ভারতের বিপক্ষে ওল্ড ট্রাফোর্ড টেস্টে ব্যাটিংয়ে কীর্তি গড়েছেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান জো রুট। সাদা পোশাকের ক্যারিয়ারে ৩৮তম সেঞ্চুরির সুবাদে টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহকের তালিকায় ২ নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। এখন তার সামনে আছেন কেবল শচিন টেন্ডুলকার। শচিনের সংগ্রহ ১৫ হাজান ৯২১ রান।
১৩ হাজর ৪০৯ রান নিয়ে তার পেছনে আছেন রুট। শচিনের রানের সংখ্যা পেরিয়ে টেস্ট ইতিহাসের শীর্ষে রুটের না থাকার কোনো কারণ দেখছেন না রিকি পন্টিং। এত দিন যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে কোচিং করানো নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন রিকি পন্টিং। চলতি অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফির ধারাভাষ্যকক্ষে তাকে প্রথম দেখা গেল এই ওল্ড ট্র্যাফোর্ড টেস্টেই।
কাকতালীয়ভাবে তার রানের সংখ্যা পেরিয়ে যখন টেস্ট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হলেন রুট, তখন মাইক্রোফোনের সামনে পন্টিংই! ভারতের বিপক্ষে এই টেস্টের ব্যাটিংয়ে নামার সময় টেস্ট ইতিহাসে রানের তালিকায় রুট ছিলেন ৫ নম্বরে। নাগালেই থাকা রাহুল দ্রাবিড় ও জ্যাক ক্যালিসকে পেরিয়ে যান তিনি শুক্রবার ম্যাচের তৃতীয় সকালে। এরপর আরও এগিয়ে পা রাখেন শতরানে। ৩৮তম টেস্ট সেঞ্চুরিতে স্পর্শ করেন কুমার সাঙ্গাকারাকে। মাইলফলকের নেশায় পেয়ে যাওয়া ব্যাটসম্যান এরপর এগিয়ে যান আরও। তার রান যখন ১২০, পেরিয়ে যান এত দিন দুইয়ে থাকা রিকি পন্টিংয়ের ১৩ হাজার ৩৭৮ রান। ধারাভাষ্যে তখন শুরুতে তাকে অভিনন্দন জানান সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল আথারটন। পাশেই মাইক্রোফোন হাতে তখন অপেক্ষায় পন্টিং।
অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তিও শুভেচ্ছা জানালেন রুটকে। পন্টিং বলেন, ‘অভিনন্দন জো রুট, অসাধারণ। তালিকায় এখন দ্বিতীয়, ১২০ রানে অপরাজিত। এই মাঠের দর্শক, ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের দর্শক, যাদের জানাশোনার পরিধি গভীর, তারা সবাই একসঙ্গে দাঁড়িয়ে (অভিনন্দন জানাচ্ছে)।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামনে কেবল একজনই এখন। আড়াই হাজার রানের মতো পেছনে (টেন্ডুলকারের চেয়ে), তবে গত চার-পাঁচ বছরে তার ক্যারিয়ার যেভাবে এগিয়েছে, এটিও না পারার একদমই কোনো কারণ নেই।’ ২০২০ সাল পর্যন্তও রুটকে নিয়ে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ও আক্ষেপ ছিল, ফিফটিকে যথেষ্ট ধারাবাহিকভাবে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে না পারার এবং বড় ইনিংস খেলতে না পারায়। ওই বছর পর্যন্ত ৯৭ টেস্টে তার সেঞ্চুরি ছিল ১৭টি, ফিফটি ৪৯টি। ব্যাটিং গড় ছিল তখন ৪৭.৯৯।
পরের বছর থেকেই তার ব্যাটে অবিশ্বাস্য রানপ্রবাহের শুরু। যেখানে সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরি করে যাচ্ছেন বানের জলের মতো। এই সময়ের ৬০ টেস্টেই সেঞ্চুরি করে ফেলেন ২১টি। ফিফটি ১৭টি। এই পাঁচ বছরে ৫ হাজার ৫৮৬ রান করেছেন ৫৬.৪২ গড়ে। ক্যারিয়ারে ব্যাটিং গড় যেখানে নেমে গিয়েছিল ৪৮-এর নিচে, এখন তা আবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১.১৭। ধারাভাষ্যে পন্টিং ফুটিয়ে তুললেন রুটের সেই অবিশ^াস্য ধারাবাহিকতাই। পন্টিং বলেন, ‘ক্যারিয়ারের ১৫৭ টেস্ট ম্যাচজুড়েই সে দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার। এতটা ধারাবাহিক ক্রিকেটার তাই না? দীর্ঘ সময় ধরে মনে করাই কঠিন, কখন তার খারাপ সময় গেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত তিন-চার বছরে যখনই সে ভালো শুরু পেয়েছে এবং ফিফটি করেছে, প্রতিবারই মনে হয়েছে সে আরও এগিয়ে যাবে এবং শতরান করবে। শুধু সেঞ্চুরিই নয়, বড় সেঞ্চুরি করেছে, যা গ্রেট ক্রিকেটারের একটি নিদর্শন।’ এই ইনিংসেও রুট থেমেছেন ১৫০ রান করে। তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ষোড়শ দেড়শ রানের স্কোর এটি।
এখানেও তিনি পেরিয়ে গেছেন পন্টিংকে (১৫)। এখানেও এগিয়ে যাচ্ছেন টেন্ডুলকারের রেকর্ডের দিকে। ২০ বার দেড়শ ছুঁয়ে সবার ওপরে ভারতীয় কিংবদন্তি। ১৮ বার করেছেন স্যার ডন ব্র্যাডম্যান, ১৯ বার করে ব্রায়ান লারা ও কুমার সাঙ্গাকারা। সত্যিই টেন্ডুলকারের রানের রেকর্ড পেরিয়ে গেছে, ভারতের ক্রিকেট ইশ্বরের ২০০ টেস্ট খেলার রেকর্ডও পেরিয়ে যাবেন রুট। ইংল্যান্ড যে পরিমাণের টেস্ট খেলে, তাতে এই রেকর্ড খুবই সম্ভব। রুটের খুব একটা চোটে পড়ার নজিরও নেই। তার বয়স এখনো কেবল ৩৪। গত বছর ১৭টি টেস্ট খেলেছেন তিনি, ২০১৭ সালেও খেলেছিলেন ১৭ টেস্ট। আর দুই বছরে খেলেছেন ১৫ টেস্ট, দুই বছরে ১৪ টেস্ট। টেন্ডুলকার ২০০ টেস্ট খেলেছেন ২৪ বছর খেলে। রুট সাড়ে ১২ বছরেই খেলে ফেলেছেন ১৫৭ টেস্ট।
আপনার মতামত লিখুন :