শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০৫:৫৫ এএম

কড়াইল বস্তি এখন বিএনপি নেতাদের কব্জায়

মাইনুল হক ভূঁইয়া

প্রকাশিত: মে ৩০, ২০২৫, ০৫:৫৫ এএম

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে নতুন করে চলছে আধিপত্যের লড়াই। এ নিয়ে সংঘর্ষ ও অস্ত্রের ঝনঝনানির মতো উদ্বেগজনক ঘটনাও ঘটছে। তুচ্ছ ঘটনায় গত জানুয়ারিতে অস্ত্রের মহড়া চলে। কুপিয়ে আহত করা হয় একজনকে। মামলা হয় বনানী থানায়। আবার পাল্টা মামলা গ্রহণের জন্য থানার সামনে বিক্ষোভের ঘটনাও ঘটে। 

সব মিলিয়ে কড়াইল বস্তি ক্রমান্বয়ে ভয়ংকর হয়ে উঠছে। এমনিতেও গুলশান, বনানী ও মহাখালীর মতো অভিজাত এলাকার মাঝখানে গড়ে ওঠা বস্তিটি বরাবরই অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য। গুলশান থানাধীন এই কড়াইল বস্তির নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অপরাধীদের আশ্রয়স্থল এবং দখল ও পাল্টা দখলের বদনাম।

শুধু এ কারণেই বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পরিকল্পিত গুলশান-বনানী-বারিধারা লেক উন্নয়ন প্রকল্প থমকে দাঁড়িয়েছে। এখনো শুরু করা যায়নি এই প্রকল্পের কাজ। 

লেক উন্নয়নের দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে রূপালী বাংলাদেশে প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রকল্প বাস্তবায়নের তোড়জোড় শুরু করে সংস্থাটি। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ায় বস্তি। সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সেনাবাহিনী। এতে করে গড়ে ওঠা বস্তিতে রাজউকের ৮২ দশমিক ৫৬ একর জমি উদ্ধার হবে এবং লেক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। কিন্তু এরপর আর এ উদ্যোগ আগায়নি।
 
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগস্ট অভ্যুত্থানের আগে কড়াইল বস্তিতে ছিল স্থানীয় আওয়ামী নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের একচ্ছত্র আধিপত্য। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিন্ডিকেট ভেঙে গেলে আওয়ামী আধিপত্যবাদের পতন ঘটে। তারা প্রায় সবাই পালিয়ে গেলেও কেউ কেউ বস্তিতে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজে নেয়। তছনছ হয়ে যাওয়া সেই সিন্ডিকেটের হাল ধরে ভোল পাল্টানো কিছু আওয়ামী লীগার, বিএনপিসহ কিছু সুবিধাবাদী। এখানেই শুরু নতুন আধিপত্যের লড়াই। 

এ লড়াইয়ে জিততে অবলম্বন করা হয় এক ধরনের কৌশল। শুরু হয় সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি। রাত্রিকালীন নিরাপত্তা ও বর্জ্য অপসারণের নামে চাঁদা তোলার হিড়িক পড়ে। দখল করে নেওয়া হয় পলাতক আওয়ামী দোসরদের ঘর-বাড়ি। নব্য সিন্ডিকেটের বেপরোয়া দৌরাত্ম্যে বস্তিতে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। এর জেরে সম্প্রতি হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেটের সদস্য ছাড়াও অনেকের কাছেই অবৈধ অস্ত্র থাকতে পারে। ফলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কিছুদিন আগে তুচ্ছ কারণে গুলি চালানোর ঘটনা এ আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। 

ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, নামে কড়াইল বস্তি হলেও এর অভ্যন্তরে নানা নামের বস্তির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। মূল দুটি ইউনিটে বউবাজার ও জামাইবাজারের পাশাপাশি ইদানীং বিএনপি বস্তি নামেও একটি বস্তি সগৌরবে মাথা উঁচু করতে শুরু করেছে। এসব বস্তি ডিএনসিসির ১৯ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ডের আওতাধীন। তবে বেশির ভাগ বস্তি পড়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। ৯৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা কমবেশি ৬০ হাজার ঘর রয়েছে। এসব ঘরে রয়েছে কম করে হলেও ৪০ হাজার পরিবারের বসবাস। 

রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, স্থানীয় বিএনপি নেতা খররুম ও মো. রাজা কড়াইলের বেলতলা, এরশাদনগর, আদর্শনগর, বেদে বস্তি ও ওয়ালভাঙ্গা বস্তি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। পানি ও বিদ্যুৎ বিল আদায় করছেন খররুমের নিয়োগকৃত লোকজন। বেলতলা ইউনিট স্বেচ্ছাসেবক লীগের অন্যতম সহ-সভাপতি কাজী রফিকুল ইসলামও ওই সিন্ডিকেটের একজন সদস্য। আগস্ট অভ্যুত্থানের পর বিএনপিকর্মী পরিচয়ে তিনি সদর্পে আবির্ভূত হয়েছেন। 

এই এলাকা এখন নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক খান মো. সবুজ। শুরুতে খররুম-সবুজ একই গ্রুপে একাত্ম হয়ে থাকলেও মাস তিনেক ধরে এই দুই গ্রুপের মধ্যে শুরু হয়েছে আধিপত্যের লড়াই। এরই ধারাবাহিকতায় ২২ জানুয়ারি দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। খররুমের ভাই মো. টিপু ও তার বন্ধু সোহেল রানাকে কুপিয়ে আহত করা হয়।


 
এ ঘটনায় আহত বেলতলা বস্তির বাসিন্দা সোহেল রানা বাদী হয়ে পরদিন ২৩ জানুয়ারি বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামি করা হয় সবুজ, ইসরাফিল, মোমিন, পারভেজ, রব মিয়া, বাবু, কালন, মণ্ডল হোসেন ও শাহজালালকে। আশ্চর্যের বিষয়, এই মামলার কারণে প্রতিবাদ জানাতে ২৬ জানুয়ারি রাতে আসামিপক্ষের অন্তত ৫০ জন বনানী থানার সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। তারা পাল্টা মামলা গ্রহণের জন্য থানা কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগের চেষ্টা করে। 

কড়াইল বস্তির আশপাশের বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বস্তির অটোরিকশার টোকেন বাণিজ্য করতেন বনানী থানা আওয়ামী লীগ নেতা ইসরাফিল। একসময়ের ‘বস্তির রাজা’ হিসেবে পরিচিত জুনায়েদের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। জুনায়েদ এখন পলাতক। সেই সুযোগে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসেবে জাহির করে ইসরাফিল রাতারাতি ‘বস্তির রাজা’ হয়ে যেতে চাইছেন। 

এ ছাড়া এই বস্তির দখল ও বাণিজ্য সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য মোমিন, সাগর, নাসির ও বাবু মহাখালী যুবলীগ নেতা সুন্দরী সোহেলের কর্মী ছিলেন। ৫ আগস্টের পর তারাও বিএনপি ট্যাগ লাগিয়ে ফেলেন। সবচেয়ে ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে, বস্তিটি ঘিরে ঘরবাড়ি বেচাকেনার হিড়িক পড়েছে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের পুরো সময়ে সিন্ডিকেট সদস্যরা রীতিমতো স্ট্যাম্পে লিখিত দিয়ে বেচাকেনা করেছে। 

সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা জামান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে নেই। তবে আমার সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো, পার্টির পরিচয়ে কেউ যদি কোনো অপরাধ করে বেড়ায়, তারা কিছুতেই ছাড় পাবে না। 

তিনি আরও বলেন, আপনাদের হাতে এ ধরনের ঘটনার তথ্যাদি থাকলে লিখে দেন, আমরা দলীয়ভাবে আপনাদের পাশে থাকব।

অন্যদিকে এ সম্পর্কে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল সরকার রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, মামলার বাদীপক্ষ, যারা আহত বলে দাবি করছেনÑ তারা মেডিকেল রিপোর্ট দিতে পারছেন না, তাহলে এ মামলার চার্জশিট অনেক আগেই হয়ে যেত। 

তিনি দাবি করেন, পুলিশের কারণে বস্তিতে তৎপর সব গ্রুপই এখন মুখ লুকিয়েছে। তবে গ্যাস, পানি ও বিদুৎ লাইন নিয়ে কিছু উত্তেজনা আছে। এই অবৈধ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হলে বস্তির সাংঘর্ষিক অবস্থা প্রশমিত হবে।
 

Link copied!