বর্তমান সময়ে ডায়াবেটিস একটি বহুল প্রচলিত ও জটিল রোগে পরিণত হয়েছে। অনিয়মিত জীবনযাপন, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, মানসিক চাপ এবং শারীরিক পরিশ্রমের অভাব- এই সবকিছু মিলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেহেতু ডায়াবেটিসের স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই, তাই রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বাস্থ্যকর ও নিয়মিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলাই সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।
অনেকে মনে করেন ডায়াবেটিস থাকলে মিষ্টি জাতীয় ফল একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। কিন্তু বাস্তবে কিছু নির্দিষ্ট ফল আছে যেগুলো পরিমিত পরিমাণে খাওয়া হলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এই ফলগুলো শুধু সুস্বাদুই নয়, বরং ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিগুণে ভরপুর। নিচে এমন পাঁচটি ফলের কথা আলোচনা করা হলো, যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী ও নিরাপদ।
চেরি
চেরি দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী একটি ফল। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে অ্যান্থোসায়ানিনস , যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। চেরির গ্লাইসেমিক ইনডেক্স (জিআই) তুলনামূলকভাবে কম, ফলে এটি রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ বাড়িয়ে তোলে না। এছাড়াও এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ফাইবার ও পটাসিয়াম, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও ওজন কমাতে সহায়তা করে।
খুবানি (অ্যাপ্রিকটস)
খুবানি বা অ্যাপ্রিকটস হলো আরেকটি উপকারী ফল যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। এটি প্রাকৃতিকভাবে মিষ্টি হলেও এতে চিনি থাকে খুবই কম। খুবানিতে রয়েছে প্রচুর ফাইবার, ভিটামিন এ, ই, কপার, পটাসিয়াম এবং আয়রন। এই উপাদানগুলো একদিকে যেমন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, তেমনি দেহের কোষগুলোকে করে তোলে আরও সজীব ও শক্তিশালী।
শুকনো খুবানিও খাওয়া যায়, তবে খেয়াল রাখতে হবে যাতে এতে অতিরিক্ত চিনি যোগ না করা হয়।
কমলালেবু
কমলালেবু শুধু জনপ্রিয়ই নয়, বরং ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য একটি নিরাপদ ও উপকারী ফল। এতে রয়েছে উচ্চমাত্রার ভিটামিন সি, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়াও কমলায় রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
কমলার জিআই স্কোর প্রায় ৪০, যা তুলনামূলকভাবে কম। ফলে এটি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে। তবে ফলের রস না খেয়ে পুরো ফল খাওয়াই উত্তম, কারণ এতে ফাইবার থাকে যা রক্তে গ্লুকোজ শোষণের হার কমিয়ে দেয়।
নাশপাতি
নাশপাতি একটি অত্যন্ত রসালো ও ফাইবারসমৃদ্ধ ফল। এই ফলটি দীর্ঘ সময় পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে, ফলে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, পটাসিয়াম ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ায় এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
নাশপাতি খাওয়ার সময় খোসাসহ খাওয়াই ভালো, কারণ খোসায় রয়েছে অধিক ফাইবার। এটি হজমের জন্যও ভালো এবং ওজন কমাতেও কার্যকর।
আপেল
‘প্রতিদিন একটি আপেল খেলে ডাক্তারের প্রয়োজন হয় না’ - এই প্রচলিত প্রবাদটি অনেকটাই সত্য। আপেল হলো এমন একটি ফল, যেটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর। এতে রয়েছে সলিউবল ফাইবার বা জলীয় ফাইবার, বিশেষ করে পেকটিন, যা অন্ত্রে গ্লুকোজ শোষণের হার কমিয়ে দেয় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আপেল পানি ও ফাইবারে ভরপুর হওয়ায় এটি ক্ষুধা দমন করতেও সাহায্য করে। আপেল খাওয়ার সময় খোসা ছাড়ানো উচিত নয়, কারণ অধিকাংশ পুষ্টিগুণ থাকে ঠিক খোসার নিচেই। তবে জুস বা প্রক্রিয়াজাত আপেল থেকে দূরে থাকাই ভালো।
আরও কিছু পরামর্শ
১) প্রতিদিন পরিমাণমতো ফল খান- অতিরিক্ত খেলেও রক্তে শর্করা বেড়ে যেতে পারে।
২) খাবারের মাঝখানে বা সকালের নাশতায় ফল খাওয়াই উত্তম সময়।
৩) ফলের রস, ক্যান্ডি, ফ্রুট ড্রিংকস বা প্রসেসড ফল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন।
৪) প্রতিটি নতুন ফল খাওয়ার পরে আপনার রক্তে শর্করার প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা নজরে রাখুন।