নারী ফুটবলে সময়টা দুর্দান্ত যাচ্ছে। সিনিয়র দল প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার ইতিহাস গড়েছে। এই সাফল্যের পরপরই সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। এর আগে জর্ডানে গিয়ে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে দলের বিপক্ষে চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এই টানা সাফল্যে উচ্ছ্বসিত নারী দলের সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও। তার মতে, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা এবং টানা দুটি সাফ শিরোপার জয়ের সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে বাংলাদেশ এশিয়া কাপে খেলার ইতিহাস গড়েছে। বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে একপর্যায়ে দাঁড় করানোর পেছনে তার অবদান অনেক। নারী ফুটবল নিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করেছেন তিনি। বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা এনে দেওয়া এই কোচ বলেন, ‘২০১২ সাল থেকে যে প্রক্রিয়াটা চলে আসছে, এই প্রক্রিয়ার ফসল হলো এটি।’
বয়সভিত্তিক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ নারী দল। এরপর ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৬, ২০১৭ সালে অনূর্ধ্ব-১৫, ২০১৮ সালে অনূর্ধ্ব-১৮, ২০১৯ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ এবং ২০২১ সালে অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। শেষে ২০২২ সালে সিনিয়র সাফের শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। এই গ্রাফেই সামনে এগিয়ে চলেছে নারী ফুটবল। এশিয়া কাপের চূড়ান্ত পর্বে খেলার সাফল্য প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘দীর্ঘদিন খেলোয়াড়রা একসঙ্গে খেলেছে এবং পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালে মিয়ানমারের বিপক্ষে খেলা বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের গড় বয়স ছিল ১৬-১৭ বছর। মিয়ানমারের ছিল ২৭-২৮ বছর। এখন বয়সের পার্থক্য তেমন নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিয়ানমারের বিপক্ষে খেলা দলটি অনেক দিন ধরে খেলে আসছে। তহুরা, শামসুন্নাহার, ঋতুপর্ণা, মনিকা, মারিয়া, স্বপ্না অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছেন।’ এশিয়া কাপে নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখান ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি বলেন, ‘যখন থেকে তাকে পিক করা হয়েছে, তখন থেকেই তার মধ্যে ট্যালেন্ট দেখা গেছে যে, সে লেফট সাইটে বল পেলেই প্রতিনিয়ত কাজটিই করত। আগে অনূর্ধ্ব-১৯, অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ে ঋতুর এই রকম অনেক গোল আছে। ছোটবেলা থেকেই সে ট্যালেন্ট।’ ছোটনের মতে, নারী ফুটবলের প্রক্রিয়াটা করে আসছে, তারা ঠিকমতোই করে এসেছে। যারা কাজ করেছেন, তাদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে বিশ^াস রেখেছে ফুটবল ফেডারেশন। তিনি বলেন, ‘দল হারবে, জিতবে। দল ৬ গোল হজম করেছে, একসময় ৭ গোল হজম করেছে ভারতের বিপক্ষে। কিন্তু ফেডারেশন হতাশ হয়নি। তারা আস্থা রেখেছে। যারা কাজ করেছে, প্লেয়ার, কোচ, স্টাফÑ সবাই দীর্ঘমেয়াদি কাজ করেছে। এখানে কোনো হতাশা ছিল না। আমি একটা টুর্নামেন্ট খেললাম, না এক মাস খেললাম, হেরে গেলামÑ সব শেষ। এই জিনিসগুলো ছিল না।’
অনেক আগেই বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী দল প্রথম এশিয়া কাপে খেলেছে। সে সময় দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে লড়াই করে বাংলাদেশ। ছোটন বলেন, ‘২০১৬ সালে যখন আমরা কোয়ালিফাই করলাম (এশিয়া কাপে), আমরা খুবই উচ্ছ্বসিত ছিলাম যে, আমরা এশিয়ার ৮ দেশের মধ্যে চলে গেলাম। কিন্তু ওখানে আমরা জানতাম যে, আমাদের জন্য কঠিন হবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট এই জিনিসটা বুঝতে পেরে ২০১৬ দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে দেন। বিভিন্ন দেশে গিয়ে ফ্রেন্ডলি ম্যাচও খেলছিলাম। ভালো প্রস্তুতি নিয়ে গিয়েছিলাম। তার পরও আমাদের জন্য সুখকর ছিল না। দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে প্রথম ম্যাচেই ৯ গোলে হেরে গেলাম। এখন তো আমাদের জাপান, অস্ট্রেলিয়া, তাদের সঙ্গে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে।’
এবার সিনিয়র দলের এশিয়া কাপ নিশ্চিত করাকে অনেক বড় সাফল্য মনে করছেন ছোটন। তিনি বলেন, ‘খুবই ভালো যে, আমরা একটা অর্জন পেলাম। আমাদের যে উন্নতির গ্রাফটা, এটা প্রতিষ্ঠিত হলো। এখন আসল পরীক্ষা হলো সামনে। ওখানে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে যেতে হবে। ওখানে গিয়ে অনেকেই বসে আছে। জাপান, কোরিয়া এরই মধ্যে টুর্নামেন্টে আছে। তাদের বিপক্ষে খেলতে হবে। অতএব, আমাদের ওই প্রস্তুতিটাই নিতে হবে।’ বর্তমান নারী দলটি খুবই সম্ভাবনাময় বলে মনে করেন কোচ ছোটন। তিনি বলেন, ‘আমি এটা সব সময় বলে আসছি যে, এ টিম সম্ভাবনাময়। সম্ভাবনাময় একটা সেক্টর।
এখনো যদি অশুভ কোনো কিছু না আসে আর এটি যদি ঠিকমতো পরিচালিত হয়, মেয়েরা যদি খেলায় থাকে এবং তাদের জন্য যদি বিনিয়োগ করা যায়, তাহলে তারা দেশকে আরও অনেক কিছুই দেবে। দেওয়ার মতোই একটি দল। তারা দিচ্ছে, প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে যাচ্ছে। এই জিনিসটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।’
বিশ্ব কাপের এত দূরের স্বপ্ন দেখতে চান না ছোটন। তিনি বলেন, ‘আমি আগেই বলছিলাম যে, আমরা যেহেতু সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, এখন আমরা আসিয়ান অঞ্চল বা এশিয়ায় ভালো খেলতে চাই। আমরা যদি থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারি, যেমন মিয়ানমার আসিয়ানে ভালো টিম। মিয়ানমার ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুরসহ আসিয়ান অঞ্চলে অনেক টিমের বিপক্ষে দাপট দেখায়। মিয়ানমারকে যেহেতু আমরা হারালাম, তার মানে আসিয়ানে একটা ভালো অবস্থায় এখন আছি। আমরা যদি থাইল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করতে পারি, ফিলিপাইনের বিপক্ষে ভালো খেলতে পারি, তখন বুঝব যে আমাদের অবস্থানটা কী। এখন তাদের উন্নয়নের জন্য ফোকাস করা উচিত। আরও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার।’
আপনার মতামত লিখুন :