পৌর শহরে তিনতলা বাড়ি নির্মাণাধীন। পৈতৃক ভিটায় রয়েছে প্রাচীরঘেরা একতলা বাড়ি। প্রতি মাসে পাচ্ছেন পেনশন ও ভাতার টাকা। তারপরও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন যশোরের মণিরামপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার ধনী আলাউদ্দিন। ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পে ১৮ লাখ টাকার একটি বাড়িও পাচ্ছেন তিনি। উপজেলার ঝাঁপা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের তার পৈতৃক ভিটায় বাড়িটি নির্মাণ করা হবে। অঢেল ধন সম্পদ থাকার পরও তথ্য গোপন করে বাড়ি বাগিয়ে নেওয়ার তথ্য জানাজানির পর স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার ছিলেন। চাকরি থেকে অবসরের পর মণিরামপুরের প্রয়াত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা খান টিপু সুলতানের সঙ্গে ওঠাবসা করতেন। এমপির ঘনিষ্ঠজন হওয়ার সুবাদে ২০০৯ সালে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। সেই থেকে টানা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত তিনি কামান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। গত ৩০ আগস্ট উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নতুন করে সাত সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির সদস্য সচিবেরও দায়িত্ব পান আলাউদ্দিন।
সম্প্রতি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকার মণিরামপুরে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ৫ জনকে ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এরই মধ্যে তদন্তের মাধ্যমে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্য থেকে ৫ জনের নামের একটি তালিকা চূড়ান্ত করে বাড়ি নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ওই তালিকায় আলাউদ্দিনের নাম রয়েছে ৪ নম্বর সিরিয়ালে। চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী আলাউদ্দিনের নামে বরাদ্দ হওয়া বাড়িটি নির্মাণ করা হবে মণিরামপুরের ঝাঁপা ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের তার পৈতৃক ভিটায়।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, মণিরামপুর পৌরসভার সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশে নিজস্ব জমিতে আলাউদ্দিনের রয়েছে প্রাচীরঘেরা একটি একতলা বাড়ি। বর্তমানে তিনতলা বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া ঢাকার একটি অভিজাত এলাকায় রয়েছে ফ্ল্যাট বাসা। ঢাকার ওই বাসায় মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন ও তার স্ত্রী বসবাস করেন। মাঝেমধ্যে তিনি ঢাকা থেকে মণিরামপুরে এসে কাজকর্ম করেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে এক ছেলে জাহাজের মেরিন ইঞ্জিনিয়ার এবং মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করেন। তিনি প্রতি মাসে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ও চাকরির পেনশন পেয়ে থাকেন। অথচ তাকে অসচ্ছল দেখিয়ে বীর নিবাস প্রকল্পের আওতায় বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার চূড়ান্ত তালিকায় ৪ নম্বর সিরিয়ালে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঝাঁপা গ্রামের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত আবদুল কাদের বিশ্বাসের স্ত্রী লাইলি বেগম আক্ষেপ করে জানান, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ বাড়ি আলাউদ্দিন নিজের ধন-সম্পদের তথ্য গোপন করে নিজেই বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন সন্তানকে নিয়ে বসবাসের জন্য একটি বাড়ি বরাদ্দের ব্যবস্থা করার জন্য বহুবার তার কাছে গিয়েছি। কিন্তু তিনি কিছুই করেননি।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দিন জানান, ‘ঢাকা ও মণিরামপুর পৌর শহরে আমার যে বাড়ি আছে তার মালিক আমার ছেলে। পৈতৃক ভিটায় কোনো বাড়ি নেই। গরিব মানুষ হিসেবে ‘বীর নিবাস’ প্রকল্পে বাড়ির জন্য আবেদন করেছিলাম। একটি বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছি। কোন সম্পদের তথ্য গোপন করিনি।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসাহাক আলী বলেন, ‘আলাউদ্দিনের নামে বীর নিবাসের ঘর বরাদ্দের ব্যাপারে আমরা বিরোধিতা করলেও তা ধোপে টেকেনি।’
উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, আলাউদ্দিন আবেদনে প্রকৃত অবস্থা গোপন করে গ্রামের ঠিকানা উল্লেখ করেছেন। সে মোতাবেক গ্রামে গিয়ে তার পৈতৃক ভিটায় কোনো বাড়ি পাওয়া যায়নি। ফলে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছিল।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকল্পের সভাপতি নিশাত তামান্না জানান, নিজেকে অসচ্ছল দাবি করে গ্রামের ঠিকানায় আবেদন করেছিলেন আলাউদ্দিন। তার সম্পদের বিষয়ে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন