লা লিগায় রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-২ গোলে হারিয়ে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নিয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) ওয়ান্দা মেত্রোপলিতানোয় মৌসুমে প্রথম হারের স্বাদ পেয়েছে লস ব্লাঙ্কোসরা।
হবাঁন লু নহমাঁর গোলে পিছিয়ে পড়ার পর, কিলিয়ান এমবাপে ও আর্দা গিলেরের লক্ষ্যভেদে এগিয়ে যায় রিয়াল। প্রথমার্ধের শেষ দিকে সমতা টানেন আলেকসান্দার সরলথ। দ্বিতীয়ার্ধে পুরোটা সময় কোণঠাসা হয়ে থাকা রিয়ালের জালে জোড়া গোল করেন হুলিয়ান আলভারেস। তাদের শেষ গোলটি করেন অঁতোয়ান গ্রিজমান।
পুরো ম্যাচে পজিশনে একটু এগিয়ে থাকলেও আক্রমণে তেমন সুবিধা করতে পারেনি রিয়াল। ছয়টি শট নিয়ে ওই গোলের দুটিই লক্ষ্যে ছিল তাদের। আতলেতিকো ১৩ শটের সাতটি লক্ষ্যে রাখতে পারে।
প্রথম ছয় ম্যাচে তিনটি গোল খাওয়া রিয়াল মাদ্রিদ এই এক ম্যাচেই হজম করল পাঁচটি। এই পরাজয়ে লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান হারানোর শঙ্কায়ও পড়ে গেল তারা। সাত ম্যাচে ছয় জয়ে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত অবশ্য শীর্ষেই থাকছে শাবি আলোন্সোর দল। এক ম্যাচ কম খেলে ২ পয়েন্ট কম নিয়ে দুইয়ে আছে বার্সেলোনা। সাত ম্যাচে তিনটি করে জয় ও ড্রয়ে ১২ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে উঠেছে আতলেতিকো মাদ্রিদ।
লা লিগায় সবশেষ পাঁচ ডার্বিতে অপরাজিত আতলেতিকো ম্যাচের তৃতীয় মিনিটেই এগিয়ে যেতে পারত। বল পায়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন সরলথ। সামনে একমাত্র বাধা ছিলেন গোলরক্ষক; তবে পেছন থেকে দারুণ ট্যাকলে বল ছিনিয়ে নেন এদের মিলিতাও।
চাপ ধরে রেখে চতুদর্শ মিনিটে এগিয়ে যায় আতলেতিকো। গিলিয়ানো সিমেওনের ক্রসে হেডে গোলটি করেন ডিফেন্ডার হবাঁন লু নহমাঁ। এই নিয়ে এবারের লিগে প্রতিটি ম্যাচেই প্রথমে এগিয়ে যাওয়ার ধারা ধরে রাখল আতলেতিকো। এরপরও অবশ্য আসরের শুরুটা তাদের একেবারেই ভালো হয়নি, প্রথম ছয় রাউন্ডে জিততে পারে মোটে দুটি ম্যাচ।
২৫তম মিনিটে গোলের জন্য প্রথম শটেই এগিয়ে যায় আলোন্সোর দল। মাঝমাঠের কাছে আর্দা গিলেরকে পাস দিয়ে দারুণ ক্ষিপ্রতায় এগিয়ে যান এমবাপে, এরপর সতীর্থের ফিরতি থ্রু পাস ডি-বক্সে ধরেই কোনাকুনি শটে গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
লিগে এই নিয়ে টানা তিন ও সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা চার ম্যাচে জালের দেখা পেলেন এমবাপে। এবারের লা লিগায় তার গোল হলো আটটি, সব মিলিয়ে ১০টি। আরেকটি দারুণ গোলে ৩৬তম মিনিটে ব্যবধান বাড়ায় রিয়াল। বাঁ দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে বাইলাইনের কাছে দুজনের চ্যালেঞ্জ সামলে কাটব্যাক করেন ভিনিসিউস, আর পেনাল্টি স্পটের কাছ থেকে জোরাল শটে গোলটি করেন গিলের।
‘তুরস্কের মেসি’ নামে পরিচিত এই উইঙ্গারের আসরে গোল হলো তিনটি।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণাত্মক শুরু করে আতলেতিকো এবং সুফল পায় তারা।
৪৯তম মিনিটে বাঁ দিক থেকে আসা ক্রস ঠেকাতে গিয়ে অনেক উঁচুতে পা তুলে নিকো গনসালেসের মুখে আঘাত করেন গিলের, সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। আলভারেসের সফল স্পট কিকে ফের এগিয়ে যায় আতলেতিকো। টানা আক্রমণ সামলাতে ব্যস্ত সময় কাটছিল রেয়ালের। প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণে পাল্টা আক্রমণেও তেমন কিছুই করতে পারছিল না তারা। ৬২তম মিনিটে সরলথের শট এগিয়ে এসে আটকে ব্যবধান বাড়তে দেননি কোর্তোয়া।
তবে, পরের মিনিটেই অসাধারণ এক গোলে দলকে জয়ের পথে এগিয়ে নেন আলভারেস। ডি-বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে দুর্দান্ত ফ্রি কিকে নিজের দ্বিতীয় গোলটি করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। কোর্তোয়া ঝাঁপিয়ে বলে হাত ছোঁয়ালেও আটকাতে পারেননি। আক্রমণের ধার বাড়াতে ৬০তম মিনিটে গিলেরকে তুলে ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো এবং ৭০তম মিনিটে জুড বেলিংহ্যামের জায়গায় রদ্রিগোকে মাঠে নামান রিয়াল কোচ। কিন্তু কেউই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। দলটি এই অর্ধে গোলের জন্য তিনটি শট নিয়ে লক্ষ্যে রাখতে পারেনি একটিও।
৮৩তম মিনিটে গনসালেসেরে বদলি নেমে রিয়ালের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন গ্রিজমান। আলেক্স বায়েনার পাস ডি-বক্সে পেয়ে নিখুঁত শটে গোলটি করেন ফরাসি ফরোয়ার্ড।
দাপুটে জয়ে লা লিগায় নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিপক্ষে কয়েক বছরের আধিপত্যও ধরে রাথল আতলেতিকো। লিগে এই নিয়ে টানা ছয়টি মাদ্রিদ ডার্বিতে অপরাজিত রইল তারা।