চার শিশু সন্তানকে নিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন উম রামি নামের এক নারী। পাশেই তার স্বামী গাধায় টানা গাড়িতে মালামাল তুলছিলেন। গত শুক্রবার গাজা নগরীতে বহুতল ভবন মুশতাহা টাওয়ার ধ্বংসের কথা স্মরণ করেন তিনি। উম রামি বলেন, ‘ভয় পাচ্ছি, গাজার অন্য টাওয়ারগুলোর একই পরিণতি হবে। দক্ষিণের দিকে পালিয়ে যাচ্ছি, তবে জানি না সেখানে কী হবে।’
গাজা নগরীর বহুতল ভবনগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালানো হলে সেখানে বসবাস করা প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনির ‘ব্যাপক হারে বাস্তুচ্যুত হাওয়ার বিপর্যয়ের’ ঝুঁকির মধ্যে পড়বেন বলে জানান উপত্যকার জনসংযোগ কার্যালয়ের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওয়াবতা। তিনি বলেন, গাজা নগরীতে ৫১ হাজারের বেশি বহুতল ভবন বা টাওয়ার এবং অ্যাপার্টমেন্ট রয়েছে। এমন বিপর্যয়ের মধ্যে আজ ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেয়ন সার জেরুজালেমে সাংবাদিকদের বলেছেন, হামাসকে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রসমর্পণ করতে হবে। একই সঙ্গে গাজা বন্দী বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে হবে। এর মাধ্যমেই কেবল হামলা থামানো সম্ভব। জবাবে হামাসের কর্মকর্তা বাসেম নাইম রয়টার্সকে বলেছেন, তারা অস্ত্রসমর্পণ করবেন না। তবে জিম্মিদের মুক্তি দিতে রাজি।
ফিলিস্তিনের সংগঠন হামাসকে শেষ সতর্কবার্তা দিয়েছে ইসরায়েল। হামাস যোদ্ধারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সব জিম্মিকে মুক্তি এবং আত্মসমর্পণের দাবি মেনে না নিলে গাজায় হামলার ঝড় তুলবে বলে সতর্ক করেছে। গতকাল সোমবার এ সতর্কবার্তা দেয় ইসরায়েল। গাজার বাসিন্দারা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী তীব্র বোমাবর্ষণ করেছে এবং রাস্তাগুলোয় রাখা সাঁজোয়া যান উড়িয়ে দিয়েছে।
হামাস জানিয়েছে, তারা গত রোববার দেওয়া সর্বশেষ মার্কিন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবটি নিয়ে পর্যালোচনা করছে, এ প্রস্তাবকে হামাসের জন্য ‘শেষ সুযোগ’ হিসেবে বলা হয়েছে। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্টজ এক্সে লিখেছেন, ‘আজ গাজা শহরের আকাশে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে এবং সন্ত্রাসী টাওয়ারগুলোর ছাদ কেঁপে উঠবে।’ তিনি আরও লিখেছেন, গাজা এবং বিদেশের বিলাসবহুল হোটেলগুলোয় হামাসের খুনি এবং ধর্ষকদের জন্য এটি একটি চূড়ান্ত সতর্কবার্তা; জিম্মিদের মুক্তি দাও এবং অস্ত্র জমা দাও। না হলে গাজা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমাদের ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
জেরুজালেমের একটি বাসস্টপে গুলি চালানোর ঘটনায় পাঁচজন নিহত হওয়ার খবর প্রকাশের আগেই কার্টজের পোস্টটি প্রকাশিত হয়েছিল। এদিকে, একজন জ্যেষ্ঠ ইসরায়েলি কর্মকর্তার মতে, গাজার জন্য সর্বশেষ মার্কিন প্রস্তাবে হামাসকে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনেই বাকি ৪৮ জন জীবিত ও মৃত জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, হামাস দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে, তারা আলোচনা সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অন্তত কয়েকজন জিম্মিকে আটকে রাখতে চায়। তারা এক বিবৃতিতে জানায়, যুদ্ধের সমাপ্তির স্পষ্ট ঘোষণা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে না। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি হামাস রোববার জানিয়েছে, তারা ‘অবিলম্বে আলোচনার টেবিলে বসতে’ প্রস্তুত। একে তারা ‘যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষের কিছু ধারণা’ বলে অভিহিত করেছে।
জেরুজালেম থেকে এএফপি এ খবর জানায়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় জিম্মিদের মুক্তির চুক্তিতে রাজি হওয়ার জন্য হামাসকে ‘শেষ সতর্কবার্তা’ দেওয়ার পরপরই হমাসের পক্ষ থেকে এই বিবৃতি এলো। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি হামাস বলেছে, ‘আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে আমরা সমর্থন করি। হামাস এমন যেকোনো উদ্যোগকে স্বাগত জানায় এবং সমস্ত বন্দীদের মুক্তির বিষয়ে আলোচনার টেবিলে অবিলম্বে বসার জন্য প্রস্তুত রয়েছে।’ বিনিময়ে হামাস ‘যুদ্ধের সমাপ্তির স্পষ্ট ঘোষণা, গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাহার এবং গাজা উপত্যকা পরিচালনার জন্য স্বাধীন ফিলিস্তিনিদের একটি কমিটি গঠন চায়, যারা অবিলম্বে তাদের দায়িত্ব শুরু করবে।’এর আগে, ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, ‘ইসরাইল আমার শর্ত মেনে নিয়েছে।
এবার হামাসকেও মানতে হবে। আমি হামাসকে সতর্ক করেছি, শর্ত না মানলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। এটি আমার শেষ সতর্কবার্তা। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখ-ের সবচেয়ে বড় নগরী গাজা সিটিতে ইসরায়েলের হামলায় আরও একটি বহুতল ভবন ধ্বংস হয়েছে। একই দিনে অন্তত ৬৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দা। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০টি ভবন ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে আশ্রয় হারাচ্ছে হাজারো পরিবার। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে ‘শেষ সতর্কবার্তা’ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রোববার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। এ সময় বলেন, জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে অবশ্যই একটি চুক্তি মেনে নিতে হবে।ট্রাম্প বলেন, ‘ইসরায়েল আমার শর্ত মেনে নিয়েছে।
এবার হামাসকেও মানতে হবে। আমি হামাসকে সতর্ক করেছি, শর্ত না মানলে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। এটি আমার শেষ সতর্কবার্তা।’ এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার দাবি করেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময়ের জন্য তিনি একটি প্রস্তাব দিয়েছেন এবং ইসরায়েল এ বিষয়ে পূর্ণ অনুমোদন দিয়েছে। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানিয়েছে, তারা এখনো প্রস্তাবটি “গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে।” ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের রামোট জংশন প্রবেশমুখে হামলার হয়েছে। এই ঘটনায় অন্তত পাঁচজন নিহত এবং ২২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। স্থানীয় সময় সোমবার এ হামলা হয় বলে জানিয়েছে জরুরি সেবা সংস্থা মাগেন ডেভিড আদম (এমডিএ)।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন