বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) বিশাল জায়গা লিজ নিয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট এবং হোটেল ওয়ান্ডার ইন ঘিরে দশ বছর ধরে লুটপাটের মহোৎসব চলছে। বেবিচক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের নামে আশকোনা হজ ক্যাম্পের সামনে ৩০ হাজার বর্গফুটের চারতলা এই মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট এবং শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে গোলচত্বরে ‘হোটেল ওয়ান্ডার ইন’ গড়ে উঠেছে। প্রয়াত ও জীবিত ৪ মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা ‘পেঙ্গুইন’ নামের একটি কাগুজে ডেভেলপার কোম্পানি গড়ে তুলে স্থাপনা দুটি নির্মাণ করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জিনের বাদশা হিসেবে পরিচিত স্বাধীনতাবিরোধী এক ব্যক্তির সার্বিক তত্ত্বাবধানে ৪ জনের এই লুটেরা সিন্ডিকেটের জন্ম। জিনের বাদশার মৃত্যুর পর নেতৃত্বে আসে তার ছেলে। অন্যদিকে জেপি পরিচয়ধারী এক নেতার মৃত্যুর পর তার ছেলে এখন নেতৃত্বে। তবে পুরো সিন্ডিকেটের নেপথ্যে রয়েছেন বিএনপির এক নেতা।
সিন্ডিকেটভিত্তিক এই লুটপাটে বেবিচক মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। দুই প্রতিষ্ঠান ঘিরে কোটি কোটি টাকা লুটপাট হয়ে গেলেও বেবিচক প্রাতিষ্ঠানিক কমান্ডে কানাকড়িও জমা হচ্ছে না। আশ্চর্যের বিষয়, দশ বছর ধরে চললেও এই দুই প্রতিষ্ঠানের লাগাম টেনে ধরছে না কেউই। অথচ প্রতিষ্ঠান দুটির রাজউকের নির্মাণ অনুমোদন নেই। বেবিচকের সম্পত্তি বিভাগও এ বিষয়ে নির্বিকার। লিজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো সিন্ডিকেটের দখলেই রয়েছে বেবিচকের বিশাল জায়গায় গড়ে ওঠা দুই স্থাপনা।
রূপালী বাংলাদেশের অনুসন্ধানে দেখা যায়, জিনের বাদশাখ্যাত বেবিচকের এক ঠিকাদার যিনি শাহজালাল বিমানবন্দরে ‘কনক’ নামের একটি দোকান ভাড়া নিয়ে বেবিচক কর্তৃপক্ষের কোটি কোটি টাকা মেরে দিয়ে লাপাত্তা, পরে বেবিচক কর্তৃপক্ষ ওই দোকানে সিলগালা করে দেয়, এখনো বেবিচকের সেই দেনা পরিশোধ হয়নি। এই জিনের বাদশা, ৩ প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা এবং বেবিচকের মুক্তিযোদ্ধা প্রাতিষ্ঠাতিক ইউনিটের কয়েক শীর্ষ নেতা সম্পত্তি বিভাগের ডিডি মরহুম ঈসমাইল হোসেন তালুকদার, এডি মরহুম শহিদুল ইসলাম, সাবেক কমান্ডার মরহুম হাবিবুল্লাহ খান, মরহুম আজিজুর রহমান মোল্লা, সদস্য সচিব মরহুম শেরজন আলি, যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন এবং নির্বাহী সদস্য আব্দুল সালেক হাওলাদারের সমন্বিত সিন্ডিকেটের নজরে পড়ে হজ ক্যাম্পের সামনে হাতিশুরের বেবিচকের বিশাল জায়গার ওপর।
এই চক্র মিলে বেবিচকের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটের নামে বেবিচক কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি শাখায় কর্মরত কয়েক কর্মকর্তাকে কমিটিতে ঠাঁই দিয়ে সম্পত্তি শাখা থেকে থেকে ৯ হাজার বর্গফুট চার তলা পর্যন্ত ৩৬ হাজার বর্গফুটের বিশাল জায়গা ৯৯ বছরের জন্য ইজারা নিয়ে ৪ তলা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট গড়ে তুলে। কাগুজে ডেভেলপার কোম্পানি ‘পেঙ্গুইন’ এটি নির্মাণ করে। কিন্তু রাজউক থেকে কোনো নকশা অনুমোদন কিংবা ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি। এরমধ্যে ডেভেলপার ভোগ করছে ২৬ হাজার বর্গফুট। আর ৯ হাজার বর্গফুট ভোগ করছে কথিত মুক্তিযোদ্ধারা।
এ ভবনের নিচতলার পুরোটা পার্কিংয়ের জন্য বরাদ্দ হলেও ওই পার্কিংয়ের জায়গায় কথিত ডেভেলপার কোম্পানি পেঙ্গুইন প্রায় ৫০-৬০টি দোকান গড়ে তুলে নিজেরাই ভাড়া দিয়ে লুটপাট করে খাচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিট কানাকড়িও পাচ্ছে না। ২য় তলা থেকে ৩য় তলা ৯০টি দোকান, ৪র্থ তলা পুরোটাই আবাসিক হোটেল গড়ে তুলে মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটকে ভাড়া দিচ্ছে প্রতি মাসে মাত্র ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ৪র্থ তলা তারা পুরোটাই আবাসিক হোটেল গড়ে তুলেছে। আবার ২য় তলায় ৯টি এবং ৩য় তলায় ৪টি দোকানও ডেভেলপাররা বরাদ্দ নিয়েছে। মার্কেটের একদম পূর্বপাশে জসিম ডাক্তরের ফার্মেসির পাশে বাথরুম দখল করেও দোকান গড়ে তোলা হয়েছে।
ভবনের উত্তর-পশ্চিম পাশে মূল ভবনের জায়গার বাইরে মাছ বাজার-কাঁচাবাজার, ৫ হাজার বর্গফুট জায়গা দখল করে মেসার্স এমই এন্টারপ্রাইসের মালিক আবুল হোসেনকে ইজারা দিয়ে ৮০টি দোকান গড়ে তুলেছে। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটে মাসে ভাড়া দিচ্ছে মাসে মাত্র ৫০ হাজার। আর ওরা প্রতি দোকান ৪০ হাজার টাকা করে ভাড়া দিয়ে মাসে ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রবেশমুখে বেবিচক সম্পত্তি শাখা থেকে ৫৭৭৪ এসএফটি ২য় তলা মিলে ১১ হাজার বর্গফুটের ওপরে জায়গা ইজারা নিয়ে হোটেল ওয়ান্ডার-ইন এর চারপাশে দোকানপাট গড়ে তুলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড ইউনিটকে মাসে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ওরা মাসে কামিয়ে নিচ্ছে ৫০-৬০ লাখ টাকা। গত ১০ বছর ধরে এ লুটপাট চলছে।