ঢাকা বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫

‍‍`মাশরুম লাঞ্চ‍‍` হত্যাকাণ্ড

এরিন প্যাটারসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অস্ট্রেলিয়ান আদালতের

বিশ্ব ডেস্ক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ০২:০৭ পিএম

বিষাক্ত মাশরুম খাইয়ে তিনজনকে হত্যার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত এরিন প্যাটারসনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড  দিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার আদালত। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক বিচারক এ রায় ঘোষণা করেন। ৩৩ বছরের আগে প্যাটারসনের প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন তিনি।

৫০ বছর বয়সী প্যাটারসনকে গত জুলাই মাসে তিনটি হত্যাকাণ্ডের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তিনি ২০২৩ সালে তাঁর স্বামীর মা–বাবা ও খালা–খালুকে নিজ বাড়িতে দুপুরের খাবারের সময় বিফ ওয়েলিংটনের মধ্যে বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে খাইয়েছিলেন। ওই ঘটনায় স্বামীর মা–বাবা ও খালা মারা যান।

প্যাটারসনের বিচার চলাকালে পডকাস্টার, চলচ্চিত্রকর্মী ও সত্যিকারের অপরাধকাহিনি নিয়ে কৌতূহলী মানুষেরা ভিক্টোরিয়ার মফস্বল শহর মরওয়েলের আদালতে জমায়েত হয়েছিলেন। ‘নিউইয়র্ক থেকে নয়াদিল্লি’ পর্যন্ত বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষদের মধ্যে এ মামলা নিয়ে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিল। এ ঘটনাকে এখন অনেকেই ‘মাশরুম হত্যাকাণ্ড’ বলেন। তবে হত্যার উদ্দেশ্য কী ছিল, তা এখনো রহস্যই থেকে গেছে।

প্যাটারসনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করার সময় সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ক্রিস্টোফার বিল বলেন, প্যাটারসন তাঁর ভুক্তভোগী ও তাঁদের পরিবারকে ভয়াবহ ‘মানসিক আঘাত’দিয়েছেন। বিচারক বলেন, ‘আপনি ভুক্তভোগীদের প্রতি কোনো অনুশোচনা দেখাননি। এটা ক্ষতকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। আপনার অপরাধ এতটাই গুরুতর যে এর জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’

বিচারক আরও বলেন, ৩৩ বছর পর তিনি প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন। তখন প্যাটারসনের বয়স হবে ৮৩ বছর।

এদিকে প্যাটারসনের আইনজীবীরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন, তাঁদের মক্কেলকে ৩০ বছর পর মুক্তির সুযোগ দেওয়া উচিত। কারণ, মামলার ধরন অনুযায়ী তাঁকে কারাগারের বেশির ভাগ সময় একাকী অবস্থায় কাটাতে হবে। দোষী সাব্যস্ত এবং সাজা ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য প্যাটারসনের হাতে এখন ২৮ দিন সময় আছে।

সাজা ঘোষণার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইয়ান উইলকিনসন। তিনি বিষাক্ত মাশরুম প্রয়োগের ওই ঘটনায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র অতিথি। তিনি হত্যাকাণ্ডের পর পরিবারটির পাশে থাকায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। উইলকিনসন বলেন, ‘আমি সবাইকে বলব, একে অপরের প্রতি সদয় হোন।’

২০২৩ সালের ২৯ জুলাই প্যাটারসন নিজের গ্রামের বাড়িতে ছোট পরিসরে পারিবারিকভাবে দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন। অতিথি ছিলেন তাঁর স্বামীর মা–বাবা ডন ও গেইল প্যাটারসন, স্বামীর খালা হিদার ও খালু ইয়ান। এই ইয়ান আবার স্থানীয় ব্যাপটিস্ট গির্জার পাদরি ছিলেন। প্যাটারসনের স্বামী সায়মনকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তিনি আসেননি। কারণ, তিনি অস্বস্তি বোধ করছিলেন। প্যাটারসন ও সায়মন তখনো আইনগত দিক থেকে স্বামী-স্ত্রী ছিলেন। তবে তাঁরা তাঁদের সন্তানের ভরণপোষণ নিয়ে বিবাদে জড়িয়েছিলেন।

কীভাবে বিষক্রিয়া ছড়ায়

প্যাটারসন দামি গরুর মাংস কিনে তাতে মাশরুমের পেস্ট মিশিয়ে পেস্ট্রিতে মোড়ানো খাবার তৈরি করেন, যা বিফ ওয়েলিংটন নামে পরিচিত। সবাই খাওয়ার আগে ও পরে প্রার্থনা করেন। পরে হিদার খাবারটি ‘সুস্বাদু ও দারুণ’হয়েছে বলে প্রশংসাও করেন। সেই আমন্ত্রণে খাবার খাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই ডন, গেইল ও হিদার মারা যান।

প্যাটারসন দাবি করে আসছিলেন, তিনি গরুর মাংস ও পেস্ট্রি দিয়ে বানানো খাবারে দুর্ঘটনাবশত ‘ডেথ ক্যাপ’ নামের বিষাক্ত মাশরুম মিশিয়ে ফেলেছিলেন। ডেথ ক্যাপ মাশরুম দেখতে সাধারণ খাওয়ার উপযোগী মাশরুমের মতো এবং স্বাদেও বেশ মিষ্টি। কিন্তু এতে থাকা অ্যামাটক্সিন নামের বিষ শরীরে ঢুকে কয়েক দিনের মধ্যেই শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিকল করে দেয়।