এশিয়া কাপ ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সামনে রেখে জাতীয় ক্রিকেট দলের ফিটনেস ক্যাম্প চলছে। এই ফিটনেস ক্যাম্পের সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন বছর দেড়েক আগে জাতীয় দলের স্ট্রেংথ ও কন্ডিশনিং কোচের দায়িত্ব নেওয়া নাথান কেলি। চলমান ফিটনেস ক্যাম্পে ক্রিকেটাররা কঠোর পরিশ্রম করছেন। আগে ক্রিকেটারদের ইয়ো ইয়ো টেস্ট ও বিপ টেস্ট করানো হতো। বর্তমানে কেলির অধীনে ‘টাইম ট্রায়াল’ টেস্ট দিতে হচ্ছে জাতীয় দলের ক্রিকেটাদের। কয়েক দিন আগে জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলোয়াড়দের এই টেস্ট নেন কেলি। ১৬০০ মিটার দৌড়ের পরীক্ষায় সেরা হয়েছিলেন নাহিদ রানা। ৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ড সময় নিয়ে দৌড় শেষ করেছিলেন এই গতিতারকা। বাংলাদেশের ফিটনেস কোচ কেলি জানালেন, শান্ত, মিরাজ ও নাহিদদের অ্যাথলেটিক ক্রিকেটার হিসেবে তৈরি করতে চান।
মিরপুরে গতকাল ফিটনেস পরীক্ষার ফাঁকে সংবাদমাধ্যমকে কেলি বলেন, ‘যে স্পোর্টসেই খেলুন না কেন, আপনাকে ভালো অ্যাথলেট হতে হবে। ফিট হতে হবে, পাওয়ারফুল হতে হবে। শীর্ষ দুই ক্রিকেট নেশন দেখুন, তাদের সবাই ফিট এবং পাওয়ারফুল অ্যাথলেট। তারা হোক ফুটবল খেলোয়াড়, রাগবির খেলোয়াড়। অ্যাথলেটদের নেচার দিন শেষে একই রকম। আমরা অ্যাথলেটিক ক্রিকেটার চাই, যা তাদের ভালো খেলার স্বাধীনতা দেবে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংও আরও ভালো হবে। মনোযোগ ধরে রাখা সহজ হবে। ফাস্ট বোলাররা দীর্ঘ স্পেল করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেরা এখন অনেক টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে খেলে। তাদের শুধু ক্রিকেটে উন্নতি করলেই হবে না, অ্যাথলেট হিসেবেও উন্নতির জায়গা আছে। ছেলেরা অনেক কঠোর পরিশ্রম করছে।’ ‘টাইম ট্রায়াল’ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে কেলি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘আপনি যখন ইয়ো-ইয়ো বা বিপ টেস্ট করান, তখন খেলোয়াড়েরা খুব অল্পের জন্য পিছিয়ে যান কখনো কখনো।
তাদের তখন থামিয়ে দিয়ে বলা কঠিন হয়ে যায় যে তোমার টেস্ট শেষ। টাইম ট্রায়ালে ভালো জিনিস হচ্ছে, ঘড়ি মিথ্যা কথা বলে না। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে, যারা ইয়ো ইয়ো বা বিপ টেস্টে পাস করে, তারা টাইম ট্রায়ালেও জেতে।’ গত রোববার ক্রিকেটারদের ১৬০০ মিটার টাইম ট্রায়াল নিয়েছিলেন কোচ কেলি। তবে সেদিন ওই দৌড়ের কোনো ফলাফল জানাননি তিনি। গতকাল জানালেন, রবিবারের টাইম ট্রায়ালে ১২ জন ক্রিকেটার নিজের সেরা টাইমিং করেছিলেন। জাতীয় স্টেডিয়ামে হওয়া এই টাইম ট্রায়ালে দুই ভাগে ভাগ হয়ে মোট ২৬ জন ক্রিকেটার ১৬০০ মিটার দৌড় দেন। বাকিদের অবস্থা নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন কেলি। তিনি বলেন, ‘জাতীয় স্টেডিয়ামে কিছু টেস্ট করেছি। সেখানে (৪০ মিটার) স্প্রিন্ট টেস্টিং ও (১৬০০ মিটার) টাইম ট্রায়াল করানো হয়েছিল। টাইম ট্রায়ালে আমরা ১২টি ব্যক্তিগত সেরা টাইমিং পেয়েছি।
অনেক খেলোয়াড়ই ওই ক্ষেত্রে উন্নতি করেছে। নাহিদের অসাধারণ পারফরম্যান্স ছিল। ১৬০০ মিটার টাইম ট্রায়াল শেষ করেছে ৫ মিনিট ৩১ সেকেন্ডে। দল হিসেবে আমরা সম্মিলিতভাবে আরও উন্নতি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এখানে (মিরপুরে) কিছু স্ট্রেংথ টেস্টিংও করেছি। যখন আমরা সবগুলো স্ট্রেংথ টেস্টের ফলাফল পর্যালোচনা করলাম, তখন দেখা গেল ৫৬টি ব্যক্তিগত সেরা হয়েছে। অর্থাৎ, ক্রিকেটাররা দল হিসেবে অনেক উন্নতি করছে।’ ব্যক্তিগত ছুটি কাটিয়ে জাতীয় দলের অনুশীলন ক্যাম্পে যোগ দিয়েছেন লিটন কুমার দাস। গতকাল সকাল থেকে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সতীর্থদের সঙ্গে ঘাম ঝরাচ্ছেন বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। শ্রীলঙ্কায় লম্বা সফরের পর স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন লিটন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি। তবে এর মাঝেই গত ৬ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে যায় জাতীয় দলের ফিটনেস ক্যাম্প। দেশের বাইরে থাকায় প্রথম কিছুদিন অনুশীলনে থাকা হয়নি লিটনের। গত রোববার জাতীয় স্টেডিয়ামে ৪০ মিটার স্প্রিন্ট ও ১৬০০ মিটার টাইম ট্রায়ালেও ছিলেন না তিনি। ছুটিতে থাকায় তাওহিদ হৃদয়ও ছিলেন না সেদিন। মিরপুরে আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত চলবে ফিটনেস ক্যাম্প। এরপর শুরু হবে স্কিল ট্রেনিং। পরে ২০ তারিখ সিলেটে চলে যাবে বাংলাদেশ দল। সেখানেই হবে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী ৩০ আগস্ট শুরু হবে টি-টোয়েন্টি সিরিজ। পরের দুই ম্যাচ ১ ও ৩ সেপ্টেম্বর।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন