রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


মো. আফজাল হোসেন 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৭:০৬ এএম

একজন সাইফুল ইসলাম আজাদ: মানবিকতার এক অনন্য প্রতিচ্ছবি

মো. আফজাল হোসেন 

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০৭:০৬ এএম

একজন সাইফুল ইসলাম আজাদ: মানবিকতার এক অনন্য প্রতিচ্ছবি

মানুষের জীবনে এমন কিছু অধ্যায় থাকে, যা শুধু ব্যক্তিগত নয়, বরং চারপাশের মানুষের জন্য হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণার গল্প। আমাদের চারপাশে কত মানুষ আছে, যারা নিজের জীবনকে যতই ব্যস্ততা, দায়িত্ব কিংবা প্রতিকূলতায় পূর্ণ রাখুক না কেন, সবার আগে মানুষ হয়ে ওঠাকেই বড় করে দেখেন। সাইফুল ইসলাম আজাদ এমনই এক মানুষ, যার জীবন কাহিনি, পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও মানবিকতা আমাদের শেখায় কেমন করে দায়িত্ব আর ভালোবাসার সমন্বয়ে এক জীবনকে গড়ে তোলা যায়।

শৈশব ও পারিবারিক শেকড়

১৯৮৩ সালের ১ জানুয়ারি, কুমিল্লা জেলার লাকসাম থানার ডুরিয়া বিষ্ণুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সাইফুল ইসলাম আজাদ। জন্ম হয় একটি স্বনামধন্য পরিবারে, যেখানে নীতি, সততা এবং সামাজিক মর্যাদা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে গড়ে উঠেছে। তার বাবা, মরহুম মো. মহব্বত আলী, ছিলেন একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি এবং ‘ভাইয়া গ্রুপ’-এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ‘নাবিস্কো বিস্কুট অ্যান্ড ব্রেড ফ্যাক্টরি’ ও ‘প্রভাতী পিএলসি’-এর অন্যতম পরিচালক।

চার ভাইয়ের মধ্যে আজাদ দ্বিতীয়। শৈশবে পরিবারের স্নেহ, শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব এবং নৈতিকতার মজবুত ভিত্তি তার বেড়ে ওঠায় গভীর প্রভাব ফেলে। তার বাবা শুধু ব্যবসায়ী ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী, সমাজসেবক এবং পরিবারের সবার জন্য আদর্শ। সেই উত্তরাধিকারই আজাদের ব্যক্তিত্বে প্রতিফলিত হয়।

শিক্ষাজীবনের উজ্জ্বল অধ্যায়

আজাদের শিক্ষাজীবন শুরু হয় চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল থেকে। ১৯৯৮ সালে তিনি প্রথম বিভাগে এসএসসি পাস করেন। পরে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন একইভাবে প্রথম বিভাগে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য তিনি পাড়ি জমান থাইল্যান্ডে এবং অংংঁসঢ়ঃরড়হ টহরাবৎংরঃু থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

শিক্ষাজীবনের এ সাফল্য কেবল মেধার ফসল নয়, এটি ছিল তার অধ্যবসায়, শৃঙ্খলা এবং সময় ব্যবস্থাপনার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকা- ও সামাজিক কাজে সক্রিয় ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, একজন মানুষের বিকাশ শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়, বরং চারপাশের অভিজ্ঞতা, সম্পর্ক এবং মানবিকতা থেকেও তা গড়ে ওঠে।

মানবিকতা ও পারিবারিক বন্ধন

আজাদ বিবাহিত জীবনেও সমানভাবে সফল। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়েকে নিয়ে বসুন্ধরার একটি ভাড়া ফ্ল্যাটে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপন করছেন। তার মা, স্ত্রী এবং ভাইয়েরা তাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন। তিনি একজন দায়িত্বশীল স্বামী, স্নেহময় বাবা এবং নিবেদিতপ্রাণ পুত্র।

আজাদের মানবিকতার গল্প পরিবারের বাইরেও ছড়িয়ে আছে। সহকর্মী, বন্ধু, আত্মীয় যে-ই তার সংস্পর্শে এসেছেন, তিনিই তার ভদ্রতা, সহানুভূতি ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি নামাজি, পরহেজগার, দানশীল এবং সবসময় অন্যের উপকারে প্রস্তুত থাকেন।

কর্মজীবনে সাফল্যের ছাপ

বর্তমানে সাইফুল ইসলাম আজাদ প্রভাতী ইন্স্যুরেন্স পিএলসিতে অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অডিট) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কর্মক্ষেত্রে তার সততা, নিখুঁততা এবং দায়িত্বশীলতা সহকর্মী ও ঊর্ধ্বতনদের কাছে তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করেছে।

অফিসে তিনি শুধু একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নন, তিনি অনেকের জন্য অভিভাবকের মতো। নতুন কর্মীদের পথনির্দেশনা, কাজের সঠিক মূল্যায়ন এবং সমস্যা সমাধানে সবসময় এগিয়ে আসেন। তার নেতৃত্বগুণ এবং সবার সঙ্গে সমান আচরণ করার প্রবণতা কর্মক্ষেত্রকে একটি পরিবারে পরিণত করেছে।

জীবনের আকস্মিক চ্যালেঞ্জ

তবে জীবনের পথে চ্যালেঞ্জ কখনো না বলে আসে না। দুই বছর আগে ব্যাংককের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তার হৃৎপি-ে সামান্য সমস্যা আছে। ডাক্তার তাকে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিলেও তিনি এ খবর পরিবারকে জানাননি, কারণ তিনি চাননি মা কিংবা আত্মীয়রা উদ্বিগ্ন হোক।

ফুটবল খেলা তার শখ এবং শরীর সুস্থ রাখার অন্যতম উপায়। কিন্তু গত ১ আগস্ট প্রতিদিনের মতো খেলা শেষে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন। দ্রুত নিজেই ড্রাইভারসহ বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হন, যেখানে কার্ডিওলজি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের তত্ত্বাবধানে এনজিওগ্রাম করে দেখা যায়, তার বুকে তিনটি ব্লক। পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে একটি রিং বসানো হয়।

পরিবার ও বন্ধুদের ভালোবাসা

এ খবর পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই পরিবারের সবাই হাসপাতালে ছুটে আসেন। দূর চট্টগ্রাম থেকে বিমানে আসেন বড় ভাই মোহাম্মদ মোহসিন কাউছার এবং মোরতজা আলী নয়ন। ছোট ভাই মোহাম্মদ সাইদুজ্জামান কমল আবেগে ভেঙে পড়েন, সারারাত সিসিইউর সামনে অপেক্ষা করেন এবং সবার কাছে দোয়া চান। আজাদের কাজিন সালাউদ্দিন সোহাগ, ভাগনে এবং অসংখ্য আত্মীয়-বন্ধুর ভিড়ে হাসপাতালের করিডোর যেন ভালোবাসার সমাবেশে পরিণত হয়।

পরের দিন তার আরও একটি রিং বসানো হয়। ধীরে ধীরে সুস্থতার পথে ফিরে আসেন আজাদ। ৫ আগস্ট ডাক্তার তাকে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেন এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন, ধূমপান সম্পূর্ণ বর্জন, নিয়মিত ওষুধ সেবন, ভারী জিনিস তোলা থেকে বিরত থাকা এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।

দায়িত্ববোধের অসাধারণ দৃষ্টান্ত

অনেকে হয়তো এত বড় শারীরিক ধকলের পর দীর্ঘদিন বিশ্রামে থাকতেন। কিন্তু আজাদ ভিন্ন। দায়িত্ব তার কাছে শুধু একটি শব্দ নয়, এটি তার নৈতিক অঙ্গীকার। সুস্থ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি অফিসে উপস্থিত হন, সহকর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন এবং সবাই তার দ্রুত পূর্ণ সুস্থতার জন্য দোয়া করেন।

আজাদের গল্পের শিক্ষা

আজাদের গল্প শুধু একটি ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সংকট কাটিয়ে ওঠার নয়। এটি ধৈর্য, পারিবারিক ভালোবাসা, দায়িত্ববোধ এবং ইতিবাচক মনোভাবের গল্প।

আমরা অনেক সময় জীবনের ছোটখাটো সমস্যায় হতাশ হয়ে পড়ি, কিন্তু আজাদ দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছাশক্তি থাকলে এবং চারপাশের মানুষের ভালোবাসা পেলে যেকোনো চ্যালেঞ্জ জয় করা সম্ভব।

তার মতো মানুষদের গল্প পাঠকের মনে আশা জাগায়। আমাদের সমাজে এমন মানুষ যত বেশি হবে, তত বেশি দৃঢ় হবে আমাদের মানবিক বন্ধন।

সাইফুল ইসলাম আজাদ একজন সফল পেশাজীবী, দায়িত্বশীল পরিবারের সদস্য, দানশীল সমাজসেবক এবং মানবিকতার প্রতীক। তার জীবন আমাদের শেখায়, সাফল্য শুধু পদবিতে নয়, এটি মানুষের মনে জায়গা করে নেওয়ার ক্ষমতায়।

আজাদের জন্য আমরা সবাই দোয়া করি তিনি যেন সুস্থ থাকেন, পরিবারের সঙ্গে সুখে থাকেন, এবং তার আলোকিত পথচলা আমাদের অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকে চিরকাল।

মো. আফজাল হোসেন 
কলামিস্ট, সমাজ বিশ্লেষক এবং সাংবাদিক

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!