দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে সাইবার হামলা চালিয়েছে হ্যাকাররা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু সংস্থার ওয়েবসাইটেও সাইবার হামলা হয়েছে।
তবে হ্যাকারদের মূল্য লক্ষ্য ছিল মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ‘ট্রোজান ১৩৩৭’ এবং ‘দ্য রেড ঈগল’ নামে দুটি হ্যাকার গোষ্ঠী এ হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছে। তবে এতে আরও বেশ কয়েকটি হ্যাকার গোষ্ঠী যুক্ত রয়েছে।
হামলাকারীরা ওয়েবসাইটে হামলার পাশাপাশি প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ারও দাবি করেছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিভিন্ন টেলিগ্রাম গ্রুপে আগাম ঘোষণা দিয়েই এসব হামলা চালানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট সাইবার হামলায় আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হ্যাকাররা টেলিগ্রাম গ্রুপে প্রায় ১০০ ওয়েবসাইটে সফল হামলার দাবি করেছে এবং বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ঠিকানাও প্রকাশ করেছে। আক্রান্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকটির ওয়েবসাইট ‘অকার্যকর’ দেখাচ্ছে।
আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে হ্যাকারদের দেওয়া বার্তা ভেসে উঠছে। রাজধানীর রূপনগর সরকারি মাধ্যম বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটটিতে হ্যাকাররা লিখেছেন ‘হ্যাকড বাই লুসিয়ান ক্রাইজ’।
এ ছাড়া সেখানে ফিলিস্তিনের পক্ষে বার্তা দেওয়া হয়েছে এবং ইসরায়েলের মিত্রদের ‘সম্পদ’-এ এমন হামলা অব্যাহত থাকবে বলেও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। দারুস সালাম সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের ওয়েবসাইটে ‘ট্রোজান ১৩৩৭’ নামে হামলাকারী হ্যাকার গোষ্ঠী নিজেদের ভারতীয় বলে দাবি করেছে। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ হামলা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে গোষ্ঠীটি।
এদিকে টেলিগ্রামে ‘দ্য রেড ঈগল’ নামে হ্যাকার গোষ্ঠীটি প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে। দাবির পক্ষে তারা কিছু শিক্ষার্থীর তথ্যের স্ক্রিনশটও প্রকাশ করেছে টেলিগ্রামে।
এ ছাড়া তারা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটেও সফল হামলা করার দাবি করেছে। তবে গতকাল সন্ধ্যায় সেসব ওয়েবসাইট স্বাভাবিক অবস্থায় দেখা গেছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছে, এই দুই প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ‘ডিডস-ডিনায়েল অব সার্ভিস’ ধরনের সাইবার আক্রমণ করা হয়েছিল, যা দ্রুতই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে।
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ আরিফ মঈনুদ্দীন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই টেলিগ্রাম গ্রুপগুলোয় এসব হ্যাকার বাংলাদেশে হামলার হুমকি দিচ্ছিল। ‘ওয়েবসাইট ডিফেইসমেন্ট’ ধরনের হামলা চালানো হয়েছে।
এ ধরনের হামলায় একটা ওয়েবসাইটের হোম পেজে হ্যাকাররা তাদের একটা ‘সাইনবোর্ড’ প্রকাশ করে। ওয়েবসাইটের দুর্বলতা বেশি থাকলে, এখান থেকে হ্যাকাররা ডাটাবেজেও ঢুকে যেতে পারে। তেমন দুর্বলতা না থাকলে পারবে না।
তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যেহেতু শিক্ষার্থীরা অনেক ধরনের কাজ করেন যেমন রেজিস্ট্রেশন, আবেদন ইত্যাদি; সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি তো থেকেই যায়’।
এ ধরনের হামলা থেকে ডাটাবেজে প্রবেশাধিকার নিতে পারলে প্রাপ্ত উপাত্ত হ্যাকাররা ডার্ক ওয়েবে বিক্রি করে থাকেন বলেও জানান আরিফ মঈনুদ্দীন। তবে এই সাইবার হামলা সম্পর্কে প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো সংস্থার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন