সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে ফিডিং কর্মসূচির আওতায় দেশের ১৬৫টি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৩১ লাখ কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘মিড ডে মিল’ চালু করা হয়। এর মধ্যে শেরপুরের নকলা ও নালিতাবাড়ী উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) এ দুই উপজেলার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিনামূল্যে শিক্ষার্থীর মাঝে ‘মিড ডে মিল’ বিতরণ কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। হতাশার বিষয় হলো, উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনেই (মঙ্গলবার) কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ‘মিড ডে মিল’ পায়নি। ফলে ফিডিং কর্মসূচির শুরুতেই যেন হ-য-ব-র-ল অবস্থা দেখা দিয়েছে।
বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সাথে কথা হলে তারা বলেন, ‘আমরা তো জানি, আমাদের সন্তানকে টিফিনের সময় সরকারিভাবে খাবার সরবরাহ করা হবে; তাই তাদের টিফিনের জন্য কোনো খাবার বা খাবার কেনার টাকা দিইনি। ফলে কোমলমতি শিশুরা টিফিনের সময় অভ্যাসগত খাবার না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। তা ছাড়া দীর্ঘ পাঠ গ্রহণের মাঝে টিফিনের (খাবার) অভাবে কিছুটা হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা।’ তারা আরও বলেন, ‘সব পণ্য হাতে বুঝে না পেয়ে, তড়িঘড়ি করে এই কার্যক্রম চালু করা ঠিক হয়নি।’
নকলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ ফখরুল আলম জানান, উদ্বোধনের দিন তার বিদ্যালয়ের ৫৬৮ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে উপস্থিত ৪৭২ জনের মাঝে শুধুমাত্র ইউএইচটি দুধের প্যাকেট বিতরণ কার হয়েছে। অন্যকোনো খাবার বিদ্যালয়ে পৌঁছানো হয়নি, তাই বিতরণ করাও সম্ভব হয়নি। তবে উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনেই কোনো খাবার না পেয়ে শিক্ষার্থীরা কিছুটা হতাশ হয়েছে। কেউ কেউ খাবার না আনায় টিফিন পিরিয়ডে অনাহারে থেকেছে বলেও তিনি জানান। তবে মঙ্গলবার টিফিনের সময় তার নিজস্ব অর্থায়নে শিশু শিক্ষার্থীর জন্য হালকা খাবারের ব্যবস্থা করেছিলেন বলে বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দেওয়া তথ্য মতে জানা গেছে।
বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনতে সচেতন অনেকে সর্ববৃহৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (ফেসবুক) নিজস্ব টাইমলাইনে ‘ফিডিং কর্মসূচির শুরুতেই হ-য-ব-র-ল!’; ‘শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে কেন এই তামাশা?’; ‘মিড ডে মিল’ চালুর দ্বিতীয় দিনেই হতাশ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা!’; ‘মিড ডে মিলের অপর নাম কি হতাশা?’; ‘মিড ডে মিলের শুরুতেই হযবরল!’- ইত্যাদি শিরোনামে লেখা পোস্ট করেছেন। ফলে স্বাভাবিক কারণেই এই কর্মসূচি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে।
এ বিষয়ে স্থানীয় শিক্ষানুরাগীরা বিভিন্ন তথ্যের বরাত দিয়ে জানান, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানের দিন (সপ্তাহে ৫ দিন) উপস্থিত শিক্ষার্থীদের পুষ্টিকর খাবার হিসেবে একটি করে বনরুটি, ইউএইচটি দুধ, সপ্তাহে ২ দিন সেদ্ধ ডিম, দেশীয় মৌসুমি ফল বা কলা ও ফরটিফাইড বিস্কুট সরবরাহ করার কথা। অথচ ‘মিড ডে মিল’ বিতরণকার্যক্রম উদ্বোধনের দ্বিতীয় দিনেই কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা টিফিনের সময় অনাহারে থেকেছে। এমনটা কারো কাম্য নয়। প্রয়োজনে কয়েকদিন পিছিয়ে ‘মিড ডে মিল’ কার্যক্রম উদ্বোধন করলে, কি এমন দোষ হতো?’ তরুণ সাংবাদিক আমানুল্লাহ আসিফসহ অনেকে তাদের পোস্টের লেখার শেষাংশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। আর তাদের সাথে মন্তব্য/কমান্টের মাধ্যমে ঐকমত্য পোষণ করছেন শিক্ষানুরাগী মহল।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন