নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটতে যাচ্ছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। আগামী জুলাই মাসে দেশে ফিরছেন তারেক রজমান। দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশের মানুষের কাছে ফিরছেন তিনি। তার থাকার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে গুলশান-২ এর অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর অত্যাধুনিক ডুপ্লেক্স বাড়িটি। ইতিমধ্যে বাড়ির সংস্কারসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বিএনপি সূত্র।
দেড় বিঘা জমির ওপর নির্মিত ছায়াঘেরা এই বাড়িটি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মালিকানাধীন, যা সম্প্রতি তারেক রহমানের নামে নামজারি করা হয়।
রাজধানীর গুলশান অ্যাভিনিউর ১৯৬ নম্বর প্লটে অবস্থিত খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দপ্রাপ্ত বাড়িটির কাগজপত্র তার হাতে তুলে দেওয়া হয় গত ৪ জুন। ওইদিন রাত ৯টার দিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বেগম জিয়ার হাতে এই কাগজ হস্তান্তর করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু। বেগম জিয়ার নামে বরাদ্দ হলেও এখন নামজারি করা হয়েছে তারেক রহমানের নামে। বাড়িটি আগে ভাড়ায় ব্যবহার করত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ।
জানা যায়, ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে এই বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়। গুলশানে ৮৯ নাম্বার সড়কে ১ নাম্বার বাড়িটিতে থাকেন খালেদা জিয়া। তার বর্তমান বাসভবন ‘ফিরোজা’র পাশেই অবস্থিত তারেক রহমানের জন্য প্রস্তুত বাড়িটি। ঢাকা সেনানিবাসের ভেতরও আরেকটি বাড়ি খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সেনানিবাসে মইনুল রোডের সেই বাড়িটি বিগত আওয়ামী লীগ সরকার বরাদ্দ বাতিল করে বেগম খালেদা জিয়াকে একরকম টেনেহিঁচড়ে বের করে দেয়। ২০২৩ সালে লন্ডনে এক সভায় শেখ হাসিনা বেশ দাম্ভিকতার সাথে বলেছিলেন, যেদিন সুযোগ পাব সেদিন ক্যান্টনমেন্ট থেকে বরে করে দেব খালেদা জিয়াকে।
বিএনপির একাধিক নেতা নিশ্চিত করেছেন, নির্বাচন ঘনিয়ে এলে এবং তার তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও বলেছেন দেশে ফিরতে তারেক রহমানের আর কোনো আইনি বাধা নেই। এরই মধ্যে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। তারেক রহমানের দেশে ফেরা এখন সময়ের অপেক্ষামাত্র। তারেক রহমানের সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানও লন্ডনে ফেরার আগে গুলশান-২-এর অ্যাভিনিউ রোডের ১৯৬ নম্বর ডুপ্লেক্স বাড়িটি ঘুরে দেখে গেছেন। যেখানে থাকবে তাদের পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৬ মাস আগে বাড়িটি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ ছেড়ে দিয়েছে। এরপর এটি তারেক রহমানের থাকার উপযোগী করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হয়েছে। বাড়িটি এখন পুরোপুরি প্রস্তুত বলেই তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। ১৯৬ নম্বরের শুভ্র সাদা রঙের দোতলা ছায়াঘেরা বাড়িটির বাইরে বেশ পরিপাটি।
তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাড়ির ভেতরটাও অত্যন্ত নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে এই সাজানোর কাজটি চলে, যা এখন পুরোপুরি শেষ। একবারে বসবাসের উপযোগী করে সাজানো হয়েছে বাড়িটি। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাড়ির বাউন্ডারির ওপরের অংশ বাড়তি লোহার অংশ ব্যবহার করা হয়েছে।
জানা গেছে, আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন এ ভবনে রয়েছে তিনটি শয়নকক্ষ, একটি বিশাল ড্রয়িং ও লিভিং রুম এবং একটি সুইমিং পুল।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে দেশে ফিরবেন ১৭ বছর ধরে দেশের বাইরে নির্বাসনে থাকা বিএনপির আগামী দিনের এই কাণ্ডারি।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়ছর আহমেদ রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, খুই শিগগিরই দেশে ফিরবেন আমাদের নেতা তারেক রহমান। সেই উপলক্ষে আমাদের প্রস্তুতি থাকবে। ১৭ বছর যুক্তরাজ্যে ছিলেন তিনি। দেশের মানুষকে প্রচণ্ড ভালোবাসেন তারেক রহমান। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা মিথ্যে মামলা দিয়ে তাকে দেশে যেতে দেয়নি। এখন দেশে যাবেন। দিন-তারিখ এখন বলতে পারব না। তবে খুব শিগগিরই তিনি দেশে ফিরবেন। লন্ডনে বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানাতে প্রস্তুত যুক্তরাজ্য বিএনপির নেতৃবৃন্দ।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। তবে তার দেশে আসার বিষয়ে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন । যখন আসবে গণমাধ্যম বিষয়টি জানবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন শীর্ষ নেতা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, যেদিন তারেক রহমান দেশে ফিরবেন, সেদিন তাকে সংবর্ধনা জানাতে বিমানবন্দরে জড়ো হবেন লাখ লাখ নেতাকর্মী। এমন অবস্থায় বিএনপির নেতাকর্মীরা এখন তারেক রহমানের দেশে ফেরার প্রতীক্ষায় রয়েছেন। তার ফেরা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে যথেষ্ট কৌতূহলও আছে। সবার প্রত্যাশা, তারেক রহমান শিগগিরই দেশে ফিরছেন। গত কয়েকদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা চলছে যে, তিনি আগামী ৫ আগস্টের আগেই দেশে ফিরতে পারেন।
দলীয় সূত্রগুলোও বলছে, সবকিছু ঠিক থাকলে ৫ আগস্টের আগেই দেশে পা রাখতে পারেন বিএনপির এই ভবিষ্যৎ কাণ্ডারি। তবে তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনের আগেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান। নির্বাচনের তারিখ সুনির্দিষ্ট হলে তার দেশে ফেরার বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সম্প্রতি জানিয়েছেন, তারেক রহমানের দেশে ফেরার পথে আর কোনো আইনি বা প্রশাসনিক বাধা নেই।
ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরের বছর ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে ১১ সেপ্টেম্বর চিকিৎসার জন্য সপরিবারে লন্ডন যান তিনি। তখন থেকেই লন্ডনে অবস্থান করছেন তারেক রহমান। লন্ডনে থাকাকালে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মা খালেদা জিয়া দুদকের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন ‘সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান’ তারেক রহমান। এরপর সেখান থেকেই দল পরিচালনা করছেন তিনি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তারেক রহমানের অনুপস্থিতিতে পাঁচ মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়। দায়ের করা হয় প্রায় শতাধিক মামলা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতের মাধ্যমে একে একে সাজাপ্রাপ্ত সব মামলায় খালাস পান তিনি। একই প্রক্রিয়ায় অন্য সব মামলা থেকেও মুক্ত হন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা নেই।
আপনার মতামত লিখুন :