কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীর দুর্গম চরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনায় প্রকৃত অপরাধীদের বাদ দিয়ে সংঘর্ষে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের আসামি করার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার বিকেলে নিহত ম-ল গ্রুপের পক্ষ থেকে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শতাধিক সদস্য অপরাধীদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পদ্মার চরে অভিযান শুরু করেন। তবে তারা এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেননি।
এর আগে গত সোমবার সকালে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার ম-ল গ্রুপ ও দৌলতপুরের প্রকৌশলী কাকন বাহিনীর মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে গোলাগুলিতে উভয় পক্ষের তিনজন নিহত হন। তারা হলেনÑ ম-ল গ্রুপের আমান ম-ল (৩৬), নাজমুল ম-ল (২৬) এবং কাকন বাহিনীর লিটন আলী ঘোষ (৩০)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের পর মরিচা ইউনিয়নের প্রভাবশালী কয়েক ব্যক্তি পূর্ববিরোধের জেরে ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয় এমন ব্যক্তিদের মামলায় জড়ানোর চেষ্টা করছেন। বিগত সময়ে কাকন বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে এমন মানুষকেও মামলায় আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে, যা নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মামলার এজাহার অনুযায়ী, মরিচা ইউনিয়নের ভুরকা হাটখোলাপাড়া এলাকার মৃত আলিম সরদারের ছেলে উজ্জ্বল সরদার (৪৫) ও তার ভাই রফিকুল সরদারকে (৪৩) মামলার ২ ও ৩ নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উজ্জ্বল সরদারের ভাই হিসাব সরদার বলেন, উজ্জ্বল সরদার দৌলতপুরে নদীভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলার ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল ওই কাজ বন্ধ বা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিতে পরিকল্পিতভাবে উজ্জ্বল ও রফিকুলকে মামলায় ফাঁসিয়েছে।
উজ্জ্বল সরদার বলেন, ‘আমি একজন ঠিকাদার। নদীভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ করছি। একজন সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা কাজটি বন্ধ করতে প্রতিপক্ষকে দিয়ে আমাদের দুই ভাইকে আসামি করিয়েছেন। সংঘর্ষের সময় আমি বাড়িতেই ছিলাম। এর সিসিটিভি ফুটেজও রয়েছে। কাকন বাহিনীর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’
মামলার বাদী নিহত আমান ম-লের বাবা মিনহাজ ম-ল বলেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজন তার ছেলে, অন্যজন ভাগনে। নিরীহ লোকজনকে মামলায় জড়ানোর অভিযোগ সম্পর্কে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে মরিচা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ‘২০০৩-২০০৪ সালের দিকে কাকন বাহিনীর (তৎকালীন পান্না বাহিনী) হাতে উজ্জ্বলের পরিবারও নির্যাতনের শিকার হয়েছিল। তখন তার দুই চাচাতো ভাই নিহত হন। উজ্জ্বল সরদারের মতো একজন লোক পদ্মার চরে গিয়ে এমন হত্যাকা- ঘটাবেন, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।’
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‘তদন্তে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হবে, শুধু তারাই গ্রেপ্তার হবেন। যারা নির্দোষ, তারা অবশ্যই অব্যাহতি পাবেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন