বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১১ পিএম

সিলেটে সড়কে প্রাণহানি বাড়ছেই

আব্দুল আহাদ, সিলেট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৫, ১১:১১ পিএম

সিলেটে সড়কে প্রাণহানি বাড়ছেই

  • দুই মাসে ৫২ মৃত্যু
  • প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অব্যবস্থাপনায় অনিরাপদ সড়ক

ক্রমেই অনিরাপদ হয়ে উঠছে সিলেটের সড়কগুলো। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে প্রাণহানি। এর ফলে সিলেটে চলাচলের সড়কগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত দুই মাসে ৫২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এই জেলার সড়কে। আহত হয়েছেন অন্তত ১৪৩ জন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বড় দাগে অন্তত ছয় কারণে সিলেটে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। খানাখন্দে ভরা রাস্তা, ট্রাফিক আইন না মানা, মেয়াদোত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, অদক্ষ ও লাইসেন্সবিহীন চালক দিয়ে গাড়ি চালানো, সিএনজির আধিক্য, সড়ক ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক ব্যর্থতা সিলেটের সড়ককে করে তুলেছে ঝুঁকিপূর্ণ।

নিরাপদ সড়ক চাই-(নিসচা) সিলেট বিভাগীয় কমিটির তথ্য বলছে, দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর এই হার ক্রমেই ভয়াবহ রূপ নিচ্ছেÑ কিন্তু কর্তৃপক্ষের তৎপরতা রয়ে গেছে হতাশাজনকভাবে নিষ্ক্রিয়।

দুই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহী, সিএনজি ও লেগুনার চালক ও যাত্রী, পথচারী এবং পণ্যবাহী যানবাহনের চালকরাও। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছেন মোটরসাইকেল আরোহীরা। আগস্টে একাই প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন বাইকার।

এ মাসের শুরুর দিকে মালনীছড়া চা-বাগান এলাকায় ট্রাক, মোটরসাইকেল ও সিএনজির ত্রিমুখী সংঘর্ষে ২০ বছর বয়সি যুবক ফাহাদের মৃত্যু এবং তার ভাইসহ আরও তিনজনের গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা সিলেটের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্যের প্রতিচ্ছবি। এ দুর্ঘটনা শুধু একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সিলেটের সড়কে প্রতিদিনই ঘটছে এমন অসংখ্য অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু।

নিসচার প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্ট মাসেই বিভাগের চার জেলায় ২৬টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ২৬ জনের। জেলা ভিত্তিতে সিলেট শহর সবচেয়ে বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যেখানে ১৩টি দুর্ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছেন। সুনামগঞ্জে ৬, মৌলভীবাজারে ৬ এবং হবিগঞ্জে ২ জন নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনার প্রকৃতি বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, দ্রুতগতিতে চলা যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ হারানো, মুখোমুখি সংঘর্ষ এবং গাছ বা বৈদ্যুতিক খুঁটির সঙ্গে সংঘর্ষই বেশি প্রাণঘাতী প্রমাণিত হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিলেটের সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে প্রধান ভূমিকা রাখছে অব্যবস্থাপনা, অপরিকল্পিত যানচলাচল, দায়িত্বহীন চালক এবং দুর্বল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা। অপ্রশিক্ষিত চালক, লাইসেন্স বাণিজ্য, অপর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ এবং রাজনৈতিক প্রভাবে আইন প্রয়োগে শৈথিল্য তৈরি করেছে একটি ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ।

সরকারি দপ্তর থেকে বলা হচ্ছে, দুর্ঘটনা কমাতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপÑ যেমন ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা, সড়ক সম্প্রসারণ, আধুনিক ড্রাইভিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট এবং রোড সেফটি অডিট। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এসব উদ্যোগের বেশির ভাগই কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। সিলেট জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগ কিছু পদক্ষেপ নিলেও মাঠপর্যায়ে তার কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।

নিসচা সিলেটের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম মিশু বলেন, ‘শুধু শাস্তির ভয় দেখিয়ে সড়ক নিরাপদ করা যাবে না। প্রয়োজন অবকাঠামোগত উন্নয়ন, সুশৃঙ্খল যানচলাচল, চালকদের প্রশিক্ষণ এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা।’

সড়ক নিরাপত্তা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত গবেষকরা মনে করেন, প্রযুক্তিগত সমাধানের পাশাপাশি দরকার কঠোর নজরদারি, দুর্নীতি দমন ও চালকদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা। রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক গাফিলতি থাকলে কোনো উদ্যোগই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (ট্রাফিক) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান বলেন, সিলেট শহরে যানবাহনের সংখ্যা দ্রুতগতিতে বাড়লেও রাস্তা ও অবকাঠামো সে অনুপাতে উন্নয়ন পায়নি। ফলে চাপ বাড়ছে প্রতিটি সড়কে। আমরা ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফেরাতে অভিযান জোরদার করেছি, হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল আরোহীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, চালকদের লাইসেন্স ও কাগজপত্র তদারকি বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জানি পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি, তবে মানুষকে সচেতন করতে নিয়মিত ক্যাম্পেইন ও স্কুল-কলেজে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়নে শুধু পুলিশের নয়, সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।


 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!