বৃহস্পতিবার, ০২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আজিজুর রহমান, চৌগাছা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৪:১৬ এএম

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

আজিজুর রহমান, চৌগাছা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২, ২০২৫, ০৪:১৬ এএম

অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়

যশোরের চৌগাছায় জাতীয়করণ হওয়া সরকারি অনার্স কলেজের অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় নেতারা একাধিকবার আপস-মীমাংসাও করেছেন। তবুও থামছে না তার দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা।

অভিযোগ উঠেছে, কলেজের অধ্যক্ষের অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে অবনতি হয়েছে। ফলে উপজেলার ঐতিহ্যবাহী এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। 

জানা যায়, স্থানীয় এক জামায়াত নেতার তদবিরে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কলেজে যোগ দেন অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান। যোগ দিয়েই অধ্যক্ষ কলেজের সিনিয়র শিক্ষকদের মতামতের তোয়াক্কা না করেই ক্লিন ক্যাম্পাস নির্মাণের নামে শতাধিক বনজ, ফলদ এবং ওষুধি গাছ কেটে নেন। রাতারাতি গাছ কাটার অস্তিত্ব মুছে ফেলার জন্য কলেজ মাঠের উত্তর দিকে একসারি মেহগনি গাছের গোড়া নির্মূল করতে না পেরে আবর্জনা দিয়ে ঢেকে রাখেন।

কলেজের একটি সূত্র জানায়, গাছ কাটার কিছু দিন পরেই গ্রিন ক্যাম্পাস নির্মাণের নামে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেন অধ্যক্ষ। কর্মসূচিতে পরিচ্ছন্ন কাজের শ্রমিক বিল দেখিয়ে লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। আবার চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কলেজের সাধারণ তহবিলে জমা ছিল ১১ লাখ ১০ হাজার ৭৭ টাকা। তবে জুন মাসে তহবিলে জমার পরিমাণ কমে দাড়ায় ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪৩০ টাকা। ৬ মাসেই বিভিন্ন কর্মসূচির নামে ৮ লাখ টাকা তছরুপ করেন অধ্যক্ষ।

অন্য সূত্র জানায়, কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রফিকুজ্জামানের অবসর ভাতা উত্তোলনের কাগজপত্র স্বাক্ষর করতে গড়িমসির পর ১০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ফাইল স্বাক্ষর করেন। কলেজের পিআরএলে থাকা অবস্থায় মৃত তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী জিন্নাহ দফাদারের স্ত্রী ও কন্যার কাছ থেকে অবসরভাতা স্থায়ীকরণের জন্য ১৫ হাজার টাকা উৎকোচ নেন। এ ছাড়া কলেজ অনার্সের ১১ জন শিক্ষকের ২০১৮ সাল থেকে এরিয়া বেতন-ভাতায় স্বাক্ষরের জন্য ২ লাখ টাকা উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষ রেজাউরের বিরুদ্ধে।

সম্প্রতি এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকেও ব্যবহারিক পরীক্ষার নামে উৎকোচ আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেন বেশ কয়েকজন অভিভাবক।

সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কলেজের বিজ্ঞানাগারের জন্য ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা বরাদ্দ পায়। উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসেরে তথ্য অনুযায়ী বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা ২ কিস্তিতে উত্তোলন করা হয়। কাগজে-কলমে দেখানো হয় কেনা করা হয়েছে বিজ্ঞানাগারের যন্ত্রপাতি। কিন্তু বাস্তবে কোনো যন্ত্রপাতি কেনা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। এ ছাড়া পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সামগ্রী, কলেজ লাইব্রেরির বই, আসবাবপত্র, কম্পিউটার সামগ্রী ক্রয় বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

শিক্ষকরা বলছেন, সরকারি বরাদ্দের টাকা ব্যয় করতে হলে একটি স্বচ্ছ ও স্বাধীন ক্রয় কমিটির মাধ্যমে ক্রয় করার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অধ্যক্ষ কারো মতামত না নিয়েই নিজে পকেট কমিটি করে সব টাকা পকেটস্থ করেছেন। এমনকি ক্রয় কমিটির সদস্যরা ক্রয়ের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন।

কলেজের চৌগাছা সোনালী ব্যাংকে ‘প্রিন্সিপাল চৌগাছা সরকারি কলেজ’ হিসাব থেকে ১ লাখ, ৭৫ হাজার, ৬০ হাজারসহ বিভিন্ন অঙ্কের টাকা চেকের মাধ্যমে ক্যাশ উত্তোলন করে হজম করেছেন। এমনকি সর্বশেষ গত ১৮ জুন ৬০ হাজার, ২২ জুন ৭৫ হাজার এবং ২৬ জুন ১ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নিয়ে মোটরসাইকেল কিনেছেন। যেটি দিয়ে তিনি চলাচল করেন।

বিজ্ঞানসামগ্রী ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মারুফুল ইসলাম বলেন, ‘বিজ্ঞানসামগ্রী কেনার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। স্যার আমাকে স্বাক্ষর করতে বলেছে আমি স্বাক্ষর করেছি। বোঝেন তো স্বাক্ষর না করলে আমার আর এক বছর চাকরি আছে...।’

বিজ্ঞান বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক ও ল্যাবের দায়িত্বে থাকা গোলাম হোসেন বলেন, ‘এত টাকার কেনা কোনো সামগ্রী পাইনি। চার মাস আগে সামান্য কিছু সামগ্রী অধ্যক্ষ স্যার দিয়েছেন। সেটা তিনি জোর করে কার্টন খুলিয়েছিলেন। আর কয়েক দিন আগে সামান্য কিছু সামগ্রী স্যার দিয়েছেন। তবে শেষেরগুলো কার্টন ভরাই আছে। সেখানেও আমাদের চাহিদানুযায়ী সামগ্রী পাইনি।’

গত ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর উন্মুক্ত এইচএসসি পরীক্ষায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থীকে অসদুপায় অবলম্বনের সুযোগ দিয়ে ইংরেজির জন্য শিক্ষার্থী প্রতি ৪০০ টাকা, অন্য বিষয়ে ২০০-২৫০ টাকা করে প্রায় ৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে সিংহভাগ টাকায় পকেটস্থ করেছেন অধ্যক্ষ। পরীক্ষা কমিটির শিক্ষকরা এ টাকা তুলতে অস্বীকার করে কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে চাইলে তিনি তাদের চাপ দিয়ে কমিটিতে থাকতে বাধ্য করেন।

এসব অনিয়ম নিয়ে শিক্ষকরা কথা বললেই তিনি বিভিন্ন সময়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরোয়ার তার কাছের লোক। অধ্যক্ষের ভাই ডিজিএফআইএর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কোটচাঁদপুরের শিমুল খানের আত্মীয় এসব পরিচয় দিয়ে শিক্ষকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

অনিয়মের জানতে চাইলে সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ অনুমান ভিত্তিক। আমি একজন বিসিএস কর্মকর্তা। আমার বিরুদ্ধে পত্রিকায় লিখে কোনো লাভ হবে না- বলে ফোন রেখে দেন।’

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!