ঢাকা শুক্রবার, ০৮ আগস্ট, ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধবিরতিতে নতুন জটিলতা, ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনিশ্চিত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: আগস্ট ৮, ২০২৫, ০৬:৪১ এএম
ছবি : সংগৃহীত

ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে তিনি দেখা করতে প্রস্তুত, এমনকি পুতিন যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে আগে বৈঠক না-ও করেন। 

ট্রাম্প বলেন, পুতিনকে আগে জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করতে হবে না। তারা আমার সঙ্গে দেখা করতে চায় এবং আমি যা পারি করব রক্তপাত থামাতে।

এর ফলে নিউইয়র্ক পোস্টে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যের সরাসরি বিরোধ দেখা দেয়। ওই প্রতিবেদনে একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প কেবল তখনই পুতিনের সঙ্গে মিলিত হবেন যদি পুতিন আগে জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে রাজি হন— যা পুতিন আগেই নাকচ করেছেন।

পুতিন বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাতে নীতিগতভাবে আপত্তি করেন না, তবে ‘উপযুক্ত শর্ত’ তৈরি হতে হবে। তার দাবি, এ ধরনের শর্ত এখনো অনেক দূরে। 

একইদিনে তিনি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহইয়ানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় প্রস্তাব দেন, সম্ভাব্য মার্কিন-রাশিয়া বৈঠকের আয়োজক হতে পারেন আমিরাতের নেতারা।

এর আগে বুধবার ক্রেমলিনে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। ওয়াশিংটনের কিছু প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন প্রথমে ট্রাম্প এবং পরে জেলেনস্কির সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে রাজি হয়েছেন। 

কিন্তু ক্রেমলিন মুখপাত্র ইউরি উশাকভ এ দাবি নাকচ করে বলেন, আমরা প্রথমে ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিতে চাই। তিনপক্ষীয় বৈঠকের কথা শুধু মার্কিন পক্ষই উল্লেখ করেছে।

ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতারা বহুদিন ধরে বলে আসছেন, কিয়েভকে বাদ দিয়ে ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো আলোচনা হওয়া উচিত নয়। রাশিয়া বরং ‘হাশক্তির শীর্ষ সম্মেলন’চায়, যেখানে ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর দিয়ে সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সমঝোতা করতে পারবে।

বুধবার রাশিয়া সফর শেষে উইটকফ যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার পর ট্রাম্প জেলেনস্কিকে ফোন করেন। ন্যাটো প্রধান মার্ক রুটে ও কয়েকজন ইউরোপীয় নেতাও সেই ফোন কলে যুক্ত ছিলেন। 

জেলেনস্কি পরে বলেন, তিনি দিনটি ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা করে কাটাবেন এবং জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মেরৎস ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁর সঙ্গে অবস্থান সমন্বয় করেছেন।

জেলেনস্কি আবারও সরাসরি পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আহ্বান জানান, যেখানে মধ্যস্থতাকারী হতে পারেন ট্রাম্প বা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। কিন্তু পুতিন বরাবরই বলেছেন, প্রথমে নিম্নপর্যায়ের আলোচনায় সমঝোতা হতে হবে— যা তুরস্কে আয়োজিত একাধিক বৈঠকেও অগ্রগতি পায়নি।

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ট্রাম্প প্রথমবারের মতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে কড়া ভাষা ব্যবহার করে বেসামরিক লক্ষ্যে হামলাকে ‘ঘৃণ্য’ বলেছেন। এবং শুক্রবারের মধ্যে অগ্রগতি না হলে নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, নতুন নিষেধাজ্ঞা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

ট্রাম্পও বুধবার সন্ধ্যায় বলেছেন, বৈঠক ‘খুব শিগগিরই’ হতে পারে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সতর্ক করে বলেছেন, এখনো অনেক কিছু ঘটতে হবে।

যদি বৈঠকটি হয়, তবে সেটিই হবে ২০২১ সালে জেনেভায় জো বাইডেন-পুতিন সাক্ষাতের পর প্রথম মার্কিন-রাশিয়া বৈঠক।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান