- সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ তুললেন আবিদুল ইসলাম
- কাদেরের পাশে ছাত্রদল সভাপতি; আবেগঘন পোস্ট আখতারের
ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখসারিতে বুক চিতিয়ে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীরা। নানামুখী হামলা-নির্যাতন ও গুলি মোকাবিলা করে ছাত্রদের সঙ্গে সমানতালে রাজপথে ছিলেন তারা। তবে অভ্যুত্থানের এক বছরের মাথায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রার্থিতার ক্ষেত্রে নারীরা রয়েছেন পিছিয়ে। ডাকসুতে ২৮টি পদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে, যার প্রার্থী ৪৭১ জন। তাদের মধ্যে নারী প্রার্থী ৬২ জন, যা মোট প্রার্থীর মাত্র ১৩ শতাংশ। যদিও ডাকসুতে মোট ভোটারের ৪৮ শতাংশই ছাত্রী। এদিকে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রতিদিনই প্রার্থীরা দিচ্ছেন বিভিন্ন অভিযোগ।
ছাত্রদল সমর্থিত সহসভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম গতকাল শুক্রবার দাবি করেছেন, ‘রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে নেমেছে ও সাইবার বুলিং করছে। বারবার নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়েও ষড়যন্ত্র বন্ধ করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।’ এদিকে, নানা ‘হেনস্তার’ শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। এ ছাড়া কাদেরকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
প্রার্থিতায় পিছিয়ে ছাত্রীরা
গণঅভ্যুত্থানে সম্মুখে থাকলেও ডাকসুর মতো শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের মঞ্চে প্রার্থিতায় কেন পিছিয়ে? এ বিষয়ে শিক্ষার্থী বলছেন, নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। মতের সঙ্গে না মিললেই অব্যাহতভাবে কুৎসা রটানো হচ্ছে। যারা এমন পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই ট্রমায় আছেন। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্রীদের অনেকে প্রার্থী হওয়ার ঝুঁকি গ্রহণ করেনি। অনেকে ঝামেলা এড়াতে প্রার্থী হননি।
ঢাবির সাবেক এক নারী শিক্ষার্থী বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাসে দেখা যায়, ইস্যুভিত্তিক কোনো প্রক্রিয়া যেখানে থাকে, সেখানে অবশ্যই নারীরা থাকেন। তবে পরে তারা আর থাকতে পারেন না। নারীর জায়গা কিছু সময়ের জন্য ইস্যুভিত্তিক হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র থেকে নারীর ভূমিকাকে টেকসই করার কাঠামো এখনো তৈরি হয়নি।
ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় ছাত্রদের চেয়ে পিছিয়ে নেই ছাত্রীরা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থীর ৫২ শতাংশই ছিলেন ছাত্রী। এর আগে ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত পাঁচ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৪৪ শতাংশই ছাত্রী।
সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ
রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে একটি গোষ্ঠী অপপ্রচারে নেমেছে ও সাইবার বুলিং করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম। গতকাল শুক্রবার দুপুরে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমরা একটি সুন্দর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেই আশা রাখছি। কিন্তু শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যে জায়গাটাতে আমরা কনসার্ন জানিয়ে আসছি, সেটি হচ্ছে সাইবার বুলিং।’ প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব উল্লেখ করে আবিদুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচনের সময় সব প্রার্থী নির্বাচন কমিশনের অধীন থাকে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়া কমিশনের দায়িত্ব। নির্বাচন কমিশনকে আমরা জানিয়েছি, যদি আপনারা এই সাইটগুলো বন্ধ করতে ব্যর্থ হন, তাহলে গোটা জাতিকে আপনারা সেটি জানান যে আসলে সেটি আপনারা পারছেন না। কারণ, ডাকসু নির্বাচন এখন আর শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয় নয়, গোটা বাংলাদেশের স্থিতিশীলতার বিষয়। গোটা বাংলাদেশের স্বার্থ এখানে জড়িত।’
সাইবার বুলিং বন্ধ করতে রাষ্ট্রকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সহযোগিতা করতে হবে বলে মনে করেন আবিদুল ইসলাম। অনলাইনে যে অপপ্রচার চলছে, সেই ব্যাপারে পুরো জাতিকে সতর্ক করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।
ছাত্রদলের এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘আমরা যখন প্রচারে যাচ্ছি, অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে। এত দিন পরে এসে মনে হচ্ছে, আসলেই সঠিক ছাত্ররাজনীতির চর্চাটা করছি। শ্রদ্ধা, স্নেহ, সহনশীলতা, সহমর্মিতা ও জবাবদিহির আওতায় ছাত্ররাজনীতি করছি।’
এদিকে, বিভিন্ন হেনস্তার শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর ডাকসুর ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদেরের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব। ‘আমার ডাকসুতে জেতা লাগবে না, কেবল বেঁচে থাকতে চাই’Ñ কাদেরের এমন পোস্টের ঘণ্টা কয়েক পর গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে রাকিব লেখেন, ‘কাদের তোমাকে কথা দিচ্ছি, রাজাকার, আলবদর, আলশামসদের বংশধরদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল তোমার পাশে সর্বাত্মকভাবে থাকবে ইনশাআল্লাহ। আলবদর বাহিনীর কমান্ডারদের আসল চরিত্র উন্মোচিত হয়েছে।’ তিনি লেখেন, ‘সাইবার বুলিংয়ের জন্য প্রশিক্ষিত শিবিরের নেতাকর্মী, গুপ্ত বাহিনী, সমর্থক, সাথিবৃন্দ, জনশক্তি দ্বারা শুধু সচেতন নারী নেতৃত্বই নয়, বিরোধী মতাদর্শের সবাই ধারাবাহিকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এদের চিহ্নিতপূর্বক বিচারের আওতায় নিয়ে আসতেই হবে, সেই দাবি করছি। সময়ের পরিক্রমায়, অপরাধীদের বিচার সুনিশ্চিত। ’
এই ইস্যুতে, এনসিপি নেতা আক্তার হোসেন তার ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে কাদেরের সঙ্গে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণা করেন। আখতার লিখেছেন, ‘২০২২ সালে আবরার ফাহাদের শাহাদাতবার্ষিকীর কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ হামলা চালায়। পরে আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে গেলে সেখান থেকে পুলিশ আমাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।’ সেই সময় কাদেরের সঙ্গে জেলে থাকার অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বয়সে ছোট হলেও কাদের তখন আমাকে সাহস জুগিয়েছিল। জুলুম-নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে হাসিনার পতন ঘটানোর স্বপ্নের কথাও জানিয়েছিল সে।’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘ক্যাম্পাসজীবনে অসংখ্য হুমকির মধ্যেও কাদের সব সময় মাথা উঁচু করে প্রতিবাদ করেছে। অন্যরা নিরাপদ থাকার পথ বেছে নিলেও কাদের সামনে এসে ঝুঁকি নিয়েছে।’ আখতার তার পোস্টে উল্লেখ করেন, ‘গত বছরের অভ্যুত্থানের সময় আন্দোলন দুর্বল করার জন্য আট দফা সামনে আনা হলে, তখনই কাদের সাহস করে নয় দফা ঘোষণা দিয়েছিল। তার সেই উদ্যোগ আন্দোলনকে এক দফার পথে এগিয়ে নিতে সহায়তা করেছে।’
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আখতার লেখেন, ‘আমি তখন সামর্থ্যরে মধ্যে ছোট ছোট কাজ করেছি। কিন্তু ৫ আগস্টের বিজয়ের পর কাদের পুরো ক্যাম্পাসকে আপন করে নিয়েছে। ২০১৯ সালে ছাত্রাবস্থায় ভিপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা ছিল তার। তবে ২০২৫ সালে ডাকসু নির্বাচন হলেও তিনি আর ক্যাম্পাসে নেই। এখন কাদের ভিপি পদে লড়ছে। কাদেরের জন্য অনেক দোয়া রইল।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন