‘লাইফ লাইন’ খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ও কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে প্রতিনিয়ত সৃষ্ট হচ্ছে খানা-খন্দক। আর এগুলো সংস্কারে পাথরের পরিবর্তে ইটের ব্যবহার বাড়ছে। এতে সড়কগুলোতে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই উন্নয়ন না হওয়ায় সপ্তাহ ঘুরতেই আবারও সংস্কারের প্রয়োজন হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগ কোনোভাবেই কমছে না। শ্রাদ্ধ হচ্ছে রাষ্ট্রের টাকা!
জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দেশের অন্যতম প্রধান সড়ক। আমদানি-রপ্তানির সিংহভাগ এই সড়ক পথেই সম্পন্ন হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি-রপ্তানির প্রায় সব পণ্য পণ্যবাহী ভারী ট্রাক ও অন্য যানবাহনে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে এই সড়ক পথেই পরিবহন করা হয়। একইভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, কাপ্তাই, সেন্টমার্টিন, রামগড়, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লার লাখ লাখ মানুষ ছাড়াও দেশি-বিদেশি যাই বলি না কেন সারা দেশ থেকে বিরাট একটি ভ্রমণপিপাসু মানুষ এই সড়কপথেই দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারসহ পাহাড়-প্রকৃতি ঘেরা অঞ্চলের নানা দর্শনীয় স্থান ঘুরতে যাতায়াত করে। এ কারণে এই মহাসড়কে দেশের সবচেয়ে দ্রুততম ও অত্যাধুনিক যানবাহন চলাচল করে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এই মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ হাজারেরও বেশি যানবাহন চলাচল করছে। যার মধ্যে ব্যক্তিগত যানবাহন যেমন রয়েছে তেমনি গণপরিবহনও রয়েছে। তবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটির কুমিল্লা অংশ ফোরলেনে উন্নীত হওয়ার কয়েক বছর পর থেকেই প্রতি মাসেই সংস্কার করতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের ময়নামতি সেনানিবাস সংলগ্ন নিশ্চিন্তপুর, আমতলী, আলেখারচর, ঝাগুড়ঝুলি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ফোরলেনের উভয় অংশ প্রতিনিয়ত খানা-খন্দক সৃষ্ট হচ্ছে। বিগত সময়ে মহাসড়কের খানা-খন্দক সংস্কারে বিটুমিনের সঙ্গে পাথর ব্যবহার হলেও সম্প্রতি মহাসড়কের সংস্কারকাজে ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।
দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, নির্ধারিত ওজনের বাইরেও অতিরিক্ত ওজন নিয়ে বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানির পণ্যগুলো দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই সড়ক পথেই চট্টগ্রাম বন্ধরে যাতায়াত করে। ফলে প্রায়ই মহাসড়কের এই স্থানগুলোর সড়ক দেবে বা ভেঙে যাচ্ছে, ফলে খানা-খন্দক ভরে যাচ্ছে সড়ক। যান চলাচলে স্বস্তির জন্য মহাসড়কের ভাঙা অংশ ও খানা-খন্দক মেরামত করার জন্য বর্তমানে ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ইট ব্যবহার করলে সেগুলো ২-১ দিনের মধ্যেই আগের অবস্থানে ফিরে যাচ্ছে। ফলে কোনোভাবেই যানবাহন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছে না।
মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের মিয়ামী ১, মিয়ামী ২, নুরজাহান, বিরতিসহ একাধিক হোটেলে যাত্রাবিরতি করা বিভিন্ন প্রাইভেট ও গণপরিবহনের নিয়মিত চলাচলকারী একাধিক যাত্রী এবং চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরের অধিকাংশ সময় নিশ্চিন্তপুর, আমতলী এলাকায় ফোরলেনের উভয় অংশ খানা-খন্দক থাকে। সংস্কার নিয়মিত হলেও টেকসই সংস্কার না হওয়ায় কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ কমছে না।
মফিজুর রহমান নামের গণপরিবহনের এক চালক জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-রাঙামাটি-ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লা যেকোনো স্থানে পৌঁছাতে আমাদের একটি নির্ধারিত সময় থাকে। কুমিল্লা সেনানিবাস অতিক্রম করার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির গতি কমাতে বাধ্য হই। ফলে নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হয় না।
ট্রাকচালক আনিছুর রহমান জানান, সড়ক সংস্কার টেকসই বা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় যানবাহনের চালকরা এর সুফল পাচ্ছে না। বিশেষ করে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের ময়নামতি সেনানিবাস এলাকাটি বছরের প্রায় পুরোটা সময় খানা-খন্দকে পরিপূর্ণ থাকে। এখানেও পাথরের পরিবর্তে ইটের ব্যবহার ভারী যানবাহনের চাপে স্বল্প সময়েই পূর্বের অবস্থানে ফিরে আসে। ফলে মালবাহী ছোট-বড় ট্রাকগুলো ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে।
এদিকে প্রতিবার সংস্কারের কথা জানতে চাইলে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দ্রুত সংস্কারের আশ্বাস দিলেও তা টেকসই বা দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ায় যানবাহনের চালকরা এর সুফল পাচ্ছে না।
দীর্ঘস্থায়ী বা পাথরের জায়গায় ইটের ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফা বলেন, বর্ষা মৌসুম হওয়ায় খানা-খন্দকগুলো সাময়িকভাবে চলাচলের জন্য ইট ব্যবহার করে চলাচলের উপযোগী করা হচ্ছে। বৃষ্টি শেষ হলে আমরা পাথরের মিশ্রণ বিটুমিন দ্বারা সংস্কার করব।
আপনার মতামত লিখুন :