ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

একটি বাদে ফ্লোটিলার সব জাহাজই আটকে দিয়েছে ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৫:৩২ পিএম
সুমুদ ফ্লোটিলার নৌবহরে আক্রমণ চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। ছবি- সংগৃহীত

অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা আন্তর্জাতিক ত্রাণবাহী নৌবহর সুমুদ ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি নৌবাহিনী হামলা চালিয়েছে। আয়োজকদের বরাতে জানা গেছে, অন্তত ৩১৭ জন অধিকার কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদিকে ইসরায়েল জানিয়েছে তার একটি বাদে সবগুলো জাহাজই আটকে দিয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আল-জাজিরা।

ফ্লোটিলা ট্র্যাকার বলছে, ২১টি জাহাজে সরাসরি আক্রমণ চালানো হয়েছে। আরও ১৯টি জাহাজ আক্রান্ত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চারটি জাহাজ এখনো গাজার পথে রয়েছে। আটককৃতদের মধ্যে স্পেন, ইতালি, ব্রাজিল, তুরস্ক, গ্রিস, যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সুইডেন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ বহু দেশের নাগরিক রয়েছেন।

ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্স প্ল্যাটফর্মে জানায়, আটক কর্মীদের আশদোদ বন্দরে নেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে নির্বাসিত করা হবে।

ফ্লোটিলার একটি বাদে সবগুলো জাহাজ আটকে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে এক বিবৃতিতে ইসরায়েল জানিয়েছে, ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার কোনো নৌকাই সক্রিয় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রবেশ বা বৈধ নৌ অবরোধ ভাংতে সফল হয়নি। সকল যাত্রী নিরাপদে ইসরায়েলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের ইউরোপে নির্বাসিত করা হবে। একটি জাহাজ এখনো চলাচল করছে। সেটি যদি যুদ্ধক্ষেত্রের কাছাকাছি পৌঁছে অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করে, তবে সেটিও প্রতিরোধ করা হবে।’

ফ্লোটিলা ট্র্যাকার দেখিয়েছে, ‘মাইকেনো’ নামের জাহাজটি গাজার জলসীমায় প্রবেশ করেছিল। তবে গাজা থেকে প্রায় ৯.৩ নটিক্যাল মাইল দূরে থাকতেই এর সিগন্যাল হারিয়ে যায়। গ্লোবাল মিশনের তুর্কি কর্মী এরদেম ওজভেরেন জানান, তাদের জাহাজ গাজা থেকে ৩০ নটিক্যাল মাইলেরও কম দূরে ছিল।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা জানায়, বছরের পর বছর ধরে চলা অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করলেই ইসরায়েলি নৌবাহিনী জাহাজ ঘিরে ফেলে। কর্মীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ নৌকায় সিগন্যাল জ্যাম করা হয়েছে, বিধায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়।

সংবাদ সংস্থা আনাদোলুর প্রতিবেদনে বলা হয়, কয়েকজন কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও প্রকাশ করেছেন। সেখানে দেখা গেছে, ইসরায়েলি নৌকা বহরের দিকে এগিয়ে আসছে ও পথ পরিবর্তনের নির্দেশ দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক কমিটি জানায়, কিছু জাহাজ আটক করা হয়েছে, জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। তাদের দাবি, ক্যামেরা অফলাইনে রাখা হয়েছে এবং সামরিক বাহিনী জোর করে জাহাজে উঠেছে।

কমিটি অভিযোগ করেছে, ইসরায়েলি নৌবাহিনী সহিংসতা চালিয়েছে। জলকামান ব্যবহার করে জাহাজে হামলা চালানো হয়েছে এবং জোরপূর্বক কর্মীদের আটক করা হয়েছে। তারা বলেছে, অন্তত ৫০টি দেশের শান্তিপূর্ণ বেসামরিক নাগরিকের সঙ্গে নির্মম আচরণ করা হয়েছে।

ইসরায়েলি চ্যানেল ১৩ জানিয়েছে, নৌবহর দখলের অভিযান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। আক্রমণের আগে ত্রাণবহর গাজা থেকে ৮০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিল। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অন্তত ২০টিরও বেশি ইসরায়েলি নৌকা কনভয়ের দিকে এগিয়ে আসে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আগেই সতর্ক করেছিল। জাতিসংঘও জানিয়েছিল, কনভয়ের ওপর আক্রমণ অগ্রহণযোগ্য হবে। তবুও ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালায়।

আগস্টের শেষদিকে যাত্রা করা এই বহরে ছিল ৫০টিরও বেশি জাহাজ, ৪৫টিরও বেশি দেশের ৫৩২ জন বেসামরিক সমর্থক। এতে মানবিক সহায়তা ও চিকিৎসা সরঞ্জাম বোঝাই ছিল।

ইসরায়েল প্রায় ১৮ বছর ধরে গাজায় অবরোধ বজায় রেখেছে। মার্চে সীমান্ত ক্রসিং বন্ধ করে খাদ্য ও ওষুধ সরবরাহ কেটে দিয়ে অবরোধ আরও কঠোর করে। ফলে ছিটমহলটি দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত হয়েছে।

২০২৩ সালের ৮ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বোমা হামলায় ৬৬ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। জাতিসংঘ ও অধিকার গোষ্ঠীগুলি সতর্ক করেছে, গাজা এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে। দুর্ভিক্ষ ও রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।