ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীর চিফ অব স্টাফ ও শীর্ষ সামরিক নেতা মোহাম্মদ আবদুল করিম আল-ঘামারি নিহত হয়েছেন। এ সময় ইসরায়েলি হামলায় তার কিশোর ছেলেও নিহত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে হুথি যোদ্ধারা জানায়, আল-ঘামারি ‘তার কর্তব্য পালনকালে’ হামলার শিকার হয়ে প্রাণ হারান।
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, হুথিদের ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই ইসরায়েল এ হামলার দায় স্বীকার করেছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ বলেন, ‘আল-ঘামারি ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন। ভবিষ্যতেও যেকোনো হুমকির জবাবে আমরা একই পদক্ষেপ নেব।’
হুথিরা এক বিবৃতিতে সতর্ক করে বলেছে, ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের যুদ্ধ ‘এখনো শেষ হয়নি’। ‘ইসরায়েল তার অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি পাবে’।
গত আগস্ট মাসে ইসরায়েল জানিয়েছিল, তারা ইয়েমেনের রাজধানী সানায় বিমান হামলা চালিয়েছে। সেখানে আল-ঘামারি ও হুথি সরকারের আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। ওই হামলায় হুথি-শাসিত সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন নিহত হন।
আল-ঘামারির মৃত্যুর খবর আসে গাজায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ছয় দিন আগে শুরু হওয়া ‘যুদ্ধবিরতি’র মধ্যেই। এই ‘যুদ্ধবিরতি’ ইসরায়েলের দুই বছরের দীর্ঘ অভিযানে বিরতি এনে দিয়েছে, যেখানে প্রায় ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে গাজায় ইসরায়েলের অভিযানে গণহত্যার অভিযোগ তুলেছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে আসছে। তারা দাবি করে, এই হামলাগুলো ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতির অংশ। লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোকেও তারা একাধিকবার লক্ষ্যবস্তু করেছে।
হুতিদের হামলার জবাবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে হুতিদের অবস্থানে একাধিক বিমান হামলা চালিয়েছে।
আল-ঘামারির মৃত্যুর পর হুতিরা এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের ‘নৃশংস’ হামলা সত্ত্বেও ইয়েমেনি জনগণ ‘ধৈর্য, শক্তি ও অবিচলতার’ সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছে। তাদের দাবি, আল-ঘামারির নেতৃত্বে ইয়েমেনের সেনা ও নৌবাহিনী মোট ৭৫৮টি সামরিক অভিযান চালিয়েছে, যেখানে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রসহ ১ হাজার ৮৩৫টি অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে।
হুতিদের নেতা আবদেল-মালিক আল-হুতি বলেছেন, গাজার সমর্থনে সামরিক অভিযানে আল-ঘামারির ভূমিকা ছিল ‘অপরিহার্য’। বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতারা আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। এটি আমাদের প্রতিরোধের আন্তরিক অবস্থানের প্রতিফলন। ফিলিস্তিনি জনগণকে বিচ্ছিন্ন করার মার্কিন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ইয়েমেন প্রতিরোধের পথেই রয়েছে। আল-ঘামারির মৃত্যুর পরও নেতৃত্ব ও সেনারা এই পথ অব্যাহত রাখবে।’
গত সপ্তাহে গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর হুতিরা জানিয়েছিল, তারা যুদ্ধবিরতির শর্ত পর্যবেক্ষণ করবে। ইসরায়েল যদি চুক্তি ভঙ্গ করে, তবে গাজার প্রতি সমর্থন পুনরায় শুরু করবে তারা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন