ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলের লাগাতার হামলায় অন্তত ৯১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অন্তত ৪৫ জন গাজা সিটিতেই নিহত হয়। গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর অভিযোগ করে বলেছে, মানুষকে মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নিতে জোর করে ওই অঞ্চলগুলোকে ‘নিরাপদ মানবিক এলাকা’ হিসেবে প্রচার করলেও সেসব জায়গাতেই হামলা চালানো হচ্ছে।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ১১ আগস্ট গাজা সিটি থেকে জোরপূর্বক উচ্ছেদ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলে ১৩৩টি হামলায় ১৯০৩ জন নিহত হয়েছে, যা ওই সময়ের মোট নিহতের প্রায় ৪৬ শতাংশ।
গণমাধ্যম দপ্তর বলছে, এটি প্রমাণ করে যে সাধারণ মানুষকেই সরাসরি নিশানা করা হচ্ছে, যদিও তাদের দক্ষিণে যেতে বলা হয়েছিল। তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানায় এবং সতর্ক করে যে বৈশ্বিক নীরবতা আরও হত্যাযজ্ঞ চালানোর ‘সবুজ সংকেত’ দিচ্ছে।
এদিকে ভোর থেকে গাজা সিটিতে হামলা বেড়েছে এবং আল-শিফা হাসপাতালে ক্রমাগত আহতদের নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ‘কয়েক মিনিট আগেই নিশ্চিত হয়েছি যে, একটি পরিবার গাড়িতে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় ড্রোন হামলায় শিকার হয়েছে। ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হয়েছেন’ , বলছিলেন গাজায় আল জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ।
হানি মাহমুদ আরও বলেন, ‘শত শত মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে, ড্রোন ও যুদ্ধবিমান তাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় তাড়া করছে।’
হাসপাতালের ওপর হামলা
ইসরায়েলি হামলার কারণে গাজা সিটিতে একাধিক হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে । প্রতিদিন শহর দখল ও আরও মানুষকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা চলছে। শনিবার সকালে শহরের অন্যতম প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র জর্ডান ফিল্ড হাসপাতালকে ব্যাপক গোলাবর্ষণের মুখে সব ১০৭ জন রোগী ও পুরো স্টাফ সরিয়ে নিতে বাধ্য করা হয়।
এমনিতে গাজার হাসপাতালগুলো বহুদিন ধরেই ধ্বংসসীমায়। বেশিরভাগ হাসপাতাল ভয়াবহ পরিস্থিতিতে চলছে। হাসপাতালগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা সরঞ্জাম, এমনকি অ্যানেসথেসিয়া ও অ্যান্টিবায়োটিকও নেই। ডাক্তাররা নিজেরাই না খেয়ে রোগীদের চিকিৎসা করার চেষ্টা করছেন।
যে কয়েকটি হাসপাতাল এখনও মধ্য গাজায় আংশিক চালু আছে, সেগুলোতে উত্তর দিক থেকে বোমাবর্ষণ থেকে পালিয়ে আসা আহত ও অসুস্থ মানুষের ঢল নেমেছে। অনেকের জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন, কিন্তু তা দেওয়া যাচ্ছে না।
একজন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আল জাজিরাকে বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর হাসপাতালের ভেতরের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। এখন এক বিছানায় একজন নয়, দুইজন রোগীকে শুইয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ’
আল-আকসা হাসপাতালে কর্মরত ডা. খলিল দিগরান জানান, ইসরায়েলি বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে গাজা সিটির শিশুদের একমাত্র বিশেষায়িত হাসপাতাল আল-রান্তিসি পেডিয়াট্রিক হাসপাতালে হামলা চালিয়েছে। তিনি জানান, গাজা সিটি ও উত্তরে এখন কেবল দুটি হাসপাতাল আল-শিফা ও আল-আহলি কোনোরকমে চলছে। কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের হাসপাতালগুলোও এখন মারাত্মক চাপে রয়েছে। ইসরায়েলের কর্মকাণ্ড সেগুলোর কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
মোহাম্মদ খুদারি নামে এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, ‘বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর থেকে আমার বাবার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, পানিশূন্যতায় ভুগছেন। আশা করছি তাঁকে আল-আকসা হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হবে। ’
যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব পায়নি : হামাস
এদিকে বিশ্বব্যাপী গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে শনিবার জার্মানির বার্লিনে, যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে ও আরও অনেক জায়গায়। হামাস জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের কথা বারবার বলেছেন, সেটি তারা পায়নি।
শুক্রবার সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘মনে হচ্ছে গাজা নিয়ে একটা চুক্তি হতে যাচ্ছে।’ তবে তিনি কোনো বিস্তারিত তথ্য দেননি, সময়সীমাও জানাননি। ইসরায়েলও এ বিষয়ে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার কট্টর ডানপন্থি জোট গাজা যুদ্ধ শেষ করার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, যতক্ষণ না হামাসকে ধ্বংস করা যায়।