মার্কিন সেনারা মঙ্গলবার এক মাদকবাহী নৌকায় হামলা চালিয়ে ১১ জনকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিহতদের মাদক সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে দাবি করেছেন, তারা ভেনেজুয়েলার বামপন্থি প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর নিয়ন্ত্রণাধীন কুখ্যাত গ্যাং ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’র সদস্য। সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ খবর জানানো হয়েছে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছেন, যেখানে একটি নৌকায় থাকা লোকজনকে দেখা যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে সেটি বিস্ফোরণে আগুনের গোলায় পরিণত হয়।
এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভেনেজুয়েলার মধ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। কয়েক দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্র লাতিন আমেরিকায় মাদকবিরোধী যুদ্ধের অংশ হিসেবে আটটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প জানান, মার্কিন বাহিনী একটি নৌকাকে গুলি করে ধ্বংস করেছে, নৌকাটি প্রচুর মাদক বহন করছিল। পরবর্তী সময়ে নিজের ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে বিস্তারিত বিবৃতি দেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, ‘আজ সকালে আমার নির্দেশে মার্কিন সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক জলসীমায় একটি নৌকায় হামলা চালিয়েছে। এতে ১১ জন মাদক সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে। তারা অবৈধ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে আনার চেষ্টা করছিল।’ এতে মার্কিন বাহিনীর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলেও জানান তিনি।
ট্রাম্প অভিযোগ করেন, ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোর প্রত্যক্ষ নির্দেশে ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ গ্যাং কার্যক্রম চালাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র এ গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ‘এটি যেন সবাইকে সতর্কবার্তা দেয়—যারা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক আনার কথা ভাবছে, সাবধান!’—বলেন ট্রাম্প।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র তার পূর্ণ শক্তি দিয়ে মাদকচক্র গুঁড়িয়ে দেবে। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প খুব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যেখানেই হোক, যেকোনোভাবে হোক, যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বশক্তি দিয়ে এসব মাদকচক্রকে নির্মূল করবে।’ তিনি দাবি করেছেন, ধ্বংস হওয়া নৌকাটি ভেনেজুয়েলা থেকে ছেড়ে এসেছিল।
অন্যদিকে, মাদুরো এই মার্কিন মোতায়েনকে ভেনেজুয়েলার জন্য সরাসরি সামরিক হুমকি হিসেবে উল্লেখ করে সতর্কতা জারি করেছেন। এরই মধ্যে তিনি দেশে ‘সর্বোচ্চ প্রস্তুতি’ও ঘোষণা দিয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাতে জানা গেছে, বর্তমানে লাতিন আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের আটটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন রয়েছে—তিনটি অ্যামফিবিয়াস অ্যাসল্ট শিপ, দুটি ডেস্ট্রয়ার, একটি ক্রুজার, একটি লিটারাল কমব্যাট শিপ ক্যারিবীয় সাগরে এবং একটি ডেস্ট্রয়ার পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থান করছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই অভিযান ভেনেজুয়েলার ওপর চাপ বাড়ানোর কৌশল। এরই মধ্যে ওয়াশিংটন মাদুরোকে গ্রেপ্তারে ৫০ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে। যদিও ট্রাম্পের আগের মেয়াদে আরোপিত সর্বোচ্চ চাপের নীতি মাদুরোকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়েছে। এ নীতিতে তেল নিষেধাজ্ঞাও ছিল।
গত সপ্তাহে কারাকাস জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়ে ক্যারিবীয় সাগর থেকে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে মাদুরো হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘জাতীয় ভূখণ্ড রক্ষায় সশস্ত্র লড়াইয়ের জন্য ভেনেজুয়েলা প্রস্তুত।’