বুধবার, ০৫ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম

ইতিহাস গড়ে নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম মেয়র হলেন মামদানি

বিশ্ব ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২৫, ০৯:৩৯ এএম

জোহরান মামদানি। ছবি- সংগৃহীত

জোহরান মামদানি। ছবি- সংগৃহীত

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ইতিহাস গড়েছেন ৩৪ বছর বয়সি প্রগতিশীল ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট জোহরান মামদানি। এনবিসি নিউজের পূর্বাভাস অনুযায়ী, তিনি শহরের ১১১তম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এই জয়ে নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন।

এই জয়ে যেমন প্রগতিশীল শিবিরে আনন্দের জোয়ার, তেমনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, রিপাবলিকান নেতারা এবং কিছু মধ্যপন্থি ডেমোক্র্যাট। ট্রাম্প এই ফলকে ‘আমেরিকার রাজনীতির বামপন্থি বিপর্যয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

মাত্র এক বছর আগে রাজনীতিতে সক্রিয় হন জোহরান মামদানি। তুলনামূলক অখ্যাত এক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের নেতৃত্বে পৌঁছানো—এটি এক অনন্য রাজনৈতিক উত্থান।

মঙ্গলবারের নির্বাচনে মামদানি সহজ ব্যবধানে পরাজিত করেছেন নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে। কুয়োমো ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে পরাজয়ের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন। বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস সেপ্টেম্বরে নির্বাচনি লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়ে কুয়োমোকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিলেন।

মামদানির এই জয়ে তার রাজনৈতিক দক্ষতার পাশাপাশি তরুণ ভোটারদের সংগঠিত করার ক্ষমতাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে তিনি নিউইয়র্কের প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারের প্রার্থীকেও দু’বার পরাজিত করেছেন একবার প্রাইমারিতে, একবার মূল নির্বাচনে।

নিউইয়র্ক সিটি ইলেকশন বোর্ড জানিয়েছে, এবারের নির্বাচনে ১৭ লাখেরও বেশি ভোটার ভোট দিয়েছেন যা গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন আগাম ভোট দিয়েছেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে শহরের ইতিহাসে সর্বাধিক আগাম ভোট।

ভোটগ্রহণ হয় স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা)। এরপরই শুরু হয় ভোট গণনা এবং রাত গড়ানোর আগেই মামদানির জয় নিশ্চিত হয়।

কুইন্সে নির্বাচনের আগের রাতে হাজারো সমর্থকের সামনে এক আবেগঘন ভাষণে মামদানি বলেন, ‘এমন দিন যেন আগে থেকেই লেখা ছিল। কিন্তু যখন প্রচার শুরু করি, তখন কোনো টেলিভিশন ক্যামেরা ছিল না, কোনো বড় নেতা পাশে ছিল না। ফেব্রুয়ারিতেও আমাদের সমর্থন ছিল মাত্র এক শতাংশ। আজ সেই ‘অন্য কেউ’ প্রার্থীর জায়গায় দাঁড়িয়ে আমি বলছি—এটা নিউইয়র্কের জনগণের জয়।’

তার এই বক্তৃতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় এবং লাখো মানুষ তা শেয়ার করে। মামদানির নির্বাচনি প্রচারের মূল বার্তা ছিল ‘জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো ও শহরকে সবার জন্য বাসযোগ্য করা।’

তার ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে :

  • ভাড়া নিয়ন্ত্রিত ফ্ল্যাটে ভাড়া বৃদ্ধিতে স্থগিতাদেশ
  • সার্বজনীন শিশুসেবা চালু
  • বিনা মূল্যে গণপরিবহন ব্যবস্থা
  • সিটি করপোরেশন পরিচালিত মুদি দোকান

এই নীতিগুলো তরুণ, শ্রমজীবী ও নিম্নআয়ের নাগরিকদের মধ্যে গভীর সাড়া ফেলে। বিশেষ করে আবাসন ও জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটে জর্জরিত নিউইয়র্কবাসীর কাছে তিনি হয়ে ওঠেন পরিবর্তনের প্রতীক।

এনবিসি নিউজের এক্সিট পোল অনুযায়ী, মামদানি নিউইয়র্কের প্রায় সব জাতিগত গোষ্ঠীর কাছ থেকেই ভোট পেয়েছেন। শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো, এশীয় ও মুসলিম—সব সম্প্রদায়ের ভোটারদের বড় অংশ তার প্রতি আস্থা রাখেন। ৪৫ বছরের নিচের ভোটারদের মধ্যে তিনি কুয়োমোর চেয়ে ৪৩ পয়েন্টে এগিয়ে, যদিও প্রবীণ ভোটারদের মধ্যে কুয়োমো ১০ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

শিক্ষাগত পটভূমি ও সামাজিক অবস্থানও ভোটের ফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নতুন অভিবাসীরা মূলত মামদানিকে ভোট দিয়েছেন, আর পুরোনো প্রজন্মের ভোটারদের বড় অংশ কুয়োমোর পাশে ছিলেন।

নির্বাচনজুড়ে মামদানির ফিলিস্তিনপন্থি অবস্থান এবং তার মুসলিম পরিচয় ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তার বিরুদ্ধে ইসরায়েলপন্থি লবি তীব্র প্রচার চালায়। অনেকেই তাকে ‘চরমপন্থি’ বলে আখ্যা দেন। তবে এসব প্রচার শেষ পর্যন্ত উল্টো ফল বয়ে আনে। কারণ সাধারণ ভোটাররা তার সামাজিক ন্যায়বিচারের বার্তাকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।

এক্সিট পোল দেখায়, ইহুদি ভোটারদের মধ্যে কুয়োমো ৬০ শতাংশ ভোট পান, আর মামদানি ৩১ শতাংশ। তবে মুসলিম, কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো ও এশীয় ভোটারদের বড় অংশ মামদানিকেই বেছে নেন।

নির্বাচনের শেষ সপ্তাহে কুয়োমো ও মামদানির মধ্যে তীব্র বাকযুদ্ধ হয়। কুয়োমো অভিযোগ করেন, মামদানি ‘নিউইয়র্ককে বিভক্ত করছেন।’ জবাবে মামদানি বলেন, কুয়োমো ‘ট্রাম্পের কাঠপুতলি।’

নির্বাচনের আগের রাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় কুয়োমোকে প্রকাশ্যে সমর্থন দেন। তিনি লেখেন, ‘স্লিওয়াকে ভোট দেওয়া মানে মামদানিকে ভোট দেওয়া।’ এনবিসি এক্সিট পোল অনুযায়ী, রিপাবলিকান ভোটারদের ৬১% কুয়োমোর পক্ষে ভোট দেন, আর স্লিওয়া পান মাত্র ৩৫%।

নির্বাচনের পর সমর্থকদের সামনে মামদানি বলেন, ‘তারা এই নির্বাচনে আমার ধর্মকে ইস্যু করতে চেয়েছিল। তারা চেয়েছিল এটা মুসলিমবিরোধী এক গণভোটে পরিণত হোক। কিন্তু আমি সেই লড়াইকে ঘুরিয়ে দিয়েছি মানুষের জীবনের বাস্তবতা ভাড়া, আয়, খাদ্য এবং ন্যায়বিচারের লড়াইয়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আজ নিউইয়র্ক দেখিয়ে দিল এই শহর কোনো বিভাজনের নয়, এটি একাত্মতার শহর।’

জোহরান মামদানির এই জয় শুধু নিউইয়র্ক নয়, পুরো যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তার সাফল্য ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল ধারাকে জাতীয় রাজনীতিতে আরও দৃঢ় করবে। একজন মুসলিম অভিবাসীর সন্তান হিসেবে নিউইয়র্কের মেয়র পদে নির্বাচিত হওয়া এটি যুক্তরাষ্ট্রের বহুত্ববাদ ও অন্তর্ভুক্তির মূল্যবোধের প্রতীক।

Link copied!