সিরিয়ার নতুন সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি বৃহস্পতিবার মস্কো সফরে জানিয়েছেন, চলমান চ্যালেঞ্জ ও সংকটের সময়ে তার দেশ রাশিয়াকে পাশে চায়। সিরিয়ার নতুন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি ছিল মস্কোতে প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকে আল-শাইবানী বলেন, ‘বর্তমান সময়টি নানা ধরনের চ্যালেঞ্জে ভরা, তবে এটি একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী সিরিয়া গড়ার সুযোগও। এই পথে আমরা অবশ্যই চাই রাশিয়া আমাদের পাশে থাকুক।’
তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘মাঠে বাস্তবতার নানা জটিলতা এবং সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলে—এমন কিছু বিষয়ও রয়েছে। সম্পর্ক যেন পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে হয়, সেটিই গুরুত্বপূর্ণ।’
গত বছর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বাশার আল-আসাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে তিনি দেশত্যাগ করে মস্কোতে আশ্রয় নেন।
এদিকে সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে বাস্তববাদী কৌশল নিচ্ছে। যদিও গৃহযুদ্ধের সময় রাশিয়া আসাদের পক্ষে বিমান হামলা চালিয়েছিল, এখন উভয়পক্ষই সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী।
ল্যাভরভের সঙ্গে বৈঠকের পর আল-শাইবানি বলেন, ‘ইসরায়েলের হামলা ও সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার শক্ত অবস্থান আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করি।’ উল্লেখ্য, চলতি মাসের শুরুর দিকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনী, বেদুইন যোদ্ধা ও দ্রুজ সম্প্রদায়ের সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে আড়াইশোর বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
ল্যাভরভ বলেন, ‘রুশ নাগরিক ও আমাদের স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিরিয়ান কর্তৃপক্ষ যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ। আমরা সিরিয়ার একতা, অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার পক্ষে এবং দেশটি পুনর্গঠনে সিরিয়ার জনগণকে সর্বাত্মক সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’ তিনি আরও জানান, সিরিয়ার সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে।
আল-শাইবানি ‘আসাদোত্তর ন্যায়বিচার’ প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়ার সমর্থন চান এবং বলেন, সিরিয়া রাশিয়ার সঙ্গে পূর্ববর্তী চুক্তিগুলো পর্যালোচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছে।
উল্লেখ্য, সিরিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় উপকূলে রাশিয়ার দুটি সামরিক ঘাঁটি রয়েছে—তারতুসে নৌঘাঁটি এবং খেমেইমিমে বিমানঘাঁটি। এই দুটি ঘাঁটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বাইরের রাশিয়ার একমাত্র অফিশিয়াল সামরিক উপস্থিতি।
নতুন সিরীয় সরকার এই ঘাঁটি ভবিষ্যতে রাখার অনুমতি দেবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।
এছাড়া ল্যাভরভ সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাকে আগামী ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় প্রথম রাশিয়া–আরব লীগ সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণও পুনর্ব্যক্ত করেন।