আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। গত মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। গত জুলাই মাসে এই হার ছিল ৮ দশমিক ৫৫। গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি যা হয়েছে, তা গত ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। ২০২২ সালের জুলাই মাসে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিল। এরপর আর কখনো ৮ শতাংশের নিচে মূল্যস্ফীতি নামেনি। গতকাল রোববার বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) গত আগস্ট মাসের মূল্যস্ফীতি চিত্র প্রকাশ করেছে।
বিবিএসের হিসাব অনুসারে, এ বছর জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ। সে হিসাবে আগস্টে মূল্যস্ফীতির হার কিছুটা কমেছে। আগস্টের মূল্যস্ফীতির এই হার ৩৭ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে এই হার ছিল ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ মূল্যস্ফীতির মানে হলো, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে যে পণ্য বা সেবা ১০০ টাকায় মিলেছে, তা চলতি বছরের আগস্টে কিনতে খরচ করতে হয়েছে ১০৮ টাকা ২৯ পয়সা। গত বছর জুলাই মাসে আন্দোলনের ধাক্কায় সার্বিক মূল্যস্ফীতি উঠেছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে। জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পরের কয়েক মাস সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ ও ১০ শতাংশের মধ্যেই ওঠানামা করছিল। এ বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ০৫ শতাংশে নেমে আসার তথ্য দেয় বিবিএস। জুনে তা আরও কমে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়। কিন্তু এক মাস বাদে অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়। আগস্টে মূল্যস্ফীতি সামান্য কমলেও এই হার সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অনেকটা উপরে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ধরে রাখার লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। সেই লক্ষ্য পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদের উচ্চ হার ধরে রেখেছে।
বিবিএস এর সবশেষ তথ্য বলছে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে এলেও আগস্ট মাসে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। জুলাই মাসের ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। জুলাই মাসে খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অগাস্ট মাসে তা কমে ৮ দশমিক ৯০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। জুলাই মাসে গ্রামাঞ্চলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে ৮ দশমিক ৩৯ শতাংশ হয়েছে, যা জুলাইয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছিল। আর শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি জুলাইয়ের ৮ দশমিক ৯৫ শতাংশ থেকে কমে আগস্ট মাসে ৮ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে।
মূলত মূল্যস্ফীতি একধরনের করের মতো। আপনার প্রতি মাসে আয়ের পুরোটাই সংসার চালাতে খরচ হয়ে যায়। কিন্তু হঠাৎ জিনিসপত্রের দাম বাড়লে এবং সে অনুযায়ী আপনার আয় না বাড়লে আপনাকে ধারদেনা করে সংসার চালাতে হবে কিংবা খাবার, কাপড়চোপড়, যাতায়াতসহ বিভিন্ন খাতে কাটছাঁট করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মজুরি বৃদ্ধি বা আয় বৃদ্ধি কম হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট বাড়ে। প্রকৃত আয় কমে যায়।
তবে মূল্যস্ফীতির হার কমে যাওয়া মানে জিনিসপত্রের দাম কমে যাওয়া নয়। অন্যান্য মাসের তুলনায় ওই নির্দিষ্ট মাসে মূল্যবৃদ্ধি হয়তো কিছুটা কম হয়েছে এটাই বোঝায়। উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বাজার থেকে পণ্য ও সেবা কিনতে যদি আপনার খরচ হয় ১০০ টাকা। ২০২৫ সালের গত আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ২৯ শতাংশ হওয়ার মানে হলো, ২০২৫ সালের আগস্ট মাসে অর্থাৎ এক বছর একই পণ্য ও সেবা কিনতে আপনাকে ১০৮ টাকা ২৯ পয়সা খরচ করতে হয়েছে। প্রতি ১০০ টাকায় আপনার খরচ বেড়েছে ৮ টাকা ২৯ পয়সা।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন