চীন ‘৯৯৬’ ওয়ার্ক কালচার বা কাজের সংস্কৃতির জন্য সুপরিচিত। এর মানে হলো, সেখানকার মানুষ সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করে এবং সপ্তাহে ছয় দিনই এভাবে কাজ চলে। ভারতের প্রযুক্তি ও আর্থিক খাতের অনেক কর্মীকে বৈশ্বিক চাহিদা মেটাতে দীর্ঘ ও অস্বাভাবিক সময়ে কাজ করতে হয়। ন্যাচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, চার দিনের কর্মসপ্তাহ কর্মীর মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
এ ব্যাপারে বস্টন কলেজের গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছ থেকে চারটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। এসব হচ্ছেÑ ক্লান্তি, কাজের সন্তুষ্টি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। প্রধান গবেষক ওয়েন ফ্যান ট্রায়ালের ব্যাপারে বলেন, আমরা দেখেছি, কর্মীদের সুস্থতা বেড়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোও উৎপাদনশীলতা ও আয়ের ক্ষেত্রে তাদের উন্নতি দেখেছে। এ জন্য ট্রায়াল শেষ হওয়ার পর ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু রাখার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, কর্মসপ্তাহ ছোট থাকা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, যা কর্মজীবনের ভারসাম্য উন্নত করে এবং জীবনের প্রতি সন্তুষ্টি বাড়ায়। তবে এর আগে এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় কর্মঘণ্টা মস্তিষ্ক গঠনেও প্রভাব ফেলতে পারে। কর্মসপ্তাহ ছোট হলে শরীরের জন্য ভালো। কিন্তু এসব জানার পরও তাহলে এটি বাস্তবায়ন কেন হচ্ছে না? চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশে দীর্ঘ সময় কাজ করাকে গৌরবের ব্যাপার হিসেবে দেখা হয়। বলেন প্রফেসর ফ্যান। জাপানের মানুষ তো কোনো পারিশ্রমিক ছাড়াই এত বেশি কাজ করে যে অতিরিক্ত কাজের কারণে মৃত্যুর জন্য সে দেশে আলাদা একটি শব্দ আছে, কারোশি।
জাপানের শ্রমবাজার ও কাজের সংস্কৃতি বিশেষজ্ঞ হিরোশি ওনো বলেন, জাপানে কাজ শুধু কাজ নয়, এটা যেন সামাজিক রীতি। কোনো কাজ না থাকলেও মানুষ সময়ের আগেই অফিসে আসে এবং দেরিতে যায়। কাজের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখানোর জন্য তারা এটি করে থাকে। ‘এটা আসলে প্রদর্শনমূলক। মার্শাল আর্টে যেমন নির্দিষ্ট ভঙ্গি বা কৌশল মেনে চাল দিতে হয়, এখানেও তেমনি কাজ করলে তা দেখানোর একটি বিষয় আছে।’ তিনি বলেন, জাপানের সমষ্টিবাদী সংস্কৃতি এই প্রবণতাকে উসকে দেয়। কেউ যদি শুক্রবার ছুটি নিতে শুরু করে, অন্যরা ভাবেÑ ও কেন আজ কাজ এড়াতে পারছে? ব্যাখ্যা করেন তিনি।
জাপানে আইনগতভাবে এক বছরের পিতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা আছে। কিন্তু সেটিও অনেকে নেয় না। কারণ তারা সহকর্মীদের অসুবিধায় ফেলতে চায় না, বলেন হিরোশি ওনো। অধ্যাপক ওয়েন ফেন বিশ্বাস করেন যে তাদের এই গবেষণার মতো আরও ট্রায়ালে ধীরে ধীরে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। এমনকি যেসব দেশে অতিরিক্ত কাজের সংস্কৃতি রয়েছে, সেখানেও। আইসল্যান্ডের প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ এখন তুলনামূলক কম সময় ধরে কাজ করেন এবং তাদের এখন সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা কমিয়ে নেওয়ার অধিকার রয়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ফ্রান্স, স্পেন, ডোমিনিকান রিপাবলিক, বতসোয়ানাসহ আরও কয়েকটি দেশেও এই একই পরীক্ষা চালানো হচ্ছে বা হয়ে গেছে। এ বছরের শুরুর দিকে জাপানের টোকিওতে সরকারি কর্মচারীদের জন্য চার দিনের কর্মসপ্তাহের পাইলট কর্মসূচি শুরু হয়েছে। দুবাইও সম্প্রতি তাদের সরকারি কর্মীদের জন্য একই ধরনের গ্রীষ্মকালীন উদ্যোগ চালু করেছে। এ ছাড়া, ২০২৫ সালের অক্টোবর থেকে দক্ষিণ কোরিয়া পরীক্ষামূলকভাবে ৬৭টি প্রতিষ্ঠানে সাড়ে চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু করবে।
টানা পাঁচ দিন কাজ করো, তারপর দুই দিন ছুটি কাটাও, এরপর আবার পরের সপ্তাহের জন্য প্রস্তুতি নাও। কিন্তু বিষয়টি যদি এমন না হতো, তাহলে কেমন হতো? ন্যাচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালে প্রকাশিত বড় এক গবেষণায় দেখা গেছে, চার দিনের কর্মসপ্তাহ মানুষের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
বস্টন কলেজের গবেষকেরা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের ১৪১টি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছ থেকে চারটি বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। সেগুলো হলোÑ ক্লান্তি, কাজের সন্তুষ্টি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য। ট্রায়ালের বিষয়ে প্রধান গবেষক ওয়েন ফ্যান বিবিসিকে বলেন, আমরা দেখেছি, কর্মীদের সুস্থতা বেড়েছে। কোম্পানিগুলোও উৎপাদনশীলতা ও আয়ের ক্ষেত্রে উন্নতি দেখেছে। তাই, ট্রায়াল শেষ হওয়ার পর ৯০ শতাংশ কোম্পানি চার দিনের কর্মসপ্তাহ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন