বর্তমান গাজা সংকট আবারও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কেড়েছে। তবে এই সংঘাত নতুন নয়। ২০১০ সালের মে মাসে সংঘটিত মাভি মারমারা ট্রাজেডি ছিল একটি যুগান্তকারী মুহূর্ত, যা আজও ফিলিস্তিনি জনগণের মুক্তির লড়াই ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রশ্নে গুরুত্ব বহন করে।
ফ্লোটিলার যাত্রা ও উদ্দেশ্য
২০১০ সালের মে মাসে ‘গাজা ফ্রিডম ফ্লোটিলা’ নামে একটি বহুজাতিক ত্রাণ বহর গঠিত হয়। এটির লক্ষ্য ছিল অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা পৌঁছানো এবং ইসরায়েলের অবরোধকে আন্তর্জাতিকভাবে চ্যালেঞ্জ জানানো। বহরের কেন্দ্রবিন্দু ছিল মাভি মারমারা- একটি তুর্কি ত্রাণ জাহাজ, যাতে ৬০০-রও বেশি কর্মী, অধিকারকর্মী ও সাংবাদিক ছিলেন।
আক্রমণ ও হতাহতের ঘটনা
ওই বছরের ৩১ মে– ফ্লোটিলাটি যখন আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করেছিল, তখন ইসরায়েলি কমান্ডোরা হেলিকপ্টার ও নৌযান ব্যবহার করে অভিযান চালায়। ইসরায়েলি সৈন্যদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রায় ১০ জন কর্মী নিহত হন, যাদের মধ্যে ৯ জন ছিলেন তুরস্কের নাগরিক এবং একজন মার্কিন-তুর্কি দ্বৈত নাগরিক। আহত হন আরও বহু কর্মী।
প্রতিক্রিয়া ও সম্পর্ক
ঘটনার পর তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তুরস্ক তৎক্ষণাৎ ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করে।
জাতিসংঘসহ বহু আন্তর্জাতিক সংস্থা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করে। ২০১১ সালে জাতিসংঘের পামার রিপোর্ট ইসরায়েলের অভিযানকে ‘অতিরিক্ত ও অবৈধ বলপ্রয়োগ’ হিসেবে অভিহিত করে, যদিও তারা ইসরায়েলের অবরোধকে বৈধ বলেও মন্তব্য করেছিল, যা বিতর্কিত ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
ঘটনার পর ভুক্তভোগী পরিবারগুলো ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC)-এ মামলা দায়ের করে। যদিও আইসিসি প্রথমে মামলা প্রত্যাখ্যান করে, পরে এ বিষয়ে তদন্ত পুনরায় বিবেচনার আহ্বান জানানো হয়। তবে এখন পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃঢ় আইনি পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি।
ঘটে যাওয়া এসব ঘটনার অন্তত ছয় বছর পর ২০১৬ সালে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি চুক্তি হয়। ইসরায়েল নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ প্রদান করে এবং তুরস্ক আবার তেলআবিবে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দেয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব
এদিক গাজার অভিমুখে যাত্রা করা বিশাল নৌবহর ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’ ইতালির থামার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে। নৌবহরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা ‘সংকটজনক অঞ্চলে’ পৌঁছেছে এবং আশঙ্কা করছে ইসরায়েল যেকোনো সময় তাদের আটকাতে পারে। সময় যত যাচ্ছে, এই শঙ্কা ততই ঘনীভূত হচ্ছে। বিশ্বের চোখ এখন সুমুদ ফ্লোটিলার দিকে।
উল্লেখ, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলা নতুন করে শুরু হলে সেখানে চরম মানবিক সংকট দেখা দেয়। এই প্রেক্ষাপটে প্রায় ৫০টি নৌযান ও ৫০০ জন কর্মী নিয়ে গঠিত আন্তর্জাতিক সংগঠন এ সপ্তাহে ‘গ্লোবাল সামুদ ফ্লোটিলা’ গাজার উদ্দেশে মানবিক ত্রাণ নিয়ে যাত্রা করে। এই বহরে বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্য, মানবাধিকার আইনজীবী এবং ত্রাণকর্মীরা অংশ নেন। তবে ফ্লোটিলাটি যখন আন্তর্জাতিক জলসীমায় অবস্থান করছিল, তখন ইসরায়েলি বাহিনী জাহাজগুলোকে আটক করে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন