বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম

যুক্তরাজ্য কেন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চায়

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: জুলাই ৩০, ২০২৫, ০৯:৪৪ পিএম

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি-সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি-সংগৃহীত

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ বন্ধ করে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েল যদি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না নেয় তাহলে আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে, রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো।  

কী বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার?

স্টারমার বলেন, ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে নীতিগত কোনো সমতা নেই। হামাসের কাছে আমাদের দাবি আগের মতোই আছে। তাদের ইসরায়েলি সব জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধবিরতিতে রাজি, গাজা শাসনে আর অংশ না নেওয়া এবং নিজেদের অস্ত্র ত্যাগ করতে হবে। এ সময় ইসরায়েল নির্দিষ্ট কিছু শর্ত পূরণ না করলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেবে ব্রিটেন।শর্ত গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মাঝে যুদ্ধবিরতি

২. গাজা উপত্যকায় আরও বেশি ত্রাণ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি

৩. ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরকে নতুন করে দখল কিংবা সংযুক্ত না করার স্পষ্ট ঘোষণা

৪. দীর্ঘমেয়াদী শান্তি প্রক্রিয়ায় অঙ্গীকার, যার মাধ্যমে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের বাস্তবায়ন হবে। অর্থাৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।

কেন এই সিদ্ধান্ত নিলেন স্টারমার?

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির পরিবর্তে গাজায় ক্ষতিগ্রস্ত বেসামরিক নাগরিকদের অবস্থার উন্নয়নই ব্রিটেনের অগ্রাধিকার বলে জানিয়েছিল দেশটির সরকার। কিন্তু গাজায় দুর্ভিক্ষ ও ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে স্টারমার দিন দিন সরব হয়ে উঠছেন। পাশাপাশি নিজ দল লেবার পার্টির আইনপ্রণেতাদের দিক থেকেও তার ওপর চাপ বাড়ছিল। সবশেষ দেশটির ৯ দলের ২২১ এমপি ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিতে চিঠি দেয় স্টারমারকে।

এই উদ্যোগের ফলে ইসরায়েলের আচরণে বাস্তব প্রভাব পড়বে বলে প্রত্যাশা করছে ব্রিটেন। দেশটি বলেছে, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ঘোষণায় গাজায় অন্তত ত্রাণ সরবরাহ বাড়বে এবং দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক শান্তি আলোচনায় গতি আসবে।

অতীতেও ব্রিটেনের বিভিন্ন সরকার দীর্ঘদিন ধরে বলেছে, ‌কেবল সঠিক সময় ও প্রেক্ষাপটেই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হবে, যাতে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে এগিয়ে নেওয়া যায়।

স্বীকৃতির পরিণাম কী হতে পারে?

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জুলি নরম্যান বলেছেন, ব্রিটেনের এই উদ্যোগ প্রতীকী হলেও কূটনৈতিক ও নৈতিকভাবে এর প্রভাব অনেক। আর ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন সরকারের এক কর্মকর্তার মতে, সবচেয়ে তাৎক্ষণিক পরিবর্তন হতে পারে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নীত করা। বর্তমানে ব্রিটেনে ফিলিস্তিনের একটি মিশন রয়েছে। তবে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলে সেটি পূর্ণাঙ্গ দূতাবাসে রূপ নিতে পারে।

তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ব্রিটেন পশ্চিম তীরে একটি দূতাবাস স্থাপন করতে পারে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতের ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের জন্য পশ্চিম তীর, গাজা ও পূর্ব জেরুজালেমকে নিজেদের ভূখণ্ড বলে দাবি করে। বর্তমানে ইসরায়েলি সামরিক দখলদারিত্বের আওতায় থাকা পশ্চিম তীরে পশ্চিমা বিশ্ব-সমর্থিত ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ সীমিতভাবে শাসনকাজ পরিচালনা করছে।

জেরুজালেমে নিযুক্ত ব্রিটেনের সাবেক কনসাল জেনারেল ভিনসেন্ট ফিন বলেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে ইসরায়েলের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্ক নতুন করে পর্যালোচনার দরকার হতে পারে। এর ফলে ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলের বসতি থেকে আমদানি করা পণ্যে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে ব্রিটেন।

তিনি বলেন, যদিও ওই পণ্যের পরিমাণ একেবারে সামান্য। তারপরও ব্রিটেন যদি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে সেটি ইসরায়েলের অর্থনীতিতে প্রতীকী প্রভাব ফেলবে। তবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতির ফলে ব্রিটেন-ইসরায়েলের দ্বিপাক্ষিক গোয়েন্দা সহযোগিতা ও প্রতিরক্ষা-সংক্রান্ত সরবরাহ ব্যবস্থা কতটা প্রভাবিত হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েল। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ব্রিটেনের এই সিদ্ধান্ত হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল। এর মাধ্যমে ২০২৩ সালে হামাসের সীমান্ত হামলার শিকারদের প্রতি অবিচার করা হবে।

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ব্রিটিশ সিদ্ধান্ত নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে। এই বিষয়ে বুধবার এলবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনের পরিবহণমন্ত্রী হেইডি আলেকজান্ডার বলেছেন, এটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‌‌‘এটি হামাসকে পুরস্কৃত করার ব্যাপার নয়। হামাস জঘন্য সন্ত্রাসী সংগঠন। এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনি জনগণের, বিশেষ করে গাজার শিশুদের জন্য—যারা অভুক্ত অবস্থায় মৃত্যুর মুখে পড়ছে।’

যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্য সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে কেমন?

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। গত সোমবার স্কটল্যান্ডে সাক্ষাৎও করেছেন এই দুই নেতা। যদিও ওই সাক্ষাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে তাদের মাঝে কোনো আলোচনা হয়নি।

ট্রাম্প প্রাথমিকভাবে ফিলিস্তিনকে ব্রিটেনের স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কোনো কিছু মনে করছেন না বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পথে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে তা হামাসকে পুরস্কৃত করার শামিল হবে।

 ফিলিস্তিনকে আর কারা স্বীকৃতি দিয়েছে?

স্টারমারের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁখো কয়েক দিন আগেই তার দেশের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন।

এর আগে ২০২৩ সালে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেন। তবে এই স্বীকৃতিতে ইসরায়েলের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের অধিকারে কোনো আঘাত করবে না বলেও পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় তারা।

জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য দেশের মধ্যে প্রায় ১৪৪টিই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এসব দেশের তালিকার বেশিরভাগই গ্লোবাল সাউথ ভুক্ত। এর পাশাপাশি আছে রাশিয়া, চীন ও ভারতও।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৭ সদস্যের মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটি দেশসহ সুইডেন, সাইপ্রাস ও পূর্ব ইউরোপের সাবেক সমাজতান্ত্রিক কয়েকটি রাষ্ট্র ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০১২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে একটি প্রস্তাব পাস হয়। এই প্রস্তাবে সংস্থাটিতে ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক থেকে ‌‘অ-সদস্য রাষ্ট্রের’ মর্যাদা দেওয়া হয়।

এরপর স্বীকৃতি দিতে পারে কারা?

স্টারমারের সিদ্ধান্ত জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও জাপানের মতো বড় দেশগুলোর ওপর ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে চাপ বাড়ছে। গত শুক্রবার (২৫ জুলাই) জার্মানি বলেছে, তারা শিগগিরই ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে না। অন্যদিকে ইতালি বলেছে, ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলকে একযোগে স্বীকৃতি দেওয়ার পথেই এগোতে চায় রোম।

রূপালী বাংলাদেশ

Shera Lather
Link copied!