মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

হিমাগারেই জমে আছে আলু

সজীব আলম, লালমনিরহাট

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৫, ১২:২৭ এএম

হিমাগারেই জমে আছে আলু

  • লোকসানে লালমনিরহাটের কৃষক-ব্যবসায়ীরা
  • ৯টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার টন আলু
  • সরকার কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বিক্রি হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়

মৌসুমের শুরুতে হিমাগারে আলু রেখে এখন বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছেন লালমনিরহাটের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। গেল সপ্তাহে হিমাগার পর্যায়ে জাতভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ১২-১৪ টাকায়। অথচ উৎপাদন থেকে শুরু করে হিমাগারে রাখা পর্যন্ত প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে ২৫-২৬ টাকা। এতে কেজিপ্রতি প্রায় ১৩-১৫ টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের। বস্তাপ্রতি (৬০ কেজি) হিসাব করলে লোকসান দাঁড়াচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা। এ কারণে লোকসানের আশঙ্কায় অনেকেই এখনো হিমাগার থেকে আলু উত্তোলন করছেন না।

বাংলাদেশ কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএসএ) হিসাব অনুযায়ী, লালমনিরহাটের ৯টি হিমাগারে এবার সংরক্ষণ করা হয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার টন আলু। এর বাইরেও জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা পার্শ্ববর্তী রংপুর ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হিমাগারে আলু রেখেছেন। প্রতি কেজিতে গড়ে ১৩-১৫ টাকা লোকসান ধরলে শুধু লালমনিরহাট জেলার হিমাগারেই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

হিমাগার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আলু প্রকারভেদে গড়ে প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে ১১ হাজার ৩০০ টাকায়। ওই হিসাবে লালমনিরহাট জেলায় হিমাগারগুলোতে অবিক্রীত অবস্থায় থাকা আলুর বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ২২৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অথচ আর মাত্র দুই মাস পরেই শুরু হবে নতুন আলু রোপণের মৌসুম। তখন হিমাগারে থাকা বিপুল পরিমাণ আলু অবিক্রীত থেকে গেলে তা নষ্ট হয়ে খাবার অনুপযোগী হয়ে পড়বে।

কৃষক ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, সরকার হিমাগার গেটে আলুর দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ১২-১৩ টাকায়। বাজারে দাম কম থাকায় হিমাগার থেকেও আলু উত্তোলন করা হচ্ছে না। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক বস্তা (৬০ কেজি) আলুর উৎপাদন খরচ ও ভাড়া মিলে দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার টাকা।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কৃষকরা আলুর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, সরকার শিগগিরই এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।’

লালমনিরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে জেলার ৭ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই লাখ চার হাজার টন। এর মধ্যে নয়টি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ৭৮ হাজার টন আলু। এবারের উৎপাদন বেশি হওয়ায় মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকরা আশানুরূপ দাম পাননি।

আদিতমারী উপজেলার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘লাভের আশায় হিমাগারে ১০০ বস্তা আলু রেখেছিলাম। দুই মাস পর বিক্রি করে হাতে এসেছে মাত্র ২৮ হাজার টাকা। অথচ মৌসুমে বিক্রি করলে পেতাম প্রায় ৬০ হাজার টাকা। এখন তুললে ২০ হাজার টাকার মতো লোকসান হবে।’

কালীগঞ্জের চাপারহাট বাজারের ব্যবসায়ী মাসুদুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আলুর দাম বাড়লে সরকারি সংস্থা নিয়ন্ত্রণে নামে। কিন্তু দাম পড়ে গেলে কেউ খোঁজ নেয় না। এতে কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়েই সর্বনাশে পড়েছে।’

আদিতমারী উপজেলার আবুল কাশেম হিমাগারের মালিক আব্দুল হাকিম জানান, ‘এবার কৃষকরা হিমাগার থেকে আলু তুলতে আসছেন না। গত বছর আগস্টের মধ্যে যেখানে ৫০-৬০ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছিল, এবার গেছে মাত্র ১০-১৫ হাজার বস্তা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সাইখুল আরেফিন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় দুই লাখ চার হাজার টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৭৮ হাজার টন হিমাগারে মজুত রয়েছে। আলুর ব্যাপক চাষ ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় বাজারে দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক কম।’ বিশ্লেষকরা মনে করছেন, উৎপাদন ও সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ ভোক্তারা সাশ্রয়ী দামে আলু কিনতে পারছেন। তবে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লোকসানের বোঝা বইতে গিয়ে মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছেন।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!