পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর প্রধান ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনিরকে ক্ষমতাচ্যুতির গুঞ্জন উঠেছে। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই আন্তর্জাতিক মহলে চলছে চর্চা। তবে গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছেন দেশটির সেনাপ্রধান।
এছাড়াও দেশের নেতৃত্বে কোনও পরিবর্তনের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি প্রচারিত তথ্যকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এসব সরকার ও সেনা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়।
ব্রাসেলসে সিনিয়র সাংবাদিক সোহেল ওয়ারাইচের সঙ্গে আলাপচারিতায় অসীম মুনির বলেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য আল্লাহ তাকে মনোনীত করেছেন এবং অন্য কোনও পদে তার কোনও আগ্রহ নেই।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, রাজনৈতিক পুনর্মিলন সম্ভব কেবল তখনই যখন সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাইবে।
গত জুলাই মাসে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল যে প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারিকে পদত্যাগ করতে বলা হতে পারে এবং সেনাপ্রধান দেশের সর্বোচ্চ পদ গ্রহণ করবেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নকভি উভয়েই এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিল্ড মার্শাল অসীম মুনির কখনও প্রেসিডেন্ট হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি, ভবিষ্যতেও এর কোনও পরিকল্পনা নেই। অপরদিকে নকভি এটিকে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং সেনাপ্রধানকে লক্ষ্য করে চালানো একটি ‘দূষিত প্রচারণা’ বলে অভিহিত করেন।
আলাপচারিতায় সেনাপ্রধান পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কেও মত দেন। তিনি বলেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা পাকিস্তানের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, এবং একজন বন্ধুকে অন্যজনের স্বার্থে ত্যাগ করা হবে না।
তিনি উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নত হতে শুরু করেছে। সম্প্রতি ট্রাম্প তাকে হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান, যা ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলেছে এবং কূটনীতিতে একটি নতুন দিক নির্দেশ করছে।
সেনাপ্রধান জানান, ট্রাম্পের শান্তির আকাঙ্ক্ষা আন্তরিক, আর সেই কারণেই পাকিস্তান প্রথম দেশ হিসেবে তাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন সমর্থন করেছিল। এখন অন্য দেশগুলোও পাকিস্তানের পথ অনুসরণ করছে। আঞ্চলিক নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেন, ভারতের উচিত পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা বন্ধ করা।
তিনি প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের প্রশংসা করে বলেন, যুদ্ধকালীন সময়ে প্রতিদিন ১৮ ঘণ্টা কাজ করে তিনি অসাধারণ সংকল্প ও নিষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। সাম্প্রতিক সামরিক সংঘাত ‘মার্কা-ই-হক’-এ ভারতের পরাজয়ের পর দেশটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছায়াযুদ্ধ আরও তীব্র করেছে এবং নাশকতামূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ফিতনা-আল-খাওয়ারিজ ও ফিতনা-আল-হিন্দুস্তানকে ব্যবহার করছে।
অসীম মুনির আফগান সরকারকে আহ্বান জানান যেন তারা তালেবানদের পাকিস্তানে ঠেলে দেওয়ার নীতি বন্ধ করে। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, প্রতিটি পাকিস্তানির রক্ত রাষ্ট্রের কাছে একটি গুরুতর দায়িত্ব, যা যেকোনো মূল্যে রক্ষা করতে হবে।
সূত্র: জিও নিউজ