আমেরিকাজুড়ে অনুষ্ঠিত বিশাল ‘নো কিংস’ বিক্ষোভের প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্মিত ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওতে তাকে যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে বিক্ষোভকারীদের ওপর মল বা কাদা ছিটাতে দেখা গেছে।
রোববার (১৯ অক্টোবর) ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প ১৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি পোস্ট করেন।
তাতে দেখা যায়, ‘কিং ট্রাম্প’ লেখা একটি যুদ্ধবিমান নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারের আকাশে উড়ছে। বিমানের নিচে দাঁড়ানো জনতার ওপর কাদা ছিটিয়ে দিচ্ছে সেটি। জনতার মধ্যে আছেন ট্রাম্পের কট্টর সমালোচক, জনপ্রিয় প্রভাবশালী হ্যারি সিসনও।
ভিডিওটি প্রকাশের একদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ‘নো কিংস’ শিরোনামে ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক ও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে শুরু করে মধ্য-পশ্চিমের ছোট শহর পর্যন্ত ৫০টি রাজ্যজুড়ে আয়োজিত এই বিক্ষোভে আয়োজকরা দাবি করেছেন, অন্তত ৭০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন।
তারা অভিযোগ করেছেন, ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাহী ক্ষমতার অপব্যবহার করছে এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুর্বল করে তুলছে। তবে রিপাবলিকান দল এই বিক্ষোভকে ‘হেট আমেরিকা’ সমাবেশ হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে।
ট্রাম্পের পোস্ট করা ভিডিওটি প্রকাশের পরই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। অনেকে একে ‘নো কিংস’ আন্দোলনকে ব্যঙ্গ করার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘হয়তো এআই এতটা খারাপ নয়।’ আরেকজনের মন্তব্য, ‘গণতন্ত্রের জন্য এ এক অদ্ভুত উদযাপন!’
ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজারো বিক্ষোভকারী ক্যাপিটাল ভবনের সামনে জড়ো হয়ে ‘গণতন্ত্র দেখতে এমনই’, ‘গণতন্ত্র রক্ষা করুন’ এবং ‘আইসিই বাতিল করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে স্লোগান দেন।
একই দিনে ট্রাম্প আরও একটি এআই-নির্মিত ছবি শেয়ার করেন, যেখানে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে রাজা-রানির পোশাকে দেখা যায়। ছবির নিচে লেখা ছিল, ‘কোন রাজা নেই: তোমাদের দল প্রাইমারি ছাড়াই কমলাকে মুকুট পরিয়েছে, আর ট্রাম্পকে ব্যালট থেকে মুছে দিতে চেয়েছে, এটা গণতন্ত্র নয়, এটা কর্তৃত্ববাদ।’
এদিকে, ট্রাম্পের রাজনৈতিক সংগঠন টিম ট্রাম্পের অফিসিয়াল ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টেও আরেকটি এআই-নির্মিত ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে, যেখানে তাকে হোয়াইট হাউসের বাইরে রাজার পোশাকে দেখা যায়। আন্দ্রেয়া বোসেলির সংগীতে তৈরি ওই ভিডিওটি এখন পর্যন্ত ৪০ লাখেরও বেশি বার দেখা হয়েছে।
এক নেটিজেন লিখেছেন, “ট্রাম্পের রসবোধ অসাধারণ, ‘নো কিংস ডে’ তিনি বেশ উপভোগ করছেন।” তবে কেউ কেউ বিদ্রূপ করে বলেছেন, “রাজার পোশাক পরা প্রেসিডেন্টের ভিডিওর চেয়ে ‘সীমিত সরকার’ বোঝানোর আর ভালো উদাহরণ নেই।”
আরেকটি পোস্টে ‘শুভ কিং ট্রাম্প দিবস’ ক্যাপশনসহ ট্রাম্পকে রাজার পোশাকে তরবারি হাতে সোনার রথে চড়তে দেখা গেছে। এ ছাড়া সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বহু এআই-নির্মিত ছবি, যেখানে ট্রাম্প ও তার স্ত্রী মেলানিয়াকে রাজকীয় দম্পতি হিসেবে দেখানো হয়েছে মুকুট পরে, মখমলের পোশাকে, সোনার সিংহাসনে বসে।
‘নো কিংস’ আন্দোলনটি মূলত একটি তৃণমূল পর্যায়ের গণতান্ত্রিক উদ্যোগ। অংশগ্রহণকারীরা বলেন, এটি ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থার প্রতিবাদে শুরু হয়েছে। তাদের অভিযোগ, ট্রাম্প প্রশাসন গণতন্ত্রকে রাজতন্ত্রের রূপ দিতে চাইছে।
যদিও বিক্ষোভের আগেই ফক্স বিজনেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি রাজা নই। আমাকে ভুলভাবে রাজা হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।’
ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রিপাবলিকান নেতারা এই আন্দোলনকে ‘অ্যান্টিফা-ঘেঁষা বামপন্থি প্রদর্শনী’ বলে সমালোচনা করেছেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই এআই-নির্মিত ভিডিওগুলো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন এক ডিজিটাল ধারার সূচনা করেছে, যেখানে ‘গণতন্ত্র বনাম রাজনীতি’র লড়াই এখন কেবল রাস্তায় নয়, ভার্চুয়াল জগতেও সমান তীব্রতায় চলছে।