আলহামদুলিল্লাহ, আমি খুব ভালো আছি। পড়াশোনা এবং কাজকর্ম দুটোই বেশ ভালো চলছে। কিছু দিন আগেই আমার একটি নাটক প্রকাশ পেয়েছে। দর্শকের ভালোবাসা আর প্রশংসায় আমি আপ্লুত। পাশাপাশি আরেকটি নতুন নাটকের শুটিংও সদ্য শেষ করেছি। ইনশা আল্লাহ, খুব শিগগিরই সেটাও প্রকাশ পাবে। নতুন গল্প, নতুন ভাবনা নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি সবসময়। সবার দোয়া এবং ভালোবাসা থাকলে আরও ভালো কিছু উপহার দিতে পারব বলেই আশাবাদী।
আপনার জন্ম, শৈশব এবং পড়াশোনা সম্পর্কে
জানতে চাই।
আমার জন্ম ও শৈশব কেটেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে। সেখানেই আমার বেড়ে ওঠা ও প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু। ছোটবেলা থেকে ওমানের সংস্কৃতি, পরিবেশ এবং বহুজাতিক বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে মিশে বড় হয়েছি, তারপর বাংলাদেশে চলে আসি এবং এখানেই আমার একাডেমিক জার্নির গুরুত্বপূর্ণ ধাপগুলো শুরু হয়। এখন ও লেভেল এবং এ লেভেল সম্পন্ন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি।
শৈশব বা কৈশোরে আপনি নিজেকে নিয়ে
কী স্বপ্ন দেখতেন?
শৈশব বা কৈশোরে আমি নিজেকে নিয়ে বিশেষ কোনো নির্দিষ্ট স্বপ্ন দেখিনি। সত্যি বলতে, ছোটবেলায় আমার তেমন করে ভাবাই হয়নি, বড় হয়ে কী হব বা কোন পেশায় নিজেকে দেখতে চাই। জীবনের প্রতি একটা স্বাভাবিক গ্রহণযোগ্যতা ছিল, যেমন চলছিল, তেমনই চলুক। আমার পরিবার সবসময় আমাকে স্বাধীনভাবে বেড়ে উঠতে দিয়েছে। কোনো চাপ দেয়নি, কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়নি। বরং সবসময় বলেছে ‘তোমার যেটা ভালো লাগে, তুমি সেটাই করো। নিজের ভালো লাগাটাই গুরুত্বপূর্ণ।’ এই বিশ্বাস থেকেই আমি নিজের মতো করে জীবনকে গড়ে নিয়েছি। আমি কোনো পরিকল্পিত গন্তব্যে পৌঁছানোর চেয়ে বরং জীবনযাত্রার প্রতিটা বাঁকে নিজেকে খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। কোথাও খুব জোর করে কিছু ধরিনি, আবার কিছু ছেড়েও দেইনি। জীবন আমাকে যেদিকে নিয়ে গেছে, আমি সেভাবেই এগিয়ে গেছি।
অভিনয়ে কীভাবে এলেন?
ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বড় আপুকে দেখতাম, তিনি মিডিয়ায় কাজ করতেন। তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম, কিন্তু খুব মন দিয়ে লক্ষ্য করতাম কীভাবে তিনি কঠোর পরিশ্রম করছেন, এক কাজ থেকে আরেক কাজে ছুটে চলেছেন। আপুকে স্ক্রিনে দেখার অভিজ্ঞতা আমার জন্য ছিল বেশ আকর্ষণীয় ও অনুপ্রেরণাদায়ক। ওই সময় থেকেই আমার মনে ধীরে ধীরে অভিনয়ের প্রতি একটা আগ্রহ তৈরি হতে থাকে। তখনো ঠিক করে ভাবিনি যে নিশ্চিতভাবেই মিডিয়াতে আসব, তবে এটা মনে হতো, হয়তো কোনো এক দিন আমিও অভিনয়ের জগতে পা রাখতে পারি। বিশেষ করে আমি যখন ও লেভেল ও সি লেভেলের সময় পার করছিলাম, তখন থেকেই মাঝে মাঝে এমন চিন্তাভাবনা মাথায় আসত। পরবর্তী সময়ে যখন আমার এ লেভেল শেষ হয়, তখন হাতে কিছুটা সময় ছিল, প্রায় ছয় মাসের মতো বিরতি। ঠিক তখনই একটি টিভিসির অফার পাই। ভাবলাম, যেহেতু হাতে সময় আছে এবং এটা এমন একটা সুযোগ, যেটা সবসময় আসে না, তাই কাজটা করেই দেখি। সেখান থেকেই মূলত মিডিয়ায় আমার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। এ ছাড়া এর আগে ও পরে আমি মাঝে মাঝে সোশ্যাল মিডিয়াতে কিছু কন্টেন্ট কোলাবোরেশন করতাম।
এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহজাবীন চৌধুরী, আপনার আপুকে নিয়ে কতটা গর্ববোধ করেন?
আমি আমার আপুকে নিয়ে ভীষণ গর্ববোধ করি।
তিনি আজ যে জায়গায় পৌঁছেছেন, সেটা কোনো কাকতালীয় সাফল্য নয়! এর পেছনে রয়েছে অনেক অধ্যবসায় আর কঠিন পরিশ্রম। ছোটবেলা থেকেই আমি দেখেছি, আপু কতটা নিবেদিতভাবে কাজ করে চলেছেন, কখনোই কোনো শর্টকাট বেছে নেননি। আজ তিনি এ সময়ের অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রী, এটা শুধু তার প্রতিভার নয়, তার পরিশ্রম আর ধৈর্যেরও ফল। একজন পরিবারের সদস্য হিসেবে, একজন ছোট বোন হিসেবে, আমি সত্যিই খুব গর্বিত তাকে নিয়ে। তার সাফল্য আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
আপনার আপুর অভিনয়ে আপনার সবচেয়ে পছন্দের
কাজ কোনটি?
আপুর একটি নাটক আছে ‘বুকের বাঁ পাশে’। এটি আমার ভীষণ প্রিয় একটি নাটক। প্রথমবার দেখার পর থেকে নাটকটির অনেক দৃশ্য, সংলাপ এবং আবহ আমার মনে গেঁথে আছে। গল্পটা এতটাই আবেগঘন এবং বাস্তবসম্মত ছিল, সেটি যেকোনো দর্শকের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো।
অভিনয়ে আপনি কাকে অনুসরণ করেন?
আমি আসলে নিজের মতো করেই কাজটা করতে চাই, নিজের একটা স্বতন্ত্রতা গড়ে তুলতে চেষ্টা করি। তবে যদি কখনো অনিচ্ছাকৃতভাবে আমি কাউকে অনুসরণ করে থাকি, তবে সেটা সম্ভবত আমার আপুকেই। আমার অভিনয়ের ভঙ্গি, ডায়লগ ডেলিভারি, এমনকি এক্সপ্রেশনও অনেক সময় আপুর মতো হয়ে যেতে পারে, আমার অজান্তেই। এটা কোনো সচেতন অনুকরণ নয়, বরং ছোটবেলা থেকে তাকে দেখে দেখে শিখে ফেলা অভ্যাসেরই এক ধরনের প্রতিফলন। আর হ্যাঁ, আমার আপুই আমার আইডল। শুধু অভিনয়ে নয়, ব্যক্তি জীবনেও। তার নিষ্ঠা, আত্মসম্মানবোধ, পরিশ্রম আর ইতিবাচকতা আমাকে সবসময়ই প্রভাবিত করে।
এরই মধ্যে আপনার দুটি নাটক প্রকাশ পেয়েছে এবং আরও একটি নাটকের শুটিং শেষ হয়েছে। কোন নাটকে কাজ করে সবচেয়ে আনন্দ পেয়েছেন?
সব গল্পই আসলে একটি আরেকটি থেকে ভিন্ন ছিল, প্রতিটিই নিজস্ব আবহ আর অনুভূতি নিয়ে। তাই প্রতিটি নাটকে কাজ করতে গিয়ে আলাদা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে এবং প্রতিবারই একেকরকম আনন্দ ও শেখার সুযোগ পেয়েছি।
অনুতপ্ত নামক যে নাটকটির শুটিং শেষ করেছেন, সেটি কবে নাগাদ দেখতে পাওয়া যাবে?
সম্ভবত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে প্রকাশ পেতে পারে। তবে আমি এখনো সঠিক বলতে পারছি না।
গল্প এবং শুটিং অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
এ নাটকের গল্পে প্রাধান্য পেয়েছে ছেলের প্রতি বাবার দায়িত্বের। তাই আমি বিশ্বাস করি গল্পটা দর্শকের মন কেড়ে নিতে সক্ষম হবে। দর্শক নিজের সঙ্গে গল্পটা মেলাতে পারবে। তাই আমার কাছে গল্পটা খুবই ভালো লেগেছে। এ ছাড়া শুটিং অভিজ্ঞতাও দারুণ ছিল। পার্থ ভাইয়া অনেক সাপোর্টিভ এবং অনেক ফ্রেন্ডলি ছিলেন। সব মিলিয়ে সবকিছুই খুব ভালো ছিল।
নাটকে পা রাখার পর থেকে দর্শক প্রতিক্রিয়া
কেমন পাচ্ছেন?
একজন নতুন অভিনেত্রী হিসেবে আমি সবসময় আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং পরিশ্রম দিয়ে কাজ করেছি। এ যাত্রায় আমার সামর্থ্যরে সর্বোচ্চ দিকগুলো সামনে এনেছি। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলতে পারি, সেই চেষ্টা দর্শকরা এরই মধ্যেই স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং
আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। দিন দিন আমার ফ্যানবেজও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে,
যা আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের। এ ভালোবাসা এবং সমর্থন আমাকে আরও ভালো করে কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।
আপনি নিজেকে নিয়ে কী স্বপ্ন দেখেন কিংবা ভবিষ্যতে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
আমার ধীরে ধীরে কাজের আগ্রহ বাড়ছে। তাই এখন স্বপ্ন দেখছি, নিয়মিত কাজ করার। পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে কাজ করে যেতে চাই।
অভিনয়ে পারিবারিক সাপোর্ট কতটা পাচ্ছেন?
আমার পরিবার সবসময়ই সাপোর্টিভ ছিল, আগেও করেছে, এখনো করছে এবং ভবিষ্যতেও করবে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আপনার মতামত লিখুন :