীমিত অংশে প্রবেশাধিকার দিচ্ছে, তবুও সন্দেহজনক কিছু ঘটলে তা শনাক্ত করা সম্ভব।
ইরান পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যেতে পারবে?
গোপন ফ্যাসিলিটি: ইরান অতীতে ফোর্দো ও নাতাঞ্জ নামে দুটি গোপন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র তৈরি করেছিল, যেগুলো অনেক দিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মহলের অজানা ছিল। এ থেকে বোঝা যায়—পুরোপুরি নজর এড়িয়ে থাকা সম্ভব না হলেও প্রাথমিক ধাপগুলো গোপনে সম্পন্ন করা যায়।
টেকনিক্যাল সক্ষমতা: ইরান বর্তমানে ৬০% পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে। কিন্তু অস্ত্র তৈরি করতে লাগে প্রায় ৯০%। তবে ইরানের কাছে উচ্চ গতির আইআর-৬ ও আইআর-৮ ধরনের সেন্ট্রিফিউজ রয়েছে, যা দিয়ে ইউরেনিয়াম দ্রুত সমৃদ্ধকরণ সম্ভব।
ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সহায়তা: উত্তর কোরিয়ার মতো দেশ ইরানকে গোপনে প্রযুক্তি সহায়তা দিতে পারে। অতীতে পাকিস্তানি বিজ্ঞানী এ. কিউ. খান গোপনে নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলেন। এ ধরনের সহযোগিতা ইরানের ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় ইসরায়েল, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, এমনকি রাশিয়া-চীনও নজর রাখে। ইসরায়েল বহুবার ইরানের পরমাণু প্রকল্পে সাইবার হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানীদের হত্যা করেছে ইসরায়েল। ফলে গোপনে এগোনো মানেই জীবন-মরণ ঝুঁকি ও প্রযুক্তিগত ক্ষতির শঙ্কা। এ ছাড়া পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে শুধু ইউরেনিয়াম নয়—নিউট্রন ইনিশিয়েটর, বিস্ফোরক ট্রিগার সিস্টেম এবং ডেলিভারি মিসাইল প্ল্যাটফর্ম দরকার। সবকিছু গোপনে রাখা প্রায় অসম্ভব।