আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী মনোনয়নে গুণগত পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা করছে দলটি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে দলের তরুণ নেতৃত্বের ভূমিকায় তাদের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে হাইকমান্ডের। তাই আগামী নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলের একাধিক সিনিয়র নেতা। দলের হাইকমান্ড থেকে এ বিষয়ে সবুজ সংকেত পেয়ে ইতিমধ্যে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতারা ভোটের মাঠে সক্রিয় হয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির হাইকমান্ডের ইতিবাচক সিদ্ধান্তের পর প্রায় দেড় শতাধিক তরুণ প্রার্থী দলের ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী দলের গুডবুকে রয়েছেন বলে বিএনপির গুলশান ও নয়া পল্টনের অফিস সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, পদে থেকে বিশেষ করে গত বছরের ৫ আগস্টের পর যারা বিএনপিকে মানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, তাদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের ভাবমূর্তি রক্ষা, শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও সত্যিকারের গুণগত পরিবর্তন আনার ওপর জোর দিচ্ছেন তিনি। এজন্য বারবার মাঠপর্যায়ে কাজ করতে তরুণদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ জন্য গত বছর নানা অপকর্মে যুক্ত থাকায় ৬ হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বিএনপি।
দলের হাইকমান্ড সূত্র মতে, ক্লিন ইমেজ ও সংগঠনের প্রতি নিবেদিত এবং আওয়ামী ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে থাকা তরুণ নেতাদেরই নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া দলের প্রধান লক্ষ্য। এ জন্য সারা দেশের দেড় শতাধিক আসনে তরুণ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দলের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীরাও।
জানা গেছে, তরুণ নেতৃত্বের উৎসাহিত করার পাশাপাশি বারবার নির্বাচনে অংশ নিয়েও জিততে না পারা বা বিতর্কিত কর্মকা-ে যুক্ত সিনিয়র নেতাদের মনোনয়নও সীমিত করা হতে পারে। তবে নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেও মন্ত্রিসভায় এসব সিনিয়র নেতার স্থান নাও হতে পারে। তবে দলীয় মনোনয়ন ও আসন বণ্টন প্রক্রিয়া নির্বাচন ঘোষণার পর চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে সম্ভাব্য তরুণ প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই নিজ নিজ এলাকায় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে গণসংযোগ ও সাংগঠনিক কাজ করছেন। রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের তরুণ নেতারা প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে নিজ নির্বাচনি এলাকায় যাচ্ছেন। অনেকে আবার এলাকায় থেকে স্থানীয়দের মন জয় করতে নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ বিষয়ে রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আশা করি ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে, সেটা নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে।
প্রার্থী বাছাইয়ে জরিপ চলছে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে বিএনপির পক্ষ থেকে এমপি প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় ও ত্যাগী নেতাÑ যারা হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে মাঠে সক্রিয় ছিলেন তারা বিশেষ অগ্রাধিকার পাবেন’।
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য, সৎ ও জনপ্রিয় নেতা এবং আন্দোলনে অবদান রাখা প্রার্থীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে’।
তিনি আরও বলেন, ‘আজকে যারা নতুন প্রজন্ম, তারাই আগামী দিনে বাংলাদেশ পরিচালনা করবে। গুরু দায়িত্ব পালনে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তবে তরুণদের মনে রাখতে হবে এই দেশটি তোমাদের। দায়িত্ব পেলে দেশ উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে’।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এবার মনোনয়ন প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে হবে এবং নির্বাচন কমিশনের শিডিউল ঘোষণার পর বিএনপি প্রার্থিতা চূড়ান্ত করবে। এক্ষেত্রে দলের যোগ্য ও তরুণদের কথা বিবেচনায় নিবে, যেটা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে’।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব (সাধারণ সম্পাদক) রবিউল ইসলাম নয়ন বলেন, ‘নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ে তরুণদের অগ্রাধিকার দিবে বিএনপি, দলের এমন সিদ্ধান্তকে দেশের মানুষ স্বাগত জানিয়েছে। বিএনপি দেশকে এগিয়ে নিতে সর্বদা চেষ্টা করছে। আপনারা দেখেছেন, এই তরুণদের হাত ধরে স্বৈরাচার এরশাদ ও ফ্যাস্টিস হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। এ ছাড়া এই তরুণ ও যুবসমাজই পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছিল’।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মো. রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ‘বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ হলো তরুণনির্ভর দেশ। এ জন্য তরুণদের নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি চমৎকার। দলের এমন সিদ্ধান্তকে মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছেন’।
ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদলের সদস্যসচিব (সাধারণ সম্পাদক) মাহফুজ উর রহমান লিপকন বলেন, ‘নব্বইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দেশের প্রতিটি গণআন্দোলনে ছাত্রসমাজ ছিল অগ্রণী ভূমিকায়’।
সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক (সভাপতি) ইমাম হোসেন বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণের বাংলাদেশ। এই তরুণ সমাজ বরাবরই দেশের সব সংকটে নিজেদের জীবন বিলিয়ে দিয়ে দেশ রক্ষায় কাজ করেছে। যেমন স্বৈরাচার হাসিনা ও এরশাদের পতন এই তরুণ, ছাত্র ও যুবসমাজের হাতে ধরেই হয়েছে’। 
 

 
                             
                                    

 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন