রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় চারদিকে যখন শোকের মাতম, তখন উঠে এসেছে এক শিক্ষিকার আত্মত্যাগের গল্প। সেই গল্পে চোখ পড়তেই আবার স্তম্ভিত হয়েছেন সবাই। দুর্ঘটনায় ২০ শিক্ষার্থীকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে নিজে প্রাণ হারিয়েছেন শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরী।
গত সোমবার রাতে শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
জানা যায়, মাহেরীন চৌধুরী প্রেসিডেন্ট শহিদ জিয়াউর রহমানের চাচাতো ভাই এম আর চৌধুরীর মেয়ে। কয়েক বছর আগে তিনি প্রথমে তার পিতা এবং এরপর মাকে হারান। তার দুই ছেলে আছেন। তিনি মাইলস্টোনে সিনিয়র শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
সোমবার দুপুরে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রাইমারি সেকশনের একটি ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। তখন ভবনে ক্লাস চলছিল, যেখানে অনেক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী ও উদ্ধারকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বিমান বিধ্বস্তের পর চারদিক যখন আগুন ও ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়, তখন শিক্ষিকা মাহেরীন নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু করেন। দ্রুততার সঙ্গে আতঙ্কিত শিশুদের বের করার চেষ্টা করেন। তার প্রচেষ্টায় অন্তত ২০ শিক্ষার্থী অক্ষত বা সামান্য আহত অবস্থায় ভবন থেকে বের হতে পেরেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এই দুঃসাহসিক কাজ করতে গিয়েই নিজে আটকা পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় তার।
এক অভিভাবক বলেন, ম্যাডাম অনেক ভালো ছিলেন। সেনাবাহিনী আমাদের বলেছে, ওই ম্যাডামের জন্য অন্তত ২০ শিক্ষার্থী বেঁচে গেছে।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের চৌধুরীপাড়ার মেয়ে মাহেরীন চৌধুরী ছিলেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন আদর্শ শিক্ষিকা। উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার স্বামী মনসুর হেলাল জানান, গতকাল ভোরেই মাহেরীন চৌধুরীর মরদেহ ঢাকা থেকে নেওয়া হয়েছে। পরে নিজ গ্রাম জলঢাকার বোগলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ার পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত হন তিনি। শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পর্কে নানা তথ্য উঠে আসছে।
স্বজনদের ভাষ্যে জানা যায়, তিনি কখনোই তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করতেন না। অথচ বিএনপি চেয়ারপারসনের অসুস্থতার সময় যখন অনেক নেতা গ্রেপ্তার এড়াতে দূরে থাকতেন, তখন মাহেরীন চৌধুরী সাহসিকতার সঙ্গে খাবার নিয়ে হাজির হতেন হাসপাতাল কিংবা কারাগারে।
স্বজনদের ভাষ্যÑ মাহেরীন প্রচারবিমুখ মানুষ ছিলেন। কোনো মিডিয়া কাভারেজ বা বাহবায় আগ্রহ ছিল না তার। তিনি কাজ করতেন নিঃশব্দে, নিঃস্বার্থভাবে। ঘটনাস্থলে তার শরীরের একটি অংশ দগ্ধ হয়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করানো হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান।
মাহেরিন চৌধুরীর মৃত্যু যেন শুধু একটি দুর্ঘটনা নয়, এটি এক আত্মত্যাগের প্রতীক হয়ে রইল। স্বামী মনসুর হেলাল জানান, গতকাল ভোরেই মাহেরীনের মরদেহ ঢাকা থেকে নিজ গ্রাম নীলফামারীর জলঢাকার বোগলাগাড়ী চৌধুরীপাড়ায় নেওয়া হয়। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়েছে।

 
                             
                                    
                                                                 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                    -20251031020255.webp) 
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       -20251025002118.webp) 
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন