*** কোটি টাকা লোকসান
*** হতাশায় প্রতিষ্ঠানের নয় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী
*** কারখানা বন্ধ থাকলেও মাসে ব্যয় প্রায় ২০ কোটি টাকা
চট্টগ্রামের আনোয়ারার রাঙ্গাদিয়ায় অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) গ্যাস সংকটে প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এ সময় প্রায় ৬৭০ কোটি ৩২ লাখ টাকার ইউরিয়া সার উৎপাদন সম্ভব হয়নি। এতে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন প্রতিষ্ঠানের নয় শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী।
গত ১১ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় কারখানার উৎপাদন থেমে যায়। দৈনিক গড়ে ১২০০ টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আসছিল সিইউএফএল। প্রতি টনের বাজারমূল্য ৩৮ হাজার টাকা হলেও কৃষকরা ভর্তুকি মূল্যে পান ২৫ হাজার টাকায়। দৈনিক উৎপাদন মূল্য দাঁড়ায় ৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এই হিসাবে ১৪৭ দিনে ক্ষতি দাঁড়ায় ৬৭০ কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি কারখানা চালু না থাকলেও মাসিক প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয় বহন করতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।
সিইউএফএল সূত্র জানায়, গত দুবছর কখনো যান্ত্রিক ত্রুটি, কখনো গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধু পাঁচ দিন চালু ছিল এ কারখানা। গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ১৩ অক্টোবর কারখানাটি চালু করা হয়। এ বছরের ৩ জানুয়ারি আবারও যান্ত্রিক ত্রুটির (রিঅ্যাক্টরের সমস্যা) কারণে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। মেরামতের পর ২৬ ফেব্রুয়ারি কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়। দেড় মাস কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন চললেও গত ১১ এপ্রিল গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়ায় কারখানাটি আবারও বন্ধ হয়ে পড়ে। সম্পূর্ণ গ্যাসনির্ভর এ কারখানায় পূর্ণ মাত্রায় উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪৫ থেকে ৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের প্রয়োজন হয়। গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ থাকায় গেল ২০২৪-২৫ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি কারখানাটিতে।
টানা উৎপাদন বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ট্রাকচালক, শ্রমিক ও দিনমজুররা। দীর্ঘ সময় বেকার থাকায় তাদের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
বাংলাদেশ কেমিক্যাল ওয়ার্কাস ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুল আজিম সবুজ বলেন, গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ থাকায় গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুধুমাত্র পাঁচ দিনের জন্য সিইউএফএলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে উৎসব বোনাস পায়নি সিইউএফএলের শ্রমিকরা। লক্ষ্যমাত্রা পুনর্নির্ধারণ করেই শ্রমিকদের উৎসব বোনাস প্রদানের পাশাপাশি দ্রুত গ্যাস সরবরাহ দিয়ে কারখানা চালু করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান তিনি।
সিইউএফএলের প্রধান রসায়নবিদ ও মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) উত্তম চৌধুরী বলেন, ‘গ্যাসের অভাবে টানা প্রায় পাঁচ মাস ধরে বন্ধ আছে সিইউএফএল। গ্যাস সরবরাহ পেতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তবে কখন গ্যাস পাওয়া যাবে তা এখনো নিশ্চিত নই।’
সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘উৎপাদন ক্ষতির পাশাপাশি মেশিন দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকায় তা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। গ্যাস পেলে কারখানা চালু করা যাবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জিএম প্রকৌশলী মো. শফিউল আজম খান জানান, ‘সরকারি নির্দেশনা ছাড়া সিইউএফএলে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব নয়।’
১৯৮৭ সালে জাপানের সহায়তায় কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণপাড়ে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানার বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা ছিল পাঁচ লাখ ৬১ হাজার টন ইউরিয়া ও তিন লাখ ১০ হাজার টন অ্যামোনিয়া। বর্তমানে গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ক্ষমতা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন