ঢাকা রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

বাগরামে কী আছে, কেন এই বিমানঘাঁটি ফিরে পেতে চান ট্রাম্প

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫, ১১:৩৭ এএম
বাগরাম ঘাঁটির টারমার্কে উড়োজাহাজ। সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছেন মার্কিন সেনারা। ছবি- সংগৃহতি

আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি ফেরত চাওয়ার কথা প্রকাশ্যে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, ‘আমরা সেই ঘাঁটিটি ফেরত চাই। যেটি চীনের পারমাণবিক অস্ত্র কারখানার কাছে, কৌশলগত জায়গায় অবস্থিত।’ 

কেন হঠাৎ ফেলে আসা বিমানঘাঁটি আবারও নিয়ন্ত্রণে নিতে চাচ্ছেন ট্রাম্প?

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে প্রায় এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত বাগরাম বিমানঘাঁটি ছিল দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রধান কেন্দ্র।

সোভিয়েত যুগে নির্মিত এ ঘাঁটিকে মার্কিন সেনারা ব্যবহার করেছিল আফগান যুদ্ধের মূল ঘাঁটি হিসেবে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর, সন্ত্রাস দমনের অজুহাতে আফগানিস্তানে আক্রমণ করে বসে মার্কিনিরা। তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে তালেবানদের পতনের পর বাগরাম ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নেয় মার্কিন বাহিনী। নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ঘাঁটিতে ব্যাপক উন্নয়ন করে যুক্তরাষ্ট্র।

২০১২ সালের দিকে এক লাখেরও বেশি মার্কিন সেনা অবস্থান করত সেখানে। বিস্তীর্ণ রানওয়ে, ভারী অবকাঠামো, সামরিক বিমান ওঠানামার সুবিধা, গোয়েন্দা তৎপরতা, লজিস্টিকস—সব মিলিয়ে এটি ছিল এক কথায় ‘মিনি-আমেরিকা’। একে একে অ্যামেরিকার তিনজন প্রেসিডেন্ট—জর্জ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সফর করেন এই ঘাঁটিতে। 
ঘাঁটিটির বড় সুবিধার মধ্যে একটি ছিল এটির বিস্তীর্ণ রানওয়ে।

যার মধ্যে একটি ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। রানওয়েটিতে সহজেই বিশাল আকৃতির সামরিক কার্গো বিমান ওঠা নামা করতে পারে। 
এমনকি ঘাঁটিতে মার্কিন সেনাদের জন্য বার্গার কিং ও পিৎজা হাটের মতো রেস্তোরাঁও চালু ছিল। ঘাঁটির ভেতরে ছিল একটি বিশাল কারাগারও। একে আফগানিস্তানের ‘গুয়ানতানামো বে’ নামে ডাকা হতো।

ট্রাম্পের কৌশলগত দৃষ্টি

ট্রাম্প বারবার বলছেন, বাইডেন প্রশাসনের ২০২১ সালের আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার ছিল ‘একটি মারাত্মক ভুল’। তার দাবি, বাগরাম শুধু আফগানিস্তান নয়, চীনকেও নজরদারির আওতায় রাখার একটি শক্ত ঘাঁটি।

‘চীনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির জায়গা থেকে মাত্র এক ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত বাগরাম,’ বলেন ট্রাম্প।

যদিও নিজের প্রথম মেয়াদে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে ‘দোহা চুক্তি’ করেন ট্রাম্প নিজেই। তবে তার দাবি, সেনা প্রত্যাহারের পরও ওয়াশিংটনের নিয়ন্ত্রণেই রাখতে চেয়েছিলেন ঘাঁটিটি। 

ঘাঁটি ফেরত আনার চ্যালেঞ্জ

বাগরাম ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত? যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ও সাবেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের মতে, এটি কোনোভাবেই সহজ নয়। ঘাঁটি পুনর্দখল করতে হলে ১০ হাজারেরও বেশি সেনা পাঠানো লাগবে, লাগবে উন্নত এয়ার ডিফেন্স ব্যবস্থা। এমনকি তালেবান যদি রাজনৈতিক সমঝোতায় রাজি হয়, তাহলেও আইএস ও আল-কায়েদাসহ নানা জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার ঝুঁকি থেকে যাবে।

আফগানিস্তানের তালেবান সরকার অবশ্য ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। আফগান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক হতে পারে অর্থনীতি ও কূটনীতির ভিত্তিতে, কিন্তু আফগানিস্তানের মাটিতে কোনো বিদেশি সেনা ঘাঁটি রাখা হবে না।’

আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া

চীন বিষয়টিকে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় হুমকি হিসেবে দেখছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে আফগান জনগণ।’

প্রকৃতপক্ষে বাগরামের অবস্থান একে এতটা গুরুত্বপূর্ণ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এই ঘাঁটি থেকে পুরো এশিয়ার ওপর নজরদারি করা সম্ভব। কারণ মধ্য এশিয়ার এই অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ যে নেবে তার রাজত্বেই থাকবে ইউরেশিয়া। 

তবে এবার বাগরামের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া আর অতটা সহজ হচ্ছে না ট্রাম্পের জন্য। কেননা মস্কো-বেইজিং-তেহরানের মতো যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বীরা চাইবে না তাদের ঘাড়ে শত্রুর নিঃশ্বাস পড়ুক।