ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কারুর জেলায় থালাপতি বিজয়ের জনসভায় পদদলিত হয়ে ৩৮ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে রাজনৈতিক মহল। নিহতদের মধ্যে ১০ শিশু ও ১৭ নারী রয়েছে। এ ঘটনায় থালাপতি বিজয়কে দায়ী করছেন ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা। তাদের অভিযোগ, ভিড় বাড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে ছয় ঘণ্টা দেরিতে জনসভায় এসেছিলেন তিনি। সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
দ্রাবিড় মুনেত্র কাজগমের (ডিএমকে) মুখপাত্র সারাভানন আননাদুরাই বলেছেন, ‘এটা অবিশ্বাস্য। নিহত শিশুদের বাবা-মা যেভাবে শোক প্রকাশ করছেন, সেই দৃশ্য অত্যন্ত মর্মান্তিক ও বেদনাদায়ক।’
তিনি অভিনেতা থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া বিজয় ও তার আয়োজকদের দায়ী করে বলেন, ‘মানুষকে ইচ্ছাকৃতভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তপ্ত রোদে অপেক্ষা করানো হয়েছে। এটা ইভেন্টের আয়োজকদের পরিকল্পিত কৌশল। ছয় ঘণ্টা মানুষ সেখানে অপেক্ষা করেছে। কেন বিজয় ও তার দল এটা করল? শুধু জনসমাগম বাড়ানোর জন্য। এটা আয়োজকদের সস্তা চাল এবং অপরাধমূলক অবহেলা।’
ডিএমকে নেতা আরও বলেন, ‘যারা দায়ী তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। আর বিজয় দায় এড়িয়ে যেতে পারেন না। তিনি দায়ী।’
মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এই ট্র্যাজেডি আমাদের সবার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছে।’ নিহতদের পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অরুণা জগদীশানের নেতৃত্বে এক সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, ভিড় সামনের দিকে হুড়োহুড়ি করে এগোতে গিয়ে কয়েকজন পড়ে যাওয়ার পর পদদলিতের ঘটনা ঘটে। এক শীর্ষ কর্মকর্তা অনুমান করেছেন, সভাস্থলে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিল। বিজয়ের নামাক্কাল থেকে এসে বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও তিনি ছয় ঘণ্টারও বেশি দেরিতে পৌঁছান। এর মধ্যে ভিড় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
ডিএমকে নেতা সরাসরি সমালোচনা করে বলেন, ‘আপনি (বিজয়) নিয়মকানুনই মানছেন না, অথচ মুখ্যমন্ত্রী হতে চান! কী লজ্জার বিষয়।’
এর আগে বিজয়ের প্রথম জনসভা তিরুচিতেও ব্যাপক বিশৃঙ্খলা হয়েছিল। বিমানবন্দর থেকে সভাস্থলে পৌঁছাতে ২০ মিনিটের রাস্তা ভিড়ের কারণে ছয় ঘণ্টা লেগেছিল, ফলে গোটা শহর অচল হয়ে পড়ে।
বিজেপি নেতা অশ্বথমন আল্লিমুথু বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখজনক ও মর্মান্তিক। এটা এক অপূরণীয় ক্ষতি। এমনটা হওয়া উচিত ছিল না। এর দায়ভার আয়োজকদেরই নিতে হবে। একইসঙ্গে প্রশাসনকেও আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল।’
ডিএমকে’র অভিযোগ, ইচ্ছাকৃতভাবে বিজয় দেরি করে এসেছেন। এ বিষয়ে বিজেপি নেতা আংশিক একমত হয়ে বলেন, ‘এটা সত্যি হতে পারে। কারণ বিজয়ের প্রতিটি কর্মসূচিতেই এমনটা ঘটছে। তিনি শুধু সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আসেন, তখন ভিড় বেশি হয়। ভিড় বেশি হলে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’
ডিএমকে নেতা অভিযোগ করেন, ‘তিনি অভিনেতা, তাই মানুষ অপেক্ষা করছিল। আর তিনি এর সুযোগ নিয়েছেন রাজনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য। এটাই ঘটেছে। বিজয়কে দায় নিতে হবে। তিনি দায়ী।’