ইরানে ইসরাইলের হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইলের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগে থেকেই অবগত ছিলাম।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, মার্কিন সেনাবাহিনী এই অভিযানে কোনো ভূমিকা পালন করেনি।
এছাড়া ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে আবারও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স নিউজকে বলেন, ‘ইরানের পারমাণবিক বোমা থাকতে পারে না এবং আমরা আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আশা করছি।’
এর আগে, ইরানের রাজধানী তেহরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় ইসরায়েল। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা নূর নিউজের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে বিবিসি বলছে, তেহরানে নতুন করে ইসরায়েলি হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছে।
রয়টার্স জানিয়েছে, শহরের ওপর দিয়ে বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনীর গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে।
সংবাদ সংস্থা তাসনিমের খবরে আরও বলা হয়েছে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল হোসেইন সালামি এবং দুজন পারমাণবিক বিজ্ঞানীও নিহত হয়েছেন। নিহত দুই পরমাণু বিজ্ঞানী হলেন মোহাম্মদ মেদহি তেহরানচি ও ফেরেইদুন আব্বাসি।
এছাড়া রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজধানীর একটি আবাসিক ভবনে চালানো হামলায় নারী ও শিশুসহ বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টা আলি শামখানি হামলায় 'গুরুতর আহত' হয়েছেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম নূর নিউজ জানিয়েছে। তবে খামেনি সুস্থ আছেন, তাকে পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো হয়েছে।
বিভিন্ন ইরানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র আবুল ফজল শেকারচি বলেছেন, এ হামলার জন্য 'চরম মূল্য' দিতে হবে ইসরায়েলকে।
এদিকে, ইরানে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার শঙ্কায় ইসরায়েলে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। খবর বিবিসির
ইসরায়েল এ হামলাকে ‘রাইজিং লায়ন’ নাম দিয়েছে। ইরানের কমান্ডার এবং ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর পর পাল্টা হামলার আশঙ্কায় রাজ্য জুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তেহেরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা ঠেকাতে দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। ইরানের সংবাদমাধ্যম এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অঞ্চলে ইসরায়েলের হামলা চালানোর বিষয়টি জানানো হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু রেকর্ডকৃত এক ভিডিও বার্তায় বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের ইতিহাসের একটি নির্ণায়ক মুহূর্তে আছি।’
তিনি বলেন, ইসরায়েল একটি অভিযানে ইরানের পারমাণবিক বোমা নির্মাণে যুক্ত বিজ্ঞানী, তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি এবং নাতাঞ্জের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে এবং এই অভিযান আরও কয়েক দিন চলবে।
একজন জ্যেষ্ঠ ইরানি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা বৈঠক করছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইসরায়েল রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইরানের ওপর পূর্ব প্রতিরোধমূলক হামলার পর, ইসরায়েল ও এর বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা অবধারিত।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেন, ইসরায়েল এককভাবে এ হামলা চালিয়েছে। কারণ তারা (ইসরায়েল) মনে করে এই হামলা তাদের আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ছিল।
এক বিবৃতিতে রুবিও আরও বলেন, ‘আজ রাতেই ইসরায়েল একতরফাভাবে ইরানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা এই হামলায় জড়িত নই এবং আমাদের শীর্ষ অগ্রাধিকার হলো অঞ্চলজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।’
তিনি বলেন, ‘আমি স্পষ্ট করে জানাচ্ছি- ইরানের উচিত নয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করা।’