জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে করা পৃথক দুই মামলায় ‘ছাগলকা-ের’ আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমানের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিন জামিন শুনানিতে মায়ের প্যারালাইসিসের কথা বলেন। মাকে দেখার কেউ নেই বলে কান্না করেন। পরে বিচারক তাকে ধৈর্যধারণের উপদেশ দেন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসাইন গালিবের আদালত এ ঘটনা ঘটে।
এদিন দুপুরে আসামিকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মতিউর রহমানের পক্ষে আইনজীবী ওয়াহিদুজ্জামান পৃথক দুই মামলায় জামিন চেয়ে শুনানি করেন। দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজের জামিন নাকচ করেছেন ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. জাকির হোসেন গালিব।
এদিন আদালতে মতিউরের পক্ষে তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। এরপর আইনজীবী শুনানিতে বলেন, আসামি (মতিউর) ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছে। তারা উভয়ে ষড়যন্ত্রের শিকার। আসামিরা জামিন দিলে পলাতক হবেন না।
এ সময় মতিউর আদালতে বিচারকের কাছে অনুমতি নিয়ে কথা বলতে চান। এরপরে বিচারক অনুমতি দিলে তিনি বলেন, ‘আমার মা স্ট্রোকের রোগী। আমি ও আমার স্ত্রী দুজনই গ্রেপ্তার। আমার পরিবারটা ধ্বংস হয়ে গেছে। আমি ও আমার স্ত্রী বর্তমানে দুজনই কারাগারে। আমার মা প্যারালাইসিস রোগী। তাকে দেখার কেউ নেই। এ কথা বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।’ মতিউর রহমান বলেন, ‘আমি কারাগার থেকে দুদককে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। আমি আপনাকে এ চিঠিটা দিলাম। আপনি দয়া করে চিঠিটা পড়ে যে আদেশ দেবেন, আমি তা মাথা পেতে নেব।’
মতিউর আরও বলেন, ‘আমাকে জামিন দিন। আমাকে জামিন দিলে আমার কাছে যে নথিপত্র আছে আমি তা আদালতে উপস্থাপন করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারব।’ এরপরে আদালত বলেন, আপনি দোষী বা নির্দোষ তা এখনই বলা যাবে না। মামলাটি তদন্তাধীন। তাই আপনাকে আরও ধৈর্যধারণ করতে হবে। এরপর আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত বছরের ২ জুলাই মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদ বিবরণী চেয়ে পৃথক নোটিশ পাঠায় দুদক। এসব নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ২৯ আগস্ট মতিউর, তার দুই স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েসহ পাঁচজনের সম্পদ বিবরণী দুদকে জমা দেন। চলতি বছর ৬ জানুয়ারি মামলা করে দুদক। আর ১৪ জানুয়ারি তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত বছরের ৪ জুন মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের অনুসন্ধানের নামে দুদক। অনুসন্ধানে মতিউর ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ৬৫ বিঘা জমি, আটটি ফ্ল্যাট, দুটি রিসোর্ট ও পিকনিক স্পট এবং তিনটি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তথ্য পায় দুদক। মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব, মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার হিসাব ও শেয়ারবাজারের বিও হিসাব ক্রোক করা হয়। পরে ২৪ জুন মতিউর ও তার প্রথম পক্ষের স্ত্রী এবং সন্তানের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন