ঘন ঘন এই ঢাকার বাইরে ট্যুর- আমার মোটেও সইছিল না। আমি পথ খুঁজছিলাম, কীভাবে ‘কিষান’ ছেড়ে চলে যাওয়া যায়। একদিন এক রিপোর্টের কারণে অফিসে হইচই পড়ে যায়। রিপোর্টটি যৌথভাবে লিখেছিলাম আমি ও হাবিবুল্লাহ রানা। নোমানী ভাই আমাকে ডেকে পাঠালেন। গিয়ে দেখি সেখানে কাজী কাদের এবং কিষান সম্পাদক জয়নাল আবেদিন বসা। নোমানী ভাই-ই শুরু করলেন-জানতে চাইলেন, এই রিপোর্টের ডকুমেন্টস কী আছে। বললাম, রানার কাছে প্রচুর ডকুমেন্টস আছে। তিনি বললেন, তা থাক, এ ধরনের একটি রিপোর্ট করার আগে আমাদের নজরে আনলেন না কেন? আমি সবিনয়ে বললাম, বার্তা সম্পাদকের সঙ্গে পরামর্শ করেই রিপোর্টটি তৈরি হয়েছে- আপনি উনাকে ডাকুন, আমাদের ডেকেছেন কেন? তিনি সঙ্গে সঙ্গে বার্তা সম্পাদক আলতাফ মাহমুদকে ডাকলেন। আলতাফ মাহমুদ সরাসরি জবাব দিলেন, কেন, রিপোর্ট তো ঠিক আছে। এটা নিয়ে এত হইচইয়ের কি আছে! সম্পাদক জয়নাল সাহেব চট করে বলে উঠলেন, ‘আমি বলি নাই চাচা, এরা একটা জোট, রানা একটা গু-া-আর এইটা (আমাকে দেখিয়ে) এদের মাথায় কাঁঠাল ভাইঙ্গা খায়।’
আমরা রিপোর্টিং কক্ষে চলে গেলাম। পরামর্শ করলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, কিষান ছেড়ে দেব। হঠাৎ মুস্তাফিজুর রহমান সাহেব আমার এক ঘনিষ্ঠজন মারফত আমাকে ডেকে পাঠালেন। দেরি না করে তার প্রতিষ্ঠান ‘বিসিআই’-তে দেখা করলাম। তিনি প্রথমে আপ্যায়ন করলেন। তারপর একটি নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘নিন, সাইন করুন’। বিনা বাক্য ব্যয়ে সাইন করে দিলাম। তিনি হাততালি দিতে দিতে বললেন, ‘জানেন, কিসে সাইন করলেন? বললাম, আপনি আর কি লিখে নেবেন- আমার তো কিছু নেই। পরে জানলাম, ডিএফপি থেকে ছাড়পত্র নেওয়া ‘সাপ্তাহিক স্বদেশ খবর’ তিনি আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই ডিক্লারেশন হয়ে গেল। নির্বাহী সম্পাদক হলেন পারভেজ আলম চৌধুরী। মতিঝিল সন্দীপ ভবনের অফিসে যথারীতি ডাক পড়ল। তার কক্ষে ঢুকতেই বসালেন এবং পারভেজ আলমকে ডেকে এনে বললেন, ‘ইনি আজ থেকে জয়েন করবেন-আপনার সেকেন্ড ম্যান, দেখবেন উনার যেন কোনো অমর্যাদা না হয়। কারণ স্বদেশ খবর উনারই ছিল’। যোগ দিলাম।
একে একে সেখানে জয়েন করেন নঈম নিজাম, ইশতিয়াক রেজা এবং মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু। নঈম নিজাম বিএনপি, মঞ্জু আওয়ামী লীগ বিট করতেন। আর ইশতিয়াক রেজা ছিলেন বিশ^বিদ্যালয় প্রতিনিধি। আজ তারা তিনজনই সুপরিচিত, স্বমহিমায় মহিমান্বিত। সেখানে চার পাতা ক্রাইম রিপোর্ট এবং চার পাতা বিনোদন বিষয়ক লেখালেখি করতাম। বেশ ভালোই চলছিল। আচমকা বিনোদন সাপ্তাহিকের ঝোঁক চাপল মুস্তাফিজ সাহেবের মাথায়। ‘চোখে চোখে’ নামের বিনোদন সাপ্তাহিকের ডিক্লারেশনও হয়ে গেল। আবার আমার ডাক-ডিক্লারেশনের ফটোকপি ধরিয়ে দিয়ে বললেন, যান, এটা বের করেন-আপনার অফিস নিচ তলায়। নিচে নেমে এসে দেখি, সাজানো-গোছানো বিশাল এক রুমের অফিস। লোকবল নিয়ে নিলাম। সাইফুল বারী মাসুমকে নিলাম আমার সেকেন্ডম্যান হিসেবে। একে একে যোগ দিলেন, ইয়াদী মাহমুদ, মনিরুল ইসলাম, সাগর সব্যসাচী ও ফরহাদুল ইসলাম ভূঁইয়া।
এক সপ্তাহের প্রস্তুতিতে ‘চোখে চোখে’ বাজারে এলো এবং আশাতীত পাঠক প্রিয়তা পেল। সেই সাফল্যে আমাদের পথচলা আরও শানিত হলো। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে ‘চোখে চোখে’ পাঠকের দরবারে স্থান করে নিল। চলচ্চিত্রসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সাড়া পড়ে গেল।
নিচে নেম এসে দেখি, সাজানো-গোছানো বিশাল এক রুমের অফিস। লোকবল নিয়ে নিলাম। সাইফুল বারী মাসুমকে নিলাম আমার সেকেন্ডম্যান হিসেবে। একে একে যোগ দিলেন, ইয়াদী মাহমুদ, মরিুল ইসলাম, সাগর সব্যসাচী এবং ফরহাদুল ইসলাম ভুঁইয়া। এক সম্পাহের প্রস্তুতিতে ‘চোখে চোখে’ বাজারে এলো এবং আশাতীত পাঠক প্রিয়তা পেল। সেই সাফল্যে আমাদের পথচলা আরও শানিত হলো। আল্লাহ তায়ালার মেহেরবানিতে ‘চোখে চোখে’ পাঠকের দরবারে স্থান করে নিল, চলচ্চিত্রসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনে সাড়া পড়ে গেল। বিসিআইর সিলেট অফিস পরিদর্শনে মুস্তাফিজ সাহেব নিজেও বাজারে খোঁজ নিলেন। এজেন্ট জানালেন, পত্রিকা তো সব বিক্রি হয়ে গেছে। তিনি পুলকিত হলেন। ফিরে এসে আমাকে হোটেল পূর্বানী থেকে স্যুপ এবং চিকেন ফ্রাই এনে খাওয়ালেন। এতে করে আমরা আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে পত্রিকাকে নতুন করে সাজাতে শুরু করলাম।
সেই সময়কার ডাকসাইটে চিত্রনায়িকা অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে করা হলো এক অনুসন্ধানী কাভার স্টোরি। ধর্ম নিয়ে অঞ্জুর ছলচাতুরি শিরোনামের স্টোরিটি দারুণ আলোড়ন তোলে। সব শুটিং শিডিউল বাতিল করে অঞ্জু দুদিন নিজেকে গৃহবন্দি রেখে শুধুই কেঁদেছেন। এরপর এক দৈনিকের সম্পাদকের মধ্যেমে মুস্তাফিজ সাহেবকে ফোন করেন। মুস্তাফিজ সাহেব তাৎক্ষণিক বলে দেন, ‘আই তো এইডা দেহি না, ভূঁইয়া দ্যাহে। আই তারে কই দিমু, আন্নের লগে কথা কইতে।’ ফোন রেখে আমাকে ডাকলেন তিনি। বললেন, ‘হেতি কিঁয়া করে, আন্নের কপাল বিষ করে কিল্লাই।’ উত্তর দিলাম, ‘আই নির্বাহী সম্পাদক, বিষ তো তার তিনি মিটি মিটি আসলেন, বললেন, হেতির লগে কতা কন, বেচারী কান্দের।’ এক দুপুরে কাজের ফাঁকে অঞ্জু আমাকে টেলিফোনে পেয়ে কাঁদলেন এবং বললেন, কাল আমি বেঙ্গল স্টুডিওতে এক চবির ডাবিংয়ে আছি, আসুন কথা বলি। গেলাম। কথা হলো এক লুপ পাবিংয়ের পর। সেসব অনেক বড় কাহিনিÑ সব বলে শেষ রক্ষা যাবে না ও সময় সুযোগ মতো বলার চেষ্টা করব।
কোনো এক সপ্তাহে রোজিনাকে নিয়ে সাক্ষাৎকার ভিত্তিক কাভার স্টোরি করলেন ইয়াদী মাহমুদ, তিনি ভূমিকায় বলেন, রোজিনার বুকের ভেতর বিমানবন্দর।’ রোজিনা মজা পেয়েছিলেন, কিন্তু মাইন্ড করেছিলেন। ধীরে ধীরে চলচ্চিত্র জগতে ‘চোখে চোখে’ এবং আমি হয়ে উঠেছিলাম এক উজ্জ্বল তারকা। আমাকে ছাড়া মহরত বিলম্বিত হতো, আমি না পৌঁছা পর্যন্ত ক্যামেরা স্টার্ট হতো না। পপুলারসহ বহু শুটিং স্পটের এ রকম অনেক ঘটনা আছে। কখনো সময় পেলে বিস্তারিত বলার আশ্বাস এই লেখার ইতি টানছি। শেষাংশে বলি, বাংলার বাণী গ্রুপের সাপ্তাহিক সিনেমা, সিনেবাংলা, ছায়াছন্দ এবং সাপ্তাহিক খবরে- এ ধরনের অনেক গল্প আছে সেই গল্প আজ আর নয়Ñ অন্য কোনো সময় অন্য কোনো সুযোগে বলার আশা রইল।
(শেষাংশ)
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন