# অটোরিকশা-ইজিবাইকে চলছে পণ্য-চিকিৎসার প্রচার-প্রচারণা
# সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে উচ্চৈঃশব্দের মাইক
# দৈনন্দিন কাজ সারতে সমস্যায় পড়ছে মানুষ
# পড়াশোনায় মনোযোগ নষ্ট করছে শিক্ষার্থীদের
# মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে মানা হয় না বিধান
# গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নে অতিষ্ঠ মানুষ
# অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব: ইউএনও
রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকে মাইক লাগিয়ে এলইডি বাল্ব, ডিটারজেন্ট পাউডার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রাইভেট হাসপাতাল, প্যাথলজি, কিন্ডারগার্টেন, কোচিং সেন্টারে, ভর্তিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার-প্রচারণা চলছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই প্রচার আর গাড়ির হাইড্রোলিক হর্নে অতিষ্ঠ লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাস দেড়েক ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে রিকশা, ইজিবাইক ও অটোরিকশায় উচ্চৈঃশব্দের সাউন্ড সিস্টেম বা মাইক ব্যবহার করে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে চিকিৎসক, কিন্ডারগার্টেন, কোচিং সেন্টারগুলোতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রচার চলছে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। ফলে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়গুলোতে দৈনন্দিন কাজ সারতে সমস্যায় পড়ছেন লোকজন।
গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত রায়পুর এলাকায় অবস্থান করে দেড় ঘণ্টা সময়ের মধ্যে উপজেলার অন্তত তিনটি এনার্জি-এলইডি বাল্ব, একটি স্থানের ধর্মীয় প্রচার, একটি দোকানের প্রচার, একটি কিন্ডারগার্টেন, দুটি ডায়াগনস্টিক, ১৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রচার শোনা যায়।
এর মধ্যে উচ্চৈঃশব্দে মাইক বাজিয়ে এনার্জি সেভার বৈদ্যুতিক বাল্ব বিক্রি করছিলেন আরিফ মিয়া (৩০)। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতাকে আকৃষ্ট করতে ও দূর-দূরান্তের বাল্বের বিষয়ে জানাতে মাইক বাজাতেই হয়।
রাখালিয়া বাজার এলাকার শিক্ষার্থী শারমিন বলেছেন, আমাদের এইচএসসি পরীক্ষা চলছে, সন্ধ্যায় মাইকের কর্কশ আওয়াজে পড়ার মনোযোগ নষ্ট করে দেয়, মাথা ধরে যায়।
ডাকাতিয়া নদীর পাড় এলাকার বাসিন্দা শিমুল মিলকী বলেন, শহরে উচ্চৈঃশব্দে রাত-দিন মাইকিং চলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে উচ্চৈঃশব্দে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে। ঘুমানো যায় না। মাথা ব্যথা করে। এসব বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জেল-জরিমানাসহ কঠোর নজরদারি না হলে এই উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সহনীয় মাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত শব্দ মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ। মাত্রাতিরিক্ত শব্দদূষণে শ্রবণশক্তি লোপসহ উচ্চ রক্তচাপ, মাথাধরা, খিঁটখিঁটে মেজাজ, বিরক্তি বোধ, অনিদ্রা, হৃদযন্ত্রের সমস্যাসহ নানা রকম মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়।
নাক-কান-গলার সহকারী অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, শব্দদূষণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরা। তাদের মানসিক বিকাশের অন্তরায় শব্দদূষণ। শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলের ওপরে হলে শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়।
শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬-এ ‘নীরব’, ‘আবাসিক’, ‘মিশ্র’, ‘বাণিজ্যিক’ ও ‘শিল্প’Ñ এই পাঁচ এলাকা চিহ্নিত করে শব্দের মানমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বিধিমালায় নীরব এলাকায় দিনে (ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা) ৫০ ডেসিবেল ও রাতে (রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা) ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫, রাতে ৪৫, মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০, রাতে ৫০, বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০, রাতে ৬০ ও শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫, রাতে হবে ৭০ ডেসিবেল।
বিধিমালায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে মাইক, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধানও আছে, কিন্তু রায়পুরে মাইকিংয়ের ক্ষেত্রে এ বিধান মানা হয় না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে কেউ এসে যদি অভিযোগ করে, তাহলে আমরা ব্যবস্থা নেব। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান পরিচালনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন আর রশীদ পাঠান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন , শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬-এর ১৮ নম্বর ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদ- বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদ- বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় দ-ে দ-নীয় হবেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন