ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০২৫

মতামত

বিএনপি থেকে আগাছামুক্ত করতে হবে 

রেজাউল করিম খোকন  অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক 
প্রকাশিত: জুলাই ১৭, ২০২৫, ০৩:২০ এএম
রেজাউল করিম খোকন। ছবি- সংগৃহীত

আমরা মানে আমাদের গোটা পরিবার, বলা যায়- পুরো গোষ্ঠী বিএনপির জন্মলগ্ন থেকেই শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময় থেকে বিএনপির ঘোরতর সমর্থক। আমার আব্বা ও আম্মা বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের সংগঠক হিসেবে কাজ করেছেন। আমি দেখেছি, স্বৈরাচারী এরশাদ  শাসনামলে বিএনপির দুর্দিনে আমার চিকিৎসক বাবা সারা দিনে যা আয় করেছেন, তার পুরোটাই বিএনপির নেতা-কর্মীদের মিছিল-সমাবেশ, আপ্যায়ন ইত্যাদির ব্যয়ে তুলে দিয়েছেন। 

এমনও দিন গেছে, সারা দিনে বাবা যা আয় করেছেন তার সব টাকা দিয়ে দেওয়ার কারণে আমাদের বাসায় বাজার করার মতো অবস্থা থাকত না। বিএনপির প্রতি আমাদের পরিবারের অনুরাগ ভালোবাসা আকর্ষণ প্রমাণের জন্য আর কি বলতে পারি? আমাদের পরিবারের মতো আরও অসংখ্য পরিবার এবং মানুষ রয়েছে যারা দলটিকে ভালোবেসে, শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নিজ হাতে গড়ে তোলা দলটির অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থে নিজের সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা, সমর্থন জানিয়ে এসেছেন। বিনিময়ে কোনো স্বার্থ হাসিলের হীন উদ্দেশ্য, চিন্তাভাবনা কখনো আমাদের মাথায় জাগেনি। নিঃস্বার্থভাবে এই দলের প্রতি সমর্থন ধরে রেখে এসেছে তারা সবাই। এ রকম অগণিত ভক্ত অনুরাগী ঘরে ঘরে রয়েছে। যাদের চাওয়া সুন্দর একটি বাংলাদেশ। শোষণমুক্ত বঞ্চনামুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চার অনন্য আদর্শ  হিসেবে বিবেচিত একটি দেশ।

দীর্ঘদিনের পথচলায় বিএনপির প্রতি আমাদের ভালোবাসা অনুরাগ সমর্থন অটুটভাবে ধরে রেখেছি। স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী, দুঃশাসনের খলনায়িকা শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের দুঃশাসনের সময় শুধু মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি, কবে এ দেশ আওয়ামী স্বৈরাচারী শাসন থেকে মুক্ত হবে, কবে আবার বিএনপি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে? কিন্তু স্বৈরাচারী স্বেচ্ছাচারী দুঃশাসনের খলনায়িকা শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর বিগত নয়-দশ মাসে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কথাবার্তা, আচরণ, কর্মকাণ্ড, জুলাই বিপ্লবের প্রতি অশ্রদ্ধাশীল মনোভাব প্রকাশ, নিজেদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে বেপরোয়া মনোভাব প্রকাশ, দেশের অন্যান্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শামিল রাজনৈতিক দলগুলোকে অবহেলা তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা, ক্ষমতায় আসীন হওয়ার আগেই দাম্ভিকতা, ক্ষমতালিপ্সার প্রকাশ ইত্যাদি আমাদের প্রচণ্ডভাবে হতাশ করেছে। আমরা এমন দিন তো কখনো দেখতে চাইনি। ভেবেছিলাম, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করা সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল নিয়ে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি সম্মিলিত শক্তির মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে, সুষ্ঠু, সুন্দর, দুর্নীতিমুক্ত, বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে, যেখানে একদলীয় স্বৈরাচারী মনোভাবের প্রকাশ থাকবে না। কিন্তু আজ কি দেখছি আমরা? 

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেব যে রাজনৈতিক দর্শনের কথা বলে আসছেন তাতে আমরা মুগ্ধ। তাকে এই সময়ের একজন আধুনিকমনস্ক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বিবেচনা করি। তার চিন্তা-চেতনা, ভাবনা নতুন দিনের রাজনীতির পরিকল্পনা ইত্যাদি দেখে তার প্রতি আস্থাশীল হয়েছি। ভেবেছি, তিনি যদি বাংলাদেশের হাল ধরেন আগামীর বাংলাদেশ হবে অন্যরকম। কিন্তু এখন দেখছি, তার কথায় বিএনপি চলছে না। বিএনপি পরিচালিত হচ্ছে কতিপয় ভারতীয় অনুগত নেতাদের মাধ্যমে। তাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের বি-টিম হিসেবে মাঠে নেমেছে জনপ্রিয় এই রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু আমার মতো আরও অগণিত বিএনপি সমর্থক বর্তমান সময়ের বিএনপির কর্মকাণ্ড দেখে হতবাক, হতাশ এবং বিরক্ত।

তাদের এমন নৈরাজ্যকর আচরণ, উশৃঙ্খল কর্মকাণ্ড দেখে এই দলটির ওপর আর আস্থা রাখতে পারছি না। এই সময়ের শিক্ষিত মেধাবী তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা তো কোনোভাবেই বিএনপির ব্যাপারে আগ্রহী নয়। আওয়ামী লীগকে তারা যেমন ঘৃণা করে, একইভাবে তারা বিএনপির প্রতি চরম বিরক্ত ও নিরাসক্ত। এই ছেলে-মেয়েরা চব্বিশের জুলাই বিপ্লবের সময় অসীম সাহসী হয়ে রাজপথে নেমে এসেছিল। তাদেরকে নয়-ছয় কিছু একটা বলে বোঝাতে পারি না আমরা। তারা যুক্তি দিয়ে সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করে। তারা সবাই শহিদ আবরারের মতো ভারতীয় আগ্রাসন, আধিপত্যবাদ বিরোধী মনোভাব পোষণ করে। 

আমি নিজে আমার পরিবারের ছেলে-মেয়েগুলোকে তো দেখছি প্রতিদিন! এমতাবস্থায়, বিএনপি যদি আমাদের মতো সমর্থকদের ধরে রাখতে চায় তাহলে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপর বিএনপির কতিপয় শীর্ষ নেতাকে বহিষ্কার করে দলটিকে পরিশুদ্ধ করার আকুল আবেদন জানাচ্ছি। তা না হলে আগামী দিনগুলোতে আমরা হয়তো দেখব, আমাদের মতো সাধারণ সমর্থক অনেকেই সমর্থন তুলে নিয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি প্রদান করতে বাধ্য হবেন।  ভারতীয় আগ্রাসন আধিপত্যবাদ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর কোনো রাজনৈতিক দল আবার বাংলাদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হোক, আমরা মেনে নিতে এর জুলাই বিপ্লব এর বিজয় কোনোভাবেই ভূলুণ্ঠিত হোক, এটা কাম্য হতে পারে না আমাদের।

বিএনপির কাণ্ডারি তারেক রহমানকে যথার্থভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। কিন্তু খোদ বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের কাজকর্ম দেখে বারবার মনে হচ্ছে, তারা তারেক রহমানের প্রতি মোটেও শ্রদ্ধাশীল নয়। দলীয় আদর্শকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা যা খুশি করে বেড়াচ্ছে। তারেক রহমান দীর্ঘদিনে নিজেকে একজন যোগ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে তুলেছেন অনন্য এক কারিশমায়। পিতা শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, আপোসহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার যোগ্য সন্তান, অনন্য উত্তরসূরি হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ তাকে গ্রহণ করেছে সাগ্রহে। তাকে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একজন আইকন নেতা ভাবা যায়। তার ধারে-কাছে যাওয়ার মতো তেমন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠেনি এখন পর্যন্ত। আজকের তরুণ প্রজন্মের ছাত্র নেতৃবৃন্দের মধ্যে অনেক সম্ভাবনার স্ফুরণ দেখছি। তবে জাতীয় নেতা হতে হলে আরও পরিপক্বতা অর্জন করতে হবে, দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তাদের লক্ষ্য, একটি সুন্দর সমাজ ও সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে দেশটাকে সঠিকভাবে এগিয়ে নেওয়া। আমরা সবাই তো এটাই প্রত্যাশা করছি এই মুহূর্তে। তবে নির্বাচনের মাঠে অনেক হিসাব-নিকাশ রয়েছে। সেখানে দলীয় শক্ত ভিত্তি থাকা প্রয়োজন। মাঠপর্যায়ে দলকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে আরও সময় পার করতে হবে অবশ্যই। দিনে দিনে তারা এটা অর্জন করতে সক্ষম হবেন বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।

বিএনপি অনিশ্চিত, অন্ধকার, দিকভ্রান্ত অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে আলোর পথে নিয়ে এসেছিল একসময়। চৌকষ সেনানায়ক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, দক্ষ, অভিজ্ঞ, দূরদর্শী, একজন সৎ, পরিশ্রমী দেশের আপামর জনসাধারণের কল্যাণের জন্য নতুন নতুন চিন্তা-ভাবনার বাস্তবায়নের দৃঢ় মনোবলের সাহসী মানুষ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ নতুন রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূচনা করে ছিলেন। উন্নয়নের রাজনীতি ছিল তার মূলমন্ত্র। দেশ ও দেশের জনগণের ভাগ্যোন্নয়নের জন্য তিনি ভিন্ন ধারার রাজনীতির চর্চা শুরু করেছিলেন সেই সত্তর দশকের শেষ দিকে। পরবর্তী সময়ে যারাই এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন মূলত তার প্রবর্তিত উন্নয়নের রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন। যদিও তারা মুখে কোনোদিন সে কথা স্বীকার করতে চাননি হীনম্মন্যতার কারণে। বরং তার বিরুদ্ধে চরম বিষোদাগার করে তার চরিত্র হননের অপচেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ জানে শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কেমন নেতা ছিলেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হাতে গড়া রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরু থেকেই সমর্থন পেয়েছে এদেশের কৃষক শ্রমিক, ছাত্র-জনতা, সাধারণ মানুষের। তবে বিএনপিকে কঠিন চড়াই-উৎরাই পথ পাড়ি দিয়ে আজকের অবস্থায় পৌঁছাতে হয়েছে।

বিএনপির দীর্ঘ সময়ের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন সরকারের নির্মম নির্যাতন, ষড়যন্ত্র, অবহেলা, তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য, গুম-খুন-নিপীড়ন পৈশাচিকতা ইত্যাদি মোকাবিলা করে টিকে থাকার বিষয়টা সহজে চোখে পড়ে। বিগত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের ১৫-১৬ বছরের দুঃশাসনের সময় ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আন্দোলন সংগ্রাম করে এগিয়ে যেতে হয়েছে বিএনপিকে। আওয়ামী শাসনামলে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার বিএনপিকে সমূলে ধ্বংস করে দিতে আওয়ামী লীগ এবং তাদের সহায়তাদানকারী আধিপত্যবাদী বিদেশি শক্তি অনেক ধরনের ষড়যন্ত্র, কলাকৌশল প্রয়োগ করে তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেনি। 

বিএনপিকে ভেঙে খান খান করার অপচেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। বরং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে একান্ত জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির প্রতি সমর্থন বেড়েছে দিনে দিনে। যদিও নানা ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত, নেতৃবৃন্দের বিচক্ষণতার অভাবে বিএনপির গড়ে তোলা আন্দোলনগুলো চূড়ান্ত সাফল্য অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবুও আপোসহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দলটি অটল অনড় অবস্থানে থেকে জনগণের আস্থা অর্জন করেছে। যা পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মাথাব্যথার কারণ হয়ে ছিল। তারা তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে প্রতিহিংসা, জিঘাংসা চরিতার্থ করতে হিংস্র হায়েনার রূপ ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিএনপির নেতা-কর্মীদের ওপর। নির্মমতা, পাশবিকতা, অমানবিকতা, বর্বরতা, নৃশংসতা, অসভ্যতার নতুন নতুন নজির স্থাপন করেছে।

চব্বিশের ছাত্র-জনতার জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিজয় অর্জনের পর বিএনপিকে ঘিরে যখন সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা আরও ঘনীভূত হচ্ছে তখন এই বৃহৎ ও সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলটির কতিপয় নেতা-কর্মীর বেপরোয়া আচরণ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, পতিত স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের মতো চাঁদাবাজ, দখলদার হয়ে ওঠার প্রবণতা সবাইকে চরম হতাশ করেছে। সারা দেশজুড়ে একের পর এক ঘটনা বিএনপির প্রতি দীর্ঘদিন ধরে গড়ে ওঠা আস্থা, বিশ্বাস, নির্ভরতা, ভালোবাসার ভিত্তিতে ভয়ঙ্করভাবে আঘাত করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে সমর্থন করে আসা সাধারণ মানুষের হৃদয় ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। এক ধরনের অস্বস্তি, অভিমান, দুঃখবোধ তাদের কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে এখন। যে তারেক রহমানকে তার বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা আধুনিক সময়ের উপযোগী যথার্থ একজন যোগ্য রাষ্ট্র নায়কোচিত আচরণের জন্য পছন্দ করে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের কাণ্ডারি ভাবতে শুরু করেছেন দেশের কোটি কোটি মানুষ। 

দলমত নির্বিশেষে অনেকের কাছে তার দারুণ গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি হয়েছে ইতোমধ্যে। তার বিকল্প আর কে হতে পারে এই মুহূর্তের বাংলাদেশে? তেমন প্রশ্ন যেখানে আলোচিত হচ্ছে। এক ধরনের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার পাশাপাশি আস্থার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন তিনি। সেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে আজ স্লোগান দিতে দুঃসাহস দেখিয়েছে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতাদের কেউ কেউ। এটা অনাকাক্সিক্ষত হলেও বিএনপির কতিপয় নেতা-কর্মীর বল্গাহীন আচরণ, একগুঁয়েমি,আত্ম অহমিকায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়া, লোভ-লালসা, পতিত স্বৈরাচারের প্রতি প্রকাশ্যে ও গোপনে আঁতাত গড়ে তোলা, সাহায্য সহযোগিতা করার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতি ক্ষোভ সৃষ্টির কারণেই ঘটছে বলে মনে করছি। এসব ঘটনাকে ক্যাশ করে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি তো তাদের ফায়দা হাসিলের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। 

যে আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫-১৬ বছর ধরে নানাভাবে চেষ্টা করেও বিএনপির সামান্যতম ক্ষতি করতে পারেনি, বরং বিএনপি দিনে দিনে শক্তিশালী এবং অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছিল। সেই বিএনপিকে এখন কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ওইসব কুলাঙ্গার নেতা-কর্মীদের অসভ্য, উশৃঙ্খল, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও কর্মকাণ্ড। সারা দেশে এখন শুধু অভিযোগ বিএনপির কিছু নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। এটা তিল তিল করে গড়ে ওঠা বিএনপির চমৎকার ইমেজ, অসম্ভব জনপ্রিয়তা, সবার আস্থা বিশ্বাসের মূলে আঘাত করে অনেকটাই ক্ষতি করে ফেলেছে।

রাজনীতির মাঠে প্রতিপক্ষ এখন আওয়ামী লীগের চেয়েও অনেক সুকৌশলী, বুদ্ধিমান, মেধাবী এবং সুসংগঠিত- এটা উপলব্ধি করতে হবে বিএনপিকে। সে তুলনায় বিএনপির কারিগরি দিক অনেকটাই যেন ব্যাকডেটেড। যুগোপযোগী হয়ে উঠতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে তাদের। শুধু সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল ভেবে এক ধরনের আত্মতুষ্টিতে ভুগে ভুগে কিছুটা অবহেলা করে এসেছে তারা এ বিষয়ে। জনসমর্থনকে কাজে লাগাতে হলে এখন অনেক কিছু প্রয়োজন। যেনতেন উপায়ে সাধারণ মানুষের কাছে আস্থা ও বিশ্বাসের প্রতীক হয়ে থাকা সম্ভব নয় এখন। দলের ভাবমূর্তি যা ক্ষুণ্ন হয়েছে, দলের যা ক্ষতি হয়েছে ইদানীংকালে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনায় তা কাটিয়ে উঠতে হলে বিএনপির নেতৃবৃন্দকে এখনই দলে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।

দলীয় পদ-পদবি, অতীতের অবদান ইত্যাদি বিবেচনা না করে অপরাধ বিবেচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। কোনোভাবেই কাউকে রেহাই দেওয়া যাবে না। সামনে সময় খুব কম। সাধারণ মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার ওপর ভর করে টিকে থাকতে হলে তাদের চাওয়া, পছন্দের পথ ধরে এগোতে হবে বিএনপিকে। বিএনপির একজন শুভাকাক্ষী হিসেবে এই সময়ে এসে দলের অবস্থান দেখে কষ্ট অনুভব করছি। আশা করি, আমাদের প্রিয় রাজনৈতিক দলটি সব ধরনের বিপর্যয় কাটিয়ে আবার শক্ত, দৃঢ়, মজবুত অবস্থান অটুট রাখতে সক্ষম হবে। শুভকামনা রইল তারেক রহমানের জন্য। আশা করি, তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়ে শক্ত হাতে হাল ধরবেন জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলটির। সবার ভালোবাসা, আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে দলকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।