ইরানের সঙ্গে ১২ দিনের যুদ্ধের ইসরায়েলের ১৬ জনেরও বেশি পাইলট নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জ্যেষ্ঠ সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি। এ সময় যুদ্ধের প্রথম দিকে ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থায় কিছু দুর্বলতা প্রকাশ পেলেও সেগুলো এখন মেরামত ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলে জানান তিনি।
ইরানের বার্তাসংস্থা মেহের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।
এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে মেজর জেনারেল ইয়াহিয়া রাহিম-সাফাভি বলেন, যুদ্ধের প্রথম দুই থেকে তিন দিনে কিছু ঘাটতি দেখা গেলেও চতুর্থ দিন থেকে পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায় এবং শেষ পর্যায়ে এসে ইরান পূর্ণ আধিপত্য কায়েম করে। বিদেশি মূল্যায়ন অনুসারে, প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যবেক্ষক ইরানকেই এ যুদ্ধে বিজয়ী হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সাফাভি জোর দিয়ে বলেন, ‘ইসরায়েল তাদের ঘোষিত কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি, না ইরানের ভেতরে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে, না গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সামরিক ও পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে; বরং ইরান তার উদ্দেশ্য পূরণে সফল হয়েছে।’ তিনি জানান, শত্রুর কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও টার্মিনালে হামলা চালানো হয়, যা তাদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।
সাফাভি আরও ঘোষণা করেন, অভিযানে শত্রুপক্ষ ৬০০–৬৪০টিরও বেশি আকাশ প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। ফলে তারা ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমানে ইরান মহাকাশ ও বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম পুনর্গঠন করছে এবং শক্তি বাড়াচ্ছে। আকাশ প্রতিরক্ষা, রাডার সিস্টেম, ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্র ও বিমানবাহিনীর কিছু ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নতুন কমান্ডার নিয়োগ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সক্ষমতা দ্রুত পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে। যা ইরানকে শুধু তার সামরিক ক্ষমতা পুনরুদ্ধারই নয়, বরং আকাশ, মহাকাশসহ সবক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক শক্তি আরও বৃদ্ধি করবে।
এ সময় শত্রুপক্ষ কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপ নিলে, তেহরান আগের চেয়েও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে তার জবাব দেবে বলে জানান সাকাভি।
গত ১৩ জুন বিনা উসকানিতে ইরানে হামলা চালায় ইসরায়েল,যা ১২ দিনের যুদ্ধে রূপ নেয়। এ যুদ্ধে অন্তত এক হাজার ৬৪ জন নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিলেন সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ মানুষ। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে ইরানি সশস্ত্র বাহিনী তেল আবিবের কৌশলগত স্থাপনায় হামলা চালায় এবং পশ্চিম এশিয়ার সবচেয়ে বড় মার্কিন সামরিক ঘাঁটি কাতারের ‘আল-উদেইদ’ ঘাঁটিকেও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন উভয় দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়।